রাজধানীতে প্রায় চার বছর ধরে মেয়ে মেজে শতাধিক চুরি করেছে দুই যুবক মনির ও রফিক। পাশাপাশি হিজড়া সেজে ছিনতাই ও চাঁদাবাজিও করতো।
রাজধানীর মিরপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় অভিনব কায়দায় চুরি ও ছিনতাই চক্রের ২ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেপ্তাররা ছেলে হলেও নারী বেশে চুরি আর হিজড়া সেজে চাঁদাবাজি-ছিনতাই করে আসছিল। তারা হলো মনির (প্রকাশ মণি) (২৭) ও রফিক (প্রকাশ অপরূপা ও রূপা) (২৮)।
বৃহস্পতিবার (৩১ আগস্ট) রাজধানীর শেরেবাংলা নগর থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। এ সময় তাদের কাছ থেকে স্বর্ণ ও নগদ টাকা উদ্ধার করা হয়।
মিরপুর মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, মিরপুরের একটি চুরির তদন্তে বেরিয়ে আসে এই চক্রের নাম। তারা নারী সেজে চুরি, হিজড়া সেজে ছিনতাই ও চাঁদাবাজি করতো।
যেভাবে গ্রেপ্তার
গত ২৭ আগস্ট মিরপুর মডেল থানার ৬০ ফিট এলাকার ট্যুর অ্যান্ড ট্রাভেলসে দুর্ধর্ষ এক চুরির ঘটনা ঘটায় চক্রটি। আড়াই লাখ টাকা ও দুইটি মোবাইল ফোন চুরি করে নিয়ে যায় তারা। সিসিটিভি ফুটেজ পর্যালোচনা করে দেখা যায় চুরি করেছে এক নারী। পরে তদন্ত করে অভিযান চালিয়ে যখন গ্রেপ্তার করা হয়, তখন দেখা যায় চোর নারী নয়, ছেলে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর চোখ ফাঁকি দিতেই মেয়ে সেজে চুরি করে তারা। ঘরে মেয়ে সেজে চুরি করলেও রাস্তায় আবার সাজে হিজড়া। হিজড়া সেজে বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজি ও সুযোগ বুঝে ছিনতাই করে।
মাথায় ঘোমটা, হাতে ছাতা
সাধারণত শুক্র ও শনিবার ছুটির দিন হলেও রফিক ও মনিরের কাছে এই দুই দিনই কাজের দিন! কারণ, এ সময় অফিস বন্ধ থাকে। তারা যে অফিসেই যায়, সেখানে মাথায় ঘোমটা দিয়ে ঢুকে। আবার রুমে ঢুকলে মাথায় ছাতাও ধরে! কারণ, এসব জায়গায় সিসি ক্যামেরা থাকে। ক্যামেরায় মুখ না দেখাতেই এই ঘোমটা ও ছাতার ব্যবহার। তারা যেখানেই চুরি করে সেখানেই সিসি ক্যামেরা ভেঙে দিয়ে আসে।
ঘরে রফিক, বাইরে রূপা
তার আসল নাম রফিক। কিন্তু বাইরে পরিচয় দেয় রূপা নামে। একইভাবে আরেকজনের নাম মনির। কিন্তু বাইরে পরিচিত দেয় মণি। তারা ছেলে হলেও বাইরে তারা কখনও হিজড়া, কখনও মেয়ে বলে পরিচয় দিতো।
পুলিশ জানায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বৃহস্পতিবার শেরেবাংলা নগর থানা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। উদ্ধার করা হয় নগদ ১ লাখ ৬৮ হাজার টাকা, দুটি মোবাইল ও ১ ভরি ৫ আনা স্বর্ণ। দুজনের বিরুদ্ধেই দুটি করে মামলা রয়েছে।
পুলিশ কর্মকর্তা মহসীন বলেন, ঘরে মেয়ে সেজে চুরি করলেও রাস্তায় আবার তারা সাজেন হিজড়া! হিজড়া সেজে তারা বিভিন্ন মানুষের কাছ থেকে চাঁদাবাজি করেন। প্রায় চার বছর ধরে এভাবে তারা শতাধিক চুরি করেছে। কিন্তু মেয়ে সেজে থাকার কারণে এতোদিন তাদের শনাক্ত করা যায়নি।