জাতির পিতার বজ্রকণ্ঠের ভাষণ উদ্দীপ্ত করেছিল, অনুপ্রাণিত করেছিল, লাখো জনতাকে। স্বাধীন মাতৃভূমি প্রতিষ্ঠায় সেদিন জাতি পেয়েছিল পিতা। পিতা দিয়েছিলেন সংগ্রামের অনুপ্রেরণা। নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে এখন সংগ্রামের সেই অনুপ্রেরণা ছড়িয়ে দেওয়ার সময়। যেন সেদিনের রেসকোর্স ময়দানের লাখো জনতার উদ্দীপনা ছড়িয়ে যায় নতুন প্রজন্মের হৃদয়ে। নতুন এক বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়ে।—আমন্ত্রণপত্রে এমনি ভাবে তুলে ধরা হলো ‘পিতা’ তৈরির উদ্দেশ্য।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণের মূল ভিডিওটি এবার ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তিতে তৈরি হয়েছে। এই ত্রিমাত্রিক ভিডিওচিত্রের নাম ‘পিতা’।
ত্রিমাত্রিক ভিডিওচিত্র ‘পিতা’ তৈরিতে মুখ্য ভূমিকা রেখেছেন কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি। আজ শনিবার তিনি বলেন, ‘আজকের প্রজন্ম ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তিতে ব্যাটম্যানকে দেখে আনন্দ পায়। ১৯৭১ সালের ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সেই ভাষণের সাদামাটা ভিডিও তাদের কাছে আদৌ পৌঁছুতে পেরেছে? সম্ভব না। আজকের ছেলেমেয়ের কাছে তাদের মতো করে বঙ্গবন্ধুকে আর বঙ্গবন্ধুর ভাষণকে নিয়ে যেতে হবে। এখানে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির কোনো বিকল্প নেই। আর সেটা শতভাগ সম্ভব হলে নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা বঙ্গবন্ধুকে নতুন করে চিনতে ও জানতে পারবে।’
কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি সম্পূর্ণ নিজস্ব অর্থায়নে ত্রিমাত্রিক ভিডিওচিত্র ‘পিতা’ তৈরি করেছেন। এ কাজে তার সময় লেগেছে পাঁচ মাস। বাপ্পি বলেন, ‘আমি ৭ মার্চে বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ভাষণকে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তিতে রূপান্তরের উদ্যোগ নিয়েছি ১৭ মাস আগে। শুরুতে এ কাজে আমার কয়েকজন বন্ধুর কাছ থেকে পরামর্শ পেয়েছি। এরপর আমি হলিউডের “অ্যাভাটার” ছবিকে যারা ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তিতে রূপান্তর করেছেন, তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। এমনকি বলিউডের “মুঘল–এ–আজম” ছবির যারা রঙ্গীন সংস্করণ করেছেন, তাদের সঙ্গেও আলোচনা করেছি। তবে আমরা বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ মার্চের ভাষণ রঙ্গীন আর ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তিতে রূপান্তরের কাজ করেছি ভারতের মুম্বাইয়ে।’
কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পির এই উদ্যোগের সঙ্গে আছে চ্যানেল আই ও বিজ্ঞাপনী সংস্থা মাত্রা। বাপ্পি বলেন, ‘যখন আমি হতাশ হয়ে পড়েছি, তখন চ্যানেল আইয়ের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ফরিদুর রেজা সাগর আর মাত্রার আফজাল হোসেনকে পাশে পেয়েছি। আমার এই কাজের শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত তারা দুজন নানা ভাবে আমাকে সহযোগিতা করেছেন, আমার পাশে থেকেছেন, এখনো আছেন। আগামীতে তাদেরকে সঙ্গে নিয়েই আমি কাজ করব।’
আগামীকাল সোমবার বেলা তিনটায় রাজধানীর স্টার সিনেপ্লেক্সে ত্রিমাত্রিক ভিডিওচিত্র ‘পিতা’র উদ্বোধনী প্রদর্শনী হবে। আর অনুষ্ঠানটি শুধুমাত্র আমন্ত্রিতদের জন্য।
দেশের চার কোটি ছাত্রছাত্রীর কাছে ত্রিমাত্রিক ভিডিওচিত্র ‘পিতা’ নিয়ে যেতে চান কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পি। বললেন, ‘সরকারের কাছ থেকে সহযোগিতা পেলে আমরা বাসে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তির হল তৈরি করব। এই বাসগুলো দেশের বিভিন্ন জেলার স্কুলগুলোতে যাবে, সেখানে ছাত্রছাত্রীদের এই ত্রিমাত্রিক ভিডিওচিত্র দেখানো হবে।’
অভিনেতা ও ‘মাত্রা’র আফজাল হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তি–সমৃদ্ধ প্রেক্ষাগৃহ তেমন নেই ঠিকই, কিন্তু যখন এমন একটি বিষয় সামনে চলে এসেছে, তখন নিশ্চয়ই আমাদেরকে উদ্যোগ নিতে হবে। আর আজকের ছেলেমেয়েরা আধুনিক প্রযুক্তির ব্যাপারে খুবই সচেতন। তারা সব জানে, দেখছে। সেই দিকটাকে মাথায় রেখে নতুন নতুন প্রযুক্তি আমাদের দ্রুত যুক্ত করতে হবে। আর গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো আধুনিক ত্রিমাত্রিক প্রযুক্তিতে রূপান্তর করে তাদের সামনে তুলে ধরতে হবে। আর তাহলেই নতুন নতুন ছেলেমেয়েরা এই বিষয়গুলোর ব্যাপারে আগ্রহী হবে।’
১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় কাজী জসিমুল ইসলাম বাপ্পির বয়স ছিল আড়াই বছর। তার বড় দুই ভাই মুক্তিযুদ্ধে অংশ নিয়েছেন। পরে ভাইদের কাছ থেকে যুদ্ধের নানা গল্প শুনে শুনে রোমাঞ্চিত হন তিনি। সবশেষে বাপ্পি বলেন, ‘নতুনরাও যেন তেমনি ভাবে রোমাঞ্চিত হয়, সেভাবেই আমি কাজটি করেছি। কিছু পাওয়ার আশা করে নয়, নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা তৈরি করার জন্যই আমি এমনি আরও কাজ করব।’