বিএসটিআইর পরীক্ষায় প্রমাণিত ৫২টি ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বাজার থেকে অবিলম্বে সরিয়ে নিতে নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট। আজ হাইকোর্ট এক আদেশে এসব খাদ্যপণ্য উৎপাদনকারীদের বিরুদ্ধে আইন অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছেন। সেই সাথে মান উন্নীত না হওয়া পর্যন্ত এসব খাদ্যপণ্যের উৎপাদন ও বিক্রয় বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন।
আদালতের এই আদেশ বাস্তবায়ন করে আগামী ১০ দিনের মধ্যে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর ও বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে হাইকোর্টে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদালত এবিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৩ মে দিন ধার্য করেছেন।
রোববার বিচারপতি শেখ হাসান আরিফ ও বিচারপতি রাজিক আল জলিলের বেঞ্চ এই নির্দেশ দেয়।
যে ৫২টি পণ্যকে নিম্নমানের ও ভেজাল বলে বিএসটিআই উল্লেখ করেছে সেগুলো হলো: গ্রীণ ব্লিচিং এর সরিষার তেল, শমনমের সরিষার তেল, বাংলাদেশ এডিবল ওয়েলের সরিষার তেল, সিটি ওয়েলের সরিষার তেল, কাশেম ফুডের চিপস, আরা ফুডের ড্রিংকিং ওয়াটার, আল সাফির ড্রিংকিং ওয়াটার, মিজান ড্রিংকিং ওয়াটার, মর্ণ ডিউয়ের ড্রিংকিং ওয়াটার, ডানকান ন্যাচারাল মিনারেল ওয়াটার, আরার ডিউ ড্রিংকিং ওয়াটার, দিঘী ড্রিংকিং ওয়াটার, প্রাণের লাচ্ছা সেমাই, ডুডলি নুডলস, শান্ত ফুডের সফট ড্রিংক পাউডার, জাহাঙ্গীর ফুড সফট ড্রিংক পাউডার, ড্যানিশের হলুদের গুড়া, প্রাণের হলুদ গুড়া, ফ্রেশের হলুদ গুড়া, এসিআইর ধনিয়ার গুড়া, প্রাণের কারি পাউডার, ড্যানিশের কারী পাউডার, বনলতার ঘি, পিওর হাটহাজারী মরিচ গুড়া, মিষ্টিমেলা লাচ্ছা সেমাই, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মিঠাইয়ের লাচ্ছা সেমাই, ওয়েল ফুডের লাচ্ছা সেমাই, এসিআইয়ের আয়োডিন যুক্ত লবণ, মোল্লা সল্টের আয়োডিন যুক্ত লবণ, কিংয়ের ময়দা, রুপসার দই, মক্কার চানাচুর, মেহেদীর বিস্কুট, বাঘাবাড়ীর স্পেশাল ঘি, নিশিতা ফুডস এর সুজি, মধুবনের লাচ্ছা সেমাই, মঞ্জিলের হলুদ গুড়া, মধুমতির আয়োডিন যুক্ত লবণ, সান ফুডের হলুদ গুড়া, গ্রীন লেনের মধু, কিরনের লাচ্ছা সেমাই, ডলফিনের মরিচের গুড়া, ডলফিনের হলুদের গুড়া, সূর্যের মরিচের গুড়া, জেদ্দার লাচ্ছা সেমাই, অমৃতের লাচ্ছা সেমাই, দাদা সুপারের আয়োডিন যুক্ত লবণ, মদীনার আয়োডিন যু্ক্ত লবণ, নুরের আয়োডিন যুক্ত লবণ।
আজ আদালতে রিটের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী ব্যারিস্টার শিহাব উদ্দিন খান। রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মোখলেসুর রহমান। আর বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের পক্ষে ছিলেন আইনজীবী মো. ফরিদুল ইসলাম।
এর আগে গত ৯ মে হাইকোর্টে এই ৫২ খাদ্যপণ্যের বিষয়টি নিয়ে রিট করে কনসাস কনজ্যুমার সোসাইটি। এরপর রিটটি আদালতে উপস্থাপনের পর ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বাজারে থাকায় উষ্মা প্রকাশ করে হাইকোর্ট বলেন: একের পর এক ভেজালের বিষয় হাইকোর্টে আসছে। আমরা মানুষের অন্য মামলা করব না এগুলা দেখব? এগুলো তো সরকারের কাজ। কোর্টের কাজ নয়। সরকার কী করছে? আবার আমরা এসব বিষয়ে আদেশ দিলে তো আমাদের সমালোচনা করা হয়। কিন্তু বিষয়গুলো এত গুরুত্বপূর্ণ যে এগুলো আমাদের কোর্টে আসলে আমরা তো ফেলে দিতে পারি না।
ওইদিন আদালত বলেন: এই যে দেখছি হলুদের গুড়ায় ভেজাল, ব্র্যান্ডের তেলে ভেজাল, সেমাইতে ভেজাল। আইনে তো এ বিষয়ে সর্বোচ্চ শাস্তির বিধান রয়েছে। আমরা এখন কী করব বুঝতে পারছি না। আমরা কোথায় যাচ্ছি?
ওইদিন আদালত আরো বলেন: রোজা আসলেই কেন ভেজালের বিষয়টি খোঁজা হয়? রোজার সাথে ভেজালের কী সম্পর্ক? কারণ খাবার তো সারা বছরই আমাদের খেতে হয়।
এরপর আদালত ভেজাল বা নিম্নমানের খাদ্যপণ্য বাজারে থাকার বিষয়ে ব্যাখ্যা দিতে নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ ও বিএসটিআই’র ডেপুটি ডিরেক্টর পর্যায়ের দুইজন কর্মকর্তাকে ১২ মে হাইকোর্ট হাজির হতে বলেন। সে আদেশ অনুযায়ী আজ (১২ মে) কর্মকর্তারা হাইকোর্টে হাজির হন। এবং বিএসটিআইর ডেপুটি ডাইরেক্টর মো: রিয়াজুল হক আদালতে বক্তব্য তুলে ধরেন।
এ রিটে খাদ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সচিব,শিল্প মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলাদেশ স্ট্যান্ডার্স অ্যান্ড টেস্টিং ইনস্টিটিউশন (বিএসটিআই)-এর মহাপরিচালক (ডিজি), বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান ও জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের মহাপরিচালককে বিবাদী করা হয়।