‘প্রথমে টিভিতে দেখলাম আমি আর আব্বু। আব্বু বলে উঠলেন আবার ৩০ বছর দেখতেছি ‘ময়নামতি’। সিনেমা হলে ৪ বার দেখেছিলাম। এমন সিনেমা আরো চাই। রিল উদ্ধার করে এমন এইচডি প্রিন্ট সিনেমা আরো বানিয়ে আনাবেন।’- চ্যানেল আইয়ের ইউটিউবে আলোচিত ‘ময়নামতি’ ছবিটি রিলিজের পর এভাবেই ছবিটি নিয়ে দুই প্রজন্মের অনুভূতি ফুটে ওঠে সাখাওয়াত হোসেন সবুজ নামের এক দর্শকের মন্তব্যে।
মুক্তির পঞ্চাশ বছর পর রাজ্জাক-কবরী জুটি অভিনীত আলোচিত ‘ময়নামতি’ ছবিটির ওয়ার্ল্ড টিভি প্রিমিয়ার করেছে চ্যানেল আই। তার আগে নির্মাতা কাজী জহিরের পরিবারের সহায়তায় ছবির প্রিন্ট উদ্ধার করে ভারত থেকে ডিজিটাল করে আনে চ্যানেল আই। ছবিটি প্রচারের পর ব্যাপক সাড়া পড়ে। এমন উদ্যোগের প্রশংসা করেন অনেকে।
আর সেটা আঁচ করা গেল ইউটিউবে ‘ময়নামতি’ রিলিজের পর। তুলনামূলক ভিউ কম হলেও ছবিটি নিয়ে আবেগাপ্লুত হতে দেখা গেছে অনেক দর্শককে। বিশেষ করে মাঝ বয়সী দর্শক ছবিটি দেখে স্মৃতিকাতর হয়ে পড়েন।
মোহাম্মদ এরশাদ আলী নামের একজন দর্শক ‘ময়নামতি’র ডিজিটাল ফরম্যাটে দেখার পর নিজের অনুভূতি জানিয়ে লিখেন, আমি বিস্মিত! অভিভুত! আবেগ আপ্লুত! এই বয়সে এসে কোনদিন কল্পনাতেও আসেনি যে ‘ময়নামতি’র মতো কালজয়ী প্রেমের ছবি আবার দেখতে পাবো। কি বলে ধন্যবাদ জানাবো চ্যানেল আইয়ের শাইখ সিরাজ আর সাগর ভাইকে! অশেষ ভালোবাসা আর কৃতজ্ঞতা তাঁদের প্রতি। উত্তর বঙ্গের ঐতিহ্যবাহী সিনেমা হল রাজশাহী’র ‘বর্ণালী’ হলে ১৯৬৯ সালে চারবার দেখেছিলাম এই ছবিটা। রাজ্জাক কবরী’র প্রেমের আবগঘন দৃশ্যগুলো দেখতে দেখতে অঝোরে কেঁদেছি কতোবার। শুধু আমি না, হলের অধিকাংশ দর্শক বিশেষ করে মহিলাদের চাপা কান্নায় হলের পরিবেশ ভারী হয়ে উঠতো। আবার কমেডি দৃশ্য দেখে সারা হলে তুমুল হাসির রোল পড়ে যেতো। এবারের ঈদে চ্যানেল আইয়ের সেরা উপহার সেই স্বর্ণালী সাদা কালো যুগের রাজ্জাক কবরী অভিনীত অনন্য প্রেমের ছবি ‘ময়নামতি’। প্রায় পঞ্চাশ বছর আগে ফিরে গিয়েছিলাম!
মাহমুদ আলম নামের আরেকজন চ্যানেল আইয়ে ‘ময়নামতি’ দেখ আরো স্মৃতিকাতর। তিনি লিখেন, অবশেষে খুঁজে পেলাম বহুল কাঙিক্ষত আমার দেখা সেরা বাংলা ছবিগুলোর অন্যতম ‘ময়নামতি’ সিনেমাটি। এসএসসি পরীক্ষা শেষ হওয়ার পরদিন আমরা বন্ধুরা মিলে সিনেমাটি দেখেছিলাম। অনেক বন্ধুরা আজ হারিয়ে গেছে, কিন্তু সিনেমা দেখার স্মৃতিময় দিনটি আজও কত অমলিন! আজ পর্যন্ত কতোবার যে ভিসিডি, ডিভিডি ও ইউটিউবে ‘ময়নামতি’ সিনেমাটি খুঁজেছি তার হিসেব নেই। আমি ভেবেছিলাম অসাধারণ এই সিনেমাটি অন্য অনেক কালজয়ী সিনেমার মতো কালের আবর্তে হারিয়ে গেছে। চিরসবুজ জুটি কবরী-রাজ্জাক অভিনীত প্রখ্যাত চিত্রপরিচালক কাজী জহির পরিচালিত এবং সব্যসাচী লেখক সৈয়দ শামসুল হকের অনবদ্য কাহিনী, চিত্রনাট্য ও সংলাপ সমৃদ্ধ কালজয়ী ছবি ‘ময়নামতি’ মুক্তির ৫০ বছর পর চ্যানেল আই এর যুগান্তকারী পদক্ষেপে আবারো দেখার সৌভাগ্য হলো সবার। চ্যানেল আইকে কি বলে যে ধন্যবাদ দিব!
‘ময়নামতি’র এমন ঝকঝকে প্রিন্ট দেখার পর অনেকে চ্যানেল আইয়ের কাছে পুরনো ছবিগুলোকে এভাবে দেখানোর ব্যবস্থা করতে অনুরোধ জানান।
নায়করাজ রাজ্জাক ও কবরী অভিনীত সত্তরের দশকের আলোচিত ছবি ‘ময়নামতি’। বড় পর্দায় মুক্তির পর এই সিনেমাটি এতটাই দুষ্প্রাপ্র্য হয়ে উঠেছিল যে, এর প্রিন্ট তো দূরের কথা কোনো পোস্টার কিংবা ফটোসেটও কোথাও খুঁজে পাওয়া যায়নি। কাঁপা কাঁপা ঝিরঝিরে প্রিন্টের ২-১টি গানের অংশবিশেষ ইউটিউবে পাওয়া গেলেও তা দর্শকদের মন ভরাতে সক্ষম ছিলো না।
আলোচিত ‘ময়নামতি’ দেখে নিন এখানে: