জানুয়ারির মাঝামাঝি সময়ে অভিনেত্রী এলিনা শাম্মী অভিনীত রায়হান রাফীর পরিচালনায় ‘জানোয়ার’ ওয়েব ফিল্মটি মুক্তি পেয়েছিল। মুক্তির আড়াই মাস পার হলেও এ অভিনেত্রীর এখনও ঘোর কাটেনি বলে জানালেন।
ফেব্রুয়ারিতে অনন্য মামুনের ‘কসাই’ সিনেমায় কাজ করেছেন তিনি। শুক্রবার এলিনা শাম্মী অভিনীত নতুন চলচ্চিত্র ‘গন্তব্য’ মুক্তি পেল। ঢাকায় তিনটি ও ঢাকার বাইরে দুটি মিলিয়ে মোট পাঁচটি সিনেমা হলে ‘গন্তব্য’ প্রদর্শিত হচ্ছে। সে কারণে তার বেশ ছোটাছুটি চলছে।
সবকিছু মিলিয়ে বেশ সুসময় পার করছেন এলিনা শাম্মী। শুক্রবার বিকেলের শোতে সিনেমাটি দেখার জন্য নগরীর স্টার সিনেপ্লেক্সে ছিলেন এ অভিনেত্রী। সেখানে বসে চ্যানেল আই অনলাইনের সাথে আলাপ করেন ‘গন্তব্য’ নিয়ে।
এলিনা শাম্মী বলেন, সিনেমাটি একেবারে অন্ধকারে ডুবে যাচ্ছিল। সেন্সরের মেয়াদ শেষ হয়ে যাচ্ছিল। সেই হিসেবে সিনেমা হল পর্যন্ত যাচ্ছে এবং ভবিষ্যতে জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কারসহ বিভিন্ন ফেস্টিভ্যালে যাওয়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে- এই হিসেবে হলের সংখ্যা নাই বা গুনলাম!
‘গন্তব্য’ যে সিনেমা হল পর্যন্ত যেতে পেরেছে এটাই অনেক কিছু বলে মনে করেন এলিনা শাম্মী। তিনি জানান, সিনেমাটিতে তার অনেক পরিশ্রম ও ত্যাগ জড়িয়ে আছে। এলিনা শাম্মী বলেন, আমার চেয়ে সিনেমাটির সঙ্গে সংশ্লিষ্ঠরা ভালো বলতে পারবেন আমি কী করেছি! সবচেয়ে বড় ব্যাপার হচ্ছে, ৪২ লাখ টাকা দিয়েছি, ১ টাকাও ফেরত পাইনি। টাকা ফিরত পাবোও না। কারণ মালিকানা ছিল অন্যের কাছে। প্রতিটি শিল্পী এবং টেকনিক্যাল ক্রু জানে এই ৪২ লাখ টাকা আমি কীভাবে জোগাড় করেছি। এখান থেকে একটি টাকাও ফিরত পাবো না এটা কি বড় ত্যাগ নয়? ফাইনালি সিনেমাটি মুক্তি পেল তাই আমি অখুশি নই।
এলিনা শাম্মী বলেন, নির্মাণে খরচ হয়েছে ৫০ লাখ টাকার উপরে। ৪২ লাখ টাকা আমি নিজে দিয়েছি। কত কষ্ট করে এই টাকা আমি ম্যানেজ করেছি সেটা শুধু আমিই জানি। বাকি টাকা পরিচালক জোগাড় করেছে। সিনেমাটির স্টোরি লাইন, গল্প বলার ধরন, এডিটে নির্দেশনা, প্রত্যেক শিল্পীর শিডিউল, টেকনিক্যাল ক্রুদের সঙ্গে আমি আলাপ করেছি। আরও অনেক কিছু করেছি যা সবসময় বলা যায় না। শেষে আনোয়ার আজাদ ভাই সিনেমাটি কিনে নিয়েছেন। টাকা অলরেডি পেয়েছেন পরিচালক অরণ্য পলাশ। আনোয়ার আজাদ ভাইয়ের কাছে ভেরি গ্রেটফুল। কারণ উনি শেষ সময়ে হাল ধরেছেন। নইলে জীবনেও ‘গন্তব্য’ হলের মুখ দেখতো না। আমার কথা, সিনেমাটি মানুষের কাছে পৌঁছুক। হলের পর এনটিভিতে ওয়ার্ল্ড টিভি প্রিমিয়ার হবে।
‘গন্তব্য’ সিনেমাটি নিয়ে ২০১৯ সালের শেষ দিকে সোরগোল পড়ে যায়। গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হয়, সিনেমাটি নির্মাণ করতে গিয়ে পরিচালক নিঃস্ব হয়ে গেছেন। বাধ্য হয়ে হোটেল বয় হিসেবে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তখন তথ্য মন্ত্রণালয় থেকে আর্থিকভাবে সহায়তাও দেয়া হয়েছিল।
‘গন্তব্য’ সিনেমার প্রেক্ষাপট মুক্তিযুদ্ধ নয়, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ৭ মার্চের ভাষণ ও ভাষণের তাৎপর্যে নির্মিত হয়েছে। এটি এলিনা শাম্মী অভিনীত এটি চতুর্থ চলচ্চিত্র। এর আগে তিনি ‘৭১ এর মা জননী’, ‘স্বর্গ থেকে নরক’, ‘আমরা একটা সিনেমা বানাবো’সহ আরও সিনেমায় কাজ করেছেন। তিনি ছাড়াও এই চলচ্চিত্রে অভিনয় করেছেন ফেরদৌস, আইরিন, জয়ন্ত চট্টপাধ্যায়, মাসুম আজিজ, আমান রেজা, আফফান মিতুল প্রমুখ। এখানে নিজের চরিত্রটি যথেষ্ট গুরুত্ব আছে বলে জানালেন এলিনা শাম্মী।
তিনি বলেন, নায়ক নায়িকার হিসেব করি না। কিন্তু চরিত্রাভিনেতা হিসেবে এই ছবিতে আমার যথেষ্ট গুরুত্ব আছে। নারী চরিত্রগুলোর মধ্যে আমার চরিত্র প্রধানদের মধ্যে অন্যতম। সিনেমাটির অফিশিয়াল প্রযোজক আনোয়ার আজাদ এবং মুক্তির জন্য সার্বিক কো-অর্ডিনেট করছেন সৌর্যদীপ্ত। মুক্তির ক্ষেত্রে সিনেমাটির পরিচালক অরণ্য পলাশ যেখানে যেখানে তার প্রয়োজন সেখানে তিনি থাকছেন।