আগামী মাসের শেষ নাগাদ ৩ কোটি নাগরিককে ভ্যাকসিন দেয়ার পরিকল্পনা রয়েছে কানাডার। জুনের শেষে ভ্যাকসিনেশনের আওতায় আনা হবে আরও এক কোটি কানাডিয়ানকে। এরপর সেপ্টেম্বরের শেষ নাগাদ চাইলে যে কেউ ভ্যাকসিনটি নিতে পারবেন।
কানাডায় গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে ভ্যাকসিন প্রয়োগ শুরু হয়েছে। অগ্রাধিকার ভিত্তিতে ভ্যাকসিন পেয়েছেন সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মী, লং-টার্ম কেয়ার হোমের বাসিন্দা ও কর্মীরা। ইতিমধ্যে কানাডা সরকার নাগরিকদের আগামী সেপ্টেম্বরের মধ্যে সকলের ভ্যাকসিন প্রয়োগ সম্ভব হবে বলে আশ্বস্ত করেছেন।
আগামী দুই সপ্তাহের মধ্যেই অ্যাস্ট্রাজেনেকার ভ্যাকসিন অনুমোদন দিতে যাচ্ছে হেলথ কানাডা। এটি হবে তৃতীয় ভ্যাকসিন, এখন পর্যন্ত যা ব্যবহারের অনুমোদন দিয়েছে হেলথ কানাডা। পাশাপাশি চতুর্থ ভ্যাকসিন অনুমোদন দিতেও খুব বেশি সময় লাগবে না বলে হেলথ কানাডার কর্মকর্তারা ইঙ্গিত দিয়েছেন।
হেলথ কানাডার প্রধান জনসংযোগ কর্মকর্তা এরিক মরিসেটে বলেন, অ্যাস্ট্রাজেনেকার আবেদনটি ১ অক্টোবর থেকে পর্যালোচনা করে দেখছে এ-সংক্রান্ত কমিটি। অনুমোদনের আগে এখন তারা অ্যাস্ট্রাজেনেকার কাছ থেকে উৎপাদন প্রক্রিয়া-সংক্রান্ত চূড়ান্ত প্রতিবেদনের অপেক্ষায় আছে।
ভ্যাকসিন ব্যবহারের অনুমোদন চেয়ে কানাডায় প্রথম আবেদন করে অ্যাস্ট্রাজেনেকা এবং শুক্রবার পর্যন্ত পুরো ইউরোপীয় ইউনিয়নসহ যুক্তরাজ্য, মেক্সিকো ও ভারত এটির অনুমোদন দিয়েছে।
হেলথ কানাডার চিফ মেডিকেল অ্যাডভাইজার ডা. সুপ্রিয়া শর্মা এ মাসের গোড়ার দিকে বলেছিলেন, ট্রায়ালে কিছু স্বেচ্ছাসেবক অ্যাস্ট্রাজেনেকার অর্ধেক ডোজ ভ্যাকসিন নেওয়ায় এটি পর্যালোচনা করা কিছুটা জটিল।
এরপর যুক্তরাজ্যে বড় পরিসরে ট্রায়াল চললেও মরিসেটে বলেন, মার্চ পর্যন্ত ট্রায়ালের ফলাফল পাওয়া যাবে না এবং হেলথ কানাডা সব ক্লিনিক্যাল ডাটা প্রয়োজন বলে মনে করছে।
জনসন অ্যান্ড জনসন তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল ঘোষণার পর চতুর্থ ভ্যাকসিন অনুমোদনের বিষয়টিও সামনে চলে এসেছে। সিঙ্গেল ডোজের ভ্যাকসিনটির অনুমোদন চেয়ে গত ৩০ নভেম্বর হেলথ কানাডার কাছে আবেদন জমা দেয় জনসন অ্যান্ড জনসন। হেলথ কানাডা সর্বপ্রথম অর্থাৎ ৯ ডিসেম্বর ফাইজার-বায়োএনটেকের ভ্যাকসিন অনুমোদন দেয়। এর কিছুদিন পর ২৩ ডিসেম্বর অনুমোদন দেয় মডার্নার ভ্যাকসিন। উভয় ক্ষেত্রেই তৃতীয় ধাপের ক্লিনিক্যাল ট্রায়ালের ফলাফল প্রকাশের তিন সপ্তাহ পর অনুমোদন দেয় হেলথ কানাডা।
কলামিস্ট, উন্নয়ন গবেষক ও সমাজতাত্ত্বিক বিশ্লেষক মোঃ মাহমুদ হাসান এর মতে, মানুষের জীবন আর অর্থনৈতিক সুরক্ষায় কোভিড-১৯ এর শুরু থেকেই জাস্টিন ট্রুডোর সরকার আন্তরিকতা ও নিষ্ঠার সঙ্গেই কাজ করে যাচ্ছে, সাধারণ জনগোষ্ঠীর মধ্যেও এ নিয়ে প্রশান্তি আছে কিন্তু ভ্যাকসিন প্রাপ্তির বাস্তবতাটা কিছুটা হলেও ভিন্ন। কানাডার বাইরে উৎপাদিত ভ্যাকসিন, উৎপাদনকারী দেশের যেমন অগ্রাধিকার আছে, তার সাথে রয়েছে আন্তর্জাতিক রাজনীতি ও কুটনীতি। আমেরিকা ও কানাডায় সম্মুখসারীর যোদ্ধারা একই দিনে ভ্যাকসিন প্রাপ্তি শুরু হলেও কানাডাতে সাধারণ পর্যায়ে এখনও আসেনি। মার্চের মধ্যে তিন কোটি মানুষ ভ্যাকসিন পাওয়ার ঘোষণাটি সমাজে নিশ্চিত প্রশান্তির সুবাতাস নিয়ে আসবে।
কানাডার প্রধান চারটি প্রদেশ অন্টারিও, বৃটিশ কলম্বিয়া, আলবার্টা এবং কুইবেকে নাটকীয়ভাবে করোনা আক্রান্তের সংখ্যা বাড়ছে। আর করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা বৃদ্ধির কারণে হাসপাতাল, নিবিড় পরিচর্যাকেন্দ্রে ব্যাপকহারে চাপ পড়ছে। সামাজিক দূরত্ব ও স্বাস্থ্যবিধি মানাসহ সরকারি বিভিন্ন বিধিনিষেধ দেওয়া সত্ত্বেও করোনাভাইরাস কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না।
দেশটির সরকার করোনা পরিস্থিতি মোকাবিলায় দ্রুততম সময়ে কিভাবে নাগরিকদের ভ্যাকসিনের আওতায় আনা যায় তার ওপর জোর গুরুত্বারোপ করছে।
সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী, কানাডায় করোনাভাইরাসে আক্রান্তের সংখ্যা ৮ লাখ ২০ হাজার ৩০৬ জন, মৃত্যুবরণ করেছেন ২১ হাজার ১শ’ ৬২ জন এবং সুস্থ হয়েছেন ৭ লাখ ৬২ হাজার ২ শ’ জন।