সরকারি শিল্প ও বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত জমিতে শিল্পায়নের নতুন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নিয়েছে বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিডা)। এর পরিপ্রেক্ষিত্রে দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা প্রায় একশ শিল্প-কারখানার ৩৯টিতে জরিপ করে এক হাজার ১৭ একর অলস জমি পেয়েছে সংস্থাটি।
বিডা বলছে, অলস পড়ে থাকা এসব জমি দেশি বা বিদেশি বিনিয়োগকারীদের বরাদ্দ দেয়া হবে।
মঙ্গলবার রাজধানীর দিলকুশায় বিডার প্রধান কার্যালয়ে সরকারি শিল্পে অলস জমির ব্যবহার নিশ্চিত করতে নীতিমালা-২০১৬’র চূড়ান্তকরণ সংক্রান্ত আন্তঃমন্ত্রণালয় সভা হয়। ওই সভায় এসব কথা জানান বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম।
এর আগে গত ১৩ মার্চ নীতিমালাটি নিয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়, বিভাগ ও সংস্থার মতামত চেয়ে চিঠি দেয় বিডা। এর পরিপ্রেক্ষিতে মতামত দিয়েছে বেজা ও শিল্পমন্ত্রনাল। সভায় এই দুইটির যেসব পরামর্শ এসেছে তা নিয়ে পর্যালোচনা হয়। এছাড়া সংশ্লিষ্ট অন্যান্য মন্ত্রণালয়, অধিদপ্তর ও সংস্থাসমূহের মতামত নিয়ে খসড়া চূড়ান্ত করার জন্য সভায় আলোচনা করা হয়।
সভায় বিডার পক্ষ থেকে জানানো হয়, বাংলাদেশ বিনিয়োগ উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ আইনের ধারা ২৩(১) অনুযায়ী ‘সরকারি শিল্প বা বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানের অব্যবহৃত জমি বা স্থাপনা বিনিয়োগ ও শিল্পায়নের জন্য ব্যবহার সংক্রান্ত খসড়া নীতিমালা-২০১৬’ এর আওতায় চলমান ও বন্ধ হয়ে যাওয়া শতাধিক শিল্প-কারখানা রয়েছে দেশের বিভিন্ন স্থানে। এসব কারখানা ঘিরে বেশকিছু জমি এর মধ্যে চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিডার নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলাম বলেন, বিডার প্রথম পরিচালনা পর্ষদে সরকারি শিল্প প্রতিষ্ঠানকেন্দ্রিক পড়ে থাকা অলস জমি নতুন শিল্পাঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজে লাগাতে একটি খসড়া বিধিমালা নিয়ে আলোচনা হয়েছে। সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয় ও বিভাগের সঙ্গে পরামর্শ করে বিধিমালাটি চূড়ান্ত করা হচ্ছে।
ইতোপূর্বে দেশের বিভিন্ন এলাকায় শিল্পকারখানা স্থাপনে যে ভূমি অধিগ্রহণ করা হয়েছিল, পরিকল্পনা অনুযায়ী এর ভূমির সবটুকু কাজে লাগেনি। অনেক শিল্প পরিকল্পনা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয়নি। আবার অনেক কারখানা বন্ধ হয়ে আছে দীর্ঘদিন ধরে। এসব অলস শিল্পাঞ্চলকে কাজে লাগাতে ইতোমধ্যেই জরিপ শুরু হয়েছে।
আমিনুল বলেন, এতোদিন আইনের বিধান ছিল না। এখন বিধান হয়ে গেলে এসব অলস ও অব্যবহৃত ভূমির সঠিক ব্যবহার হবে। বেজা ও শিল্পমন্ত্রনালয়সহ বিভিন্ন সংস্থার মতামতের ভিত্তিতে বিধিমালাটি আরো রিফাইন করা হয়েছে। যা পরবর্তী গভর্নিং সভায় উপস্থাপন করা হবে। আইনটি বাস্তবায়ন হলে বিভিন্ন অচল কারখানায় যেসব জমি অব্যবহৃত অবস্থায় পড়ে আছে সেগুলোকে কাজে লাগানো যাবে।
তিনি বলেন, অব্যবহৃত এসব জমি বিনিয়োগকারীরা চাইলে তাদের সরবরাহ করা হবে। এছাড়া বেজা বা বেপজা চাইলেও তাদের মাধ্যমে বিনিয়োগকারীদের এসব জমি দেযা হবে।
সভায় জানানো হয়, সরকারি প্রায় একশটি শিল্প কারখানা রয়েছে। এগুলোর ৩৯টিতে জরিপ করা হয়। এর মধ্যে ১৮টি কারখানা চালু আছে, ৩টি আংশিক চালু আর ১৮টি বন্ধ রয়েছে। এসব কারখানার জমির পরিমাণ প্রায় দেড় লাখ একর; যার মধ্যে উদ্বৃত বা অব্যবহৃত রয়েছে এক হাজার ৫১৭ একর জমি। বাকি শিল্প-কারখানায় জরিপ করে উদ্ধৃত জমি বের করে বিনিয়োগের জন্য অফার করা হবে।
বিলুপ্ত প্রাইভেটাইজেশন কমিশনের অধীনে থাকা ৩৬৪ দশমিক ২২ একর আয়তনের ১৫টি শিল্পপ্রতিষ্ঠান বিডার অধীনে এসেছে। এর মধ্যে মাত্র দুটি চালু আছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মোট অব্যবহৃত একশ একর জমি চিহ্নিত করা হয়েছে।
বিডা নির্বাহী চেয়ারম্যান কাজী এম আমিনুল ইসলামের সভাপতিত্বে সভায় উপস্থিত ছিলেন বিডার নির্বাহী সদস্য মোহাম্মদ আলতাফ হোসেন, পরিচালক মো. মোস্তাফিজুর রহমান, বস্ত্র ও পাট মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মতিউর রহমান, রেলপথ মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. রফিকুল ইসলাম, সেতু বিভাগের উপ-সচিব এসএম লাভলুর রহমান, মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব মো. কবিরুল ইসলাম, শিল্প মন্ত্রণালয়ের উপ-সচিব সুরাইয়া পারভীন শেলী ও বেজার ব্যবস্থাপক সালেহ আহমেদ প্রমুখ।