৩৬ ঘণ্টার ঐতিহাসিক সফরে এখন ঢাকার পথে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। ৮০ জনের প্রতিনিধিদল নিয়ে সকাল সোয়া ১০টায় তার ঢাকায় পৌঁছার কথা।
মোদির বাংলাদেশ সফরে দু দেশের মধ্যে বেশ কয়েকটি চুক্তি ও সমঝোতা স্মারক সই হবে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে শীর্ষ বৈঠকে গুরুত্ব পাবে বণিজ্য জোরদার, যোগাযোগ ও সন্ত্রাস বিরোধী ব্যবস্থাসহ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য চুক্তি, অভ্যন্তরীণ পানি বিষয়ক প্রটোকল, উপকূলীয় জাহাজ চলাচল, পণ্যের মান সংক্রান্ত সহযোগিতা এবং সাংস্কৃতিক বিষয়ক বেশ কিছু চুক্তি এ সফরে সই হতে পারে।
এছাড়াও উভয় দেশের সমুদ্র নিরাপত্তা বাহিনী এবং মানব পাচার ও জাল নোট রোধসহ নিরাপত্তা বিষয়ে সমঝোতা স্মারক হতে পারে।
সফরে রাষ্ট্রপতি ও প্রধানমন্ত্রী ছাড়াও মোদি বৈঠক করবেন বিরোধী দলীয় নেতা এবং বিএনপি চেয়ারপার্সনের সাথে।
নরেন্দ্র মোদি ভারতের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নেয়ার পর এটিই তার প্রথম ঢাকা সফর।
‘ঐতিহাসিক সফর’ হিসেবে আখ্যা দিয়ে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় শুক্রবার প্রেস ব্রিফিংয়ে মোদির চূড়ান্ত সফরসূচি জানিয়েছে।
ভারতীয় বিমানবাহিনীর একটি জেট নরেন্দ্র মোদিকে নিয়ে সকাল ১০টা ১৫ মিনিটে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।
বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তাকে স্বাগত জানাবেন। বিমানবন্দরের আনুষ্ঠানিকতা শেষে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে যাবেন এবং ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
মোদি পরে জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্মৃতির প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে বঙ্গবন্ধু জাদুঘরে যাবেন। ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ ঢাকা-কলকাতা-আগরতলা এবং ঢাকা-শিলং-গৌহাটি বাস সার্ভিস যৌথভাবে উদ্বোধন করবেন।
পরে দুই প্রধানমন্ত্রী বৈঠক করবেন। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি দ্বিপাক্ষিক বৈঠকের আগে তাদের সঙ্গে যোগ দেবেন। আনুষ্ঠানিক বৈঠকের আগে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নরেন্দ্র মোদি ২৫ মিনিট একান্ত বৈঠক করবেন।
এই বৈঠকের পর ১৯৭২ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি কলকাতায় বঙ্গবন্ধুর ভাষণের একটি সিডি এবং স্থলসীমান্ত চুক্তি সংক্রান্ত সংবিধান সংশোধনের ভারতীয় সংসদের কার্যবিবরণী হস্তান্তর করা হবে।শেখ হাসিনা ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর পাকিস্তানী সৈন্যদের আত্মসর্ম্পণ অনুষ্ঠানের আলোকচিত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রীকে উপহার দেবেন।
দুই নেতা পরে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে সংশ্লিষ্ট প্রতিনিধিদলের সদস্যদের নিয়ে শীর্ষ বৈঠকে যোগ দেবেন। এ বৈঠক এক ঘন্টা স্থায়ী হতে পারে। পরে দুই নেতা যৌথ বিবৃতি দেবেন।
রাতে ভারতের প্রধানমন্ত্রী সোনারগাঁও হোটেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দেয়া নৈশভোজের আগে একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন রোববার ঢাকেশ্বরী মন্দির ও রামকৃষ্ণ মিশনে যাবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী। পরে ভারতীয় হাইকমিশনের নতুন চ্যান্সরি ভবনে যাবেন তিনি।
দুপুরে রাষ্ট্রপতি মোহাম্মদ আবদুল হামিদের সাথে সাক্ষাৎ শেষে মধ্যাহ্ন ভোজে অংশ নেবেন। তিনি ভারতের সাবেক প্রধানমন্ত্রী অটল বিহারী বাজপেয়ীর পক্ষে রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে ‘বাংলাদেশ মুক্তিযুদ্ধ সম্মাননা’ও গ্রহণ করবেন।
এরপর প্যান প্যাসিফিক সোনারগাঁও হোটেলে অবস্থান করবেন মোদি। সেখানেই বিরোধী দলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া তার সঙ্গে সাক্ষাত করবেন।
ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে ভারতীয় হাইকমিশন আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বক্তৃতা দেয়ার মাধ্যমে তার দু’দিনের সফর সমাপ্ত করবেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোববার সন্ধ্যায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নরেন্দ্র মোদিকে বিদায় জানাবেন
মোদির ৮০ সদস্যের প্রতিনিধিদলে কোনো মন্ত্রী আসছেন না।
ভারতের প্রধানমন্ত্রীর সফর উপলক্ষ্যে রঙিন সাজে সেজেছে রাজধানী ঢাকা। নগরীর পয়েন্টে-পয়েন্টে শোভা পাচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ছবি। দু’দেশের পতাকায় সেজেছে সড়ক দ্বীপগুলো।