ভারতের রাজধানী দিল্লিতে ছয় বছরের এক মেয়ে শিশুকে ধর্ষণের পরে হত্যার অভিযোগে সম্প্রতি এক যুবককে গ্রেপ্তারের পর লোমহর্ষক এক পাশবিকতার সন্ধান পেয়েছে পুলিশ। গ্রেপ্তারকৃত যুবক একইরকম আরো ৩০টি অপরাধের কথা পুলিশের কাছে স্বীকার করছে। ২০০৮ সাল থেকে সে ওইসব অপরাধ করে আসছিলো, আলোচিত ওই সিরিয়াল কিলারের পূর্বে সংঘটিত অপরাধগুলোর বিষয়ে তদন্ত করছে পুলিশ।
এক পরিত্যক্ত ভবন থেকে নিহত শিশুটির লাশ উদ্ধার করার পর গত সপ্তাহে রাভিন্দারকে (২৩) আটক করে পুলিশ। গ্রেপ্তারের পর রাভিন্দার শিশুদের যৌন নির্যাতন এবং খুনের আরও ৩০ টি ঘটনা ঘটিয়েছে বলে পুলিশের কাছে স্বীকার করে। এছাড়াও তার অপরাধগুলোর সময় এবং স্থানের বিবরণও সে দেয় বলে পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়।
রাভিন্দারের ৩০টি অপরাধের স্বীকারের অনেকগুলো আসলেই সংঘটিত হয়েছিলো বলে প্রমাণ পেয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। আদালতে রাভিন্দারকে হাজির করা হলে উপস্থিত আইনজীবিদের হামলারও শিকার হন তিনি।
পশ্চিম দিল্লির রোহিনি এলকায় বেগমপুর পুলিশ স্টেশনে রাভিন্দারের সাথে কথা হয় বিবিসির এক প্রতিনিধির। তার বয়ানে জানা যায়, বাসায় টয়লেটের ব্যবস্থা না থাকায় মেয়েটি মাঠের দিকে যাচ্ছিল। এসময় তাকে অর্থলোভ দেখিয়ে পরিত্যক্ত ভবনে নিয়ে যায় রাভিন্দর। তবে মেয়েটি চিৎকার করা শুরু করলে তাকে যৌন নির্যাতন করে শ্বাস রোধ করে হত্যা করে সে। পরে ভবনের নিচতলায় মেয়েটির লাশ রেখে পালিয়ে যায়।
রাভিন্দার স্বীকার করে, ২০০৮ সালে তার প্রথম অপরাধের পর থেকে উত্তর প্রদেশ, হরিয়ানা এবং দিল্লিতে আরও ৩০ জন শিশুকে ধর্ষণ ও হত্যা করেছে সে।
গত বছরেও এরকমই এক অপরাধের দায়ে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়েছিলো। ছয় বছরের এক ছেলে শিশুকে যৌন হয়রানি এবং গলা কেটে হত্যা চেষ্টার অভিযোগে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। একবছর জেলও খাটে সে। তবে আক্রান্ত ছেলেটি বেঁচে যাওয়ায় এবং তাকে চিহ্নিত করতে ব্যর্থ হওয়ায় দুই মাস আগে মুক্তি পায় রাভিন্দার।
ট্রাকের সহকারি হিসেবে কাজ করা রাভিন্দার যেন উপন্যাসের ড. জেকিল এবং মি. হাইডের দ্বৈতরূপি ব্যক্তির বাস্তব রূপ। রাতের বেলা নেশাগ্রস্থ অবস্থায় অথবা কখনোও হিন্দি ভাষায় ডাবিংকৃত ইংলিশ মুভি বা পর্ন ছবি দেখে সে এসব জঘন্য কাজে লিপ্ত হয়। “তারা চিৎকার করলেই আমি তাদের হত্যা করি।” বলে উল্লেখ করে সে।
তার বেশির ভাগ শিকারই তার মতো দরিদ্র পরিবারের। যারা রাস্তায় ঘুমায়, নির্মান কাজ করে বা বেঁচে থাকার তাগিদে কঠোর পরিশ্রম করে।
পুলিশের ডেপুটি কমিশনার বিক্রমজিত সিং ওই সিরিয়াল কিলারের জবানবন্দীতে তারা হতবাক হয়ে গেছেন বলে জানান। তাকে মানসিক বিকারগ্রস্থ বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
তবে পুলিশের বক্তব্যের মধ্যেও দ্বিচারিতা রয়েছে। কারণ গ্রেপ্তারের পরদিনই ১৫ টি অপরাধে যুক্ত থাকার কথা জানায় রাভিন্দার। তবে তা এখন বেড়ে ৩০ এ গিয়ে ঠেকেছে। কয়েকজন স্থানীয় প্রতিবেদক জানিয়েছে ৪০ বা ১০০ টি খুনের সাথেও জড়িত থাকতে পারে রাভিন্দার।
তবে তার পিতা সীসা দিয়ে জিনিসপত্র তৈরির কারিগর ব্রহ্মানন্দ এবং গৃহকর্মী মা মাঞ্জু এসব অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, পুলিশের মারধরের কারনেই তার ছেলে এসব হত্যাকান্ডের কথা স্বীকার করেছে। পুলিশ চাইলে ঈশ্বরকে দিয়েই স্বীকারোক্তি আদায় করতে পারে বলে ক্ষোভ প্রকাশ করেন তারা।
তবে হত্যাকাণ্ডের শিকার মেয়ে শিশুটির গরুগাড়ি চালক বাবা এবং মা রবিন্দারের দৃষ্টান্তমুলক শাস্তি চেয়েছে। নিহত মেয়ের বিভৎস লাশটিও মাকে দেখতে দেয়া হয়নি।