জঙ্গিদের গডফাদার মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকর করতে দিন গণনা শুরু হয়েছে। জেল কোড অনুযায়ী যেদিন তাকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে তার পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে তাকে রাষ্ট্রপতির নিকট প্রাণভিক্ষা চাইতে হবে। সিলেটে ব্রিটিশ হাই কমিশনারকে হত্যা চেষ্টা মামলার রায়ে মুফতি হান্নানকে ফাঁসিতে ঝুলিয়ে মৃত্যুদণ্ডের আদেশ দেন আদালত।
বর্তমানে কাশিমপুর কারাগারের হাইসিকিউরিটি জোনে আছেন তিনি। বুধবার সকালে তাকে মৃত্যুপরোয়ানা পড়ে শোনান কাশিমপুর কারাগারের সুপার মিজানুর রহমান। সে সময় রাষ্ট্রপতির কাছে প্রাণভিক্ষার আবেদন জানানোর ইচ্ছে প্রকাশ করেন মুফতি হান্নান।
বিষয়টি নিয়ে সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স গোলাম হায়দার চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, রায় পড়ে শোনানোর পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে তাকে প্রাণ ভিক্ষা চাইতে হবে। জেল কোড অনুযায়ী তার প্রাণভিক্ষার আবেদন মন্ত্রণালয় থেকে রাষ্ট্রপতির কাছে পৌঁছবে। একই সঙ্গে কারা কর্তৃপক্ষ রাষ্ট্রপতির নিকট তার ফাঁসি কার্যকরের একটা সম্ভাব্য তারিখ উল্লেখ করে নথি প্রেরণ করবেন। সেখানে যে দিনটির উল্লেখ থাকবে তা ফাঁসির রায় পড়ে শোনানোর ২১ দিন অতিবাহিত হবার পরবর্তী ৭ দিনের মধ্যে যেকোন একটি দিন।
কারা সূত্র মোতাবেক, মুফতি হান্নানের ফাঁসি কার্যকরে প্রস্তুত আছে কারা কর্তৃপক্ষ। প্রয়োজনীয় কাগজ পত্র, জল্লাদসহ আনুষঙ্গিক প্রস্তুতি সম্পন্ন করবেন। দেখা করার সুযোগ দেয়া হবে মুফতি হান্নানের পরিবারের সদস্য ও স্বজনদের। জোরদার করা হবে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
জেল কোড অনুযায়ী এসব প্রস্তুতিতে ২১ দিন সময়ের উল্লেখ রয়েছে। তবে বর্তমান উন্নত প্রযুক্তি ও যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন তরান্বিত হওয়ায় সবকিছু খুব দ্রুত সম্ভব। জেলকোড রচনার সময় তৎকালিন অনুন্নত যোগাযোগ ব্যবস্থা আর পারিপার্শ্বিকতার বিবেচনায় ২১ দিনের উল্লেখ আছে বলে জানিয়েছেন সাবেক ডিআইজি প্রিজন্স গোলাম হায়দার।
২২ মার্চ কাশিমপুর কারাগারে মুফতি হান্নানকে রায় পড়ে শোনানো হয়েছে। এ বিবেচনায় স্পষ্ট ২৯ মার্চের মধ্যে মুফতি হান্নানকে প্রাণ ভিক্ষার আবেদন করতে হবে।
তিনি অারও বলেন, অনেক সাধারণ বন্দী রয়েছেন, যাদের প্রাণ ভিক্ষার অাবেদন বছরের পর বছর রাষ্ট্রপতির নিকট পড়ে রয়েছে। কিন্তু মুফতি হান্নানের বিষয়টি যেহেতু অত্যন্ত স্পর্শকাতর সেজন্য হয়তো রাষ্ট্রপতি এতে বিলম্ব করতে পারবেন না।
কোথায় ফাঁসি হবে মুফতি হান্নানের:
জেল কোড অনুযায়ী আসামির নিজ জেলায় ফাঁসি কার্য করের বিধান রয়েছে। এতে করে লাশ স্বজনদের কাছে হস্তান্তর সুবিধাজনক হয়। কিন্তু মুফতি হান্নানের বিষয়টি অত্যন্ত স্পর্শকাতর এবং সেই সঙ্গে নিরাপত্তার বিষয়টি জড়িত থাকায় সরকার যদি মনে করেন বন্দীর নিজ জেলার কারাগারে নিরাপত্তার ঘাটতি হতে পারে, সেক্ষেত্রে নিরাপত্তার বিষয়টিকে মাথায় রেখে হয় কাশিমপুর কারাগারেই কঠোর নিরাপত্তা বেষ্টনীতে তার ফাঁসি কার্যকর হতে পারে বলে মনে করছেন সাবেক এই ডি আইজি প্রিজন্স।
ব্রিটিশ হাইকমিশনার আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি মুফতি হান্নান ও বিপুল কাশিমপুর হাইসিকিউরিটি কেন্দ্রীয় কারাগার এবং অপর আসামি দেলোয়ার হোসেন রিপন সিলেট জেলা কারাগারে রয়েছে।
২০০৪ সালের ২১ মে সিলেটের হযরত শাহজালাল (র.) মাজারে আনোয়ার চৌধুরীর ওপর গ্রেনেড হামলা হয়। হামলায় আনোয়ার চৌধুরী, সিলেটের জেলা প্রশাসকসহ অর্ধশতাধিক ব্যক্তি আহত এবং পুলিশের দুই কর্মকর্তাসহ তিনজন নিহত হন।
ওই মামলায় ২০০৮ সালের ২৩ ডিসেম্বর বিচারিক আদালত ৫ আসামির মধ্যে মুফতি হান্নান, বিপুল ও রিপনকে মৃত্যুদণ্ড এবং মহিবুল্লাহ ও আবু জান্দালকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়।
নিয়ম অনুসারে মৃত্যুদণ্ড অনুমোদন করতে প্রয়োজনীয় নথি হাইকোর্টে পাঠানো হয়। প্রায় সাত বছর পর গত বছরের ৬ জানুয়ারি এ মামলায় হাইকোর্টে শুনানি শুরু হয়ে ৩ ফেব্রুয়ারি শেষ হয়। বিচারিক আদালতের দণ্ড বহাল রেখে ১১ ফেব্রুয়ারি রায় ঘোষণা করে হাইকোর্ট।
গত বছরের ২৮ এপ্রিল হাইকোর্টের রায়ের পূর্ণাঙ্গ অনুলিপি প্রকাশিত হয়। ১৪ জুন রায় হাতে পাওয়ার পর ১৪ জুলাই আপিল করেন দুই আসামি হান্নান ও বিপুল। অপর মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত আসামি রিপন আপিল না করলেও আপিল বিভাগ তার জন্য রাষ্ট্রনিযুক্ত আইনজীবী নিয়োগ করে।
আপিলের শুনানি শেষে গত বছরের ৭ ডিসেম্বর আসামিদের আপিল খারিজ হয়ে যায়। গত ১৭ জানুয়ারি এ রায় প্রকাশের পর আসামিরা পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদন করেন। রোববার (১৯ মার্চ) দেওয়া রিভিউ খারিজের রায় মঙ্গলবার প্রকাশিত হয়