চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

২৫ মার্চ: যে কারণে গণহত্যার টার্গেট ছিলো পিলখানা

২৫ মার্চ রাতে পাকিস্তানি বাহিনী অপারেশন সার্চলাইট নামক যে হত্যাযজ্ঞে মেতে ওঠে, তার তিনটি লক্ষ্যস্থলের একটি ছিল পিলখানায় ইস্ট পাকিস্তান রাইফেলস (ইপিআর) সদর দপ্তর। সেখানে মোতায়েন পাঁচ হাজার ইপিআর জওয়ানকে নিরস্ত্র করা এবং ওয়্যারলেস ব্যবস্থা নিজেদের দখলে নেয়া ছিলো সেখানে হামলার উদ্দেশ্য।

বাঙালি ইপিআর সদস্যদের মধ্যে অনেকেই বঙ্গবন্ধুর ছয় দফা দাবি, ৭ মার্চের ভাষণের সঙ্গে একাত্মতা প্রকাশ করেছিলেন। তাই ২৩ মার্চ পাকিস্তানি আর্মির কড়া নজরদারী উপেক্ষা করে ইপিআর হেড কোয়ার্টারের ১১ নম্বর প্যারেড গ্রাউন্ডের পাশে একটি গাছের মাথায় তারা উড়িয়েছিলেন স্বাধীন বাংলার পতাকা। এ কারণে বাঙালি ইপিআর সদস্যদের গতিবিধির ওপর ছিলো পাকিস্তানি সামরিক গোয়েন্দাদের নিবিড় নজরদারি।

নিরাপত্তা বিশ্লেষক মেজর জেনারেল (অব.) আব্দুর রশিদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ১৯৭০ এর পর থেকেই ধীরে ধীরে উত্তাল হচ্ছিলো তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান। সামরিক-আধা সামরিক বাহিনীতে চরম অমানবিক বৈষম্যে শিকার বাঙালি সদস্যরাও সচেতন হচ্ছিলো। অন্যদিকে রাজনৈতিক সংলাপের আড়ালে পশ্চিম পাকিস্তানের সেনারা তৎপর হচ্ছিলো। তাই সশস্ত্র বাঙালি ইপিআর, পুলিশকে যাতে প্রতিরোধ গড়ার পূর্বেই নির্মূল করা যায় সেজন্য গোয়েন্দা তৎপরতা আগে থেকেই শুরু হয়েছিলো।’

তাই ২৫ মার্চ সুপরিকল্পিত নিধনযজ্ঞের টার্গেট হিসেবে বাঙালি ইপিআর সদস্যদের ওপর ভারী অস্ত্র নিয়ে ঝাঁপিয়ে পড়ে ২২ বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিভাগের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, ‘২৫ মার্চ পাকিস্তানের গণহত্যার মিশন অপারেশন সার্চ লাইটের প্রধান লক্ষ্যগুলো ছিলো সামরিক-আধা সামরিক বাহিনীর স্থাপনাগুলোতে দায়িত্বরত বাঙালি অফিসার-জওয়ানরা। কারণ এই সশস্ত্র বাঙালিরা বিদ্রোহ করতে পারে এমন আশঙ্কা পাকিস্তান সেনাবাহিনীর উচ্চ পর্যায়ে আগে থেকেই ছিলো।’

শুধু পিলখানায় ইপিআর সদর দপ্তরেই নয় অনেক বাঙালি ইপিআর সদস্যদের হত্যা করা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন ব্রিটিশ কাউন্সিলে দায়িত্বরত অবস্থায়। তৎকালীন প্রেসিডেন্ট হাউজসহ (অতিথি ভবন সুগন্ধা) বিভিন্ন জায়গা থেকে শতাধিক নিরস্ত্র ইপিআর সদস্যকে ধরে এনে রমনার কালীবাড়িতে হত্যা করা হয়। ২৫ মার্চ রাত ১২টায় পাকিস্তান সেনাবাহিনী ডিআইটি ভবনের ওপর থেকে তৎকালীন গভর্নর হাউজে অবস্থানরত ইপিআর সস্যদের ওপর গোলাবর্ষণ করে। বাঙালি ইপিআর হত্যায় সরাসরি অংশ নেয় কুখ্যাত বালুচ রেজিমেন্টের সেনারা।

২৫ মার্চ কাল রাত পর্যন্ত বাঙালি ও পশ্চিম পাকিস্তানি মিলিয়ে ইপিআর সদস্য সংখ্যা ছিলো ১৩ হাজার ৪৫৪ জন। বাঙালি ইপিআর সদস্যদের মধ্যে ফেব্রুয়ারি-মার্চের শুরু থেকেই পশ্চিম পাকিস্তানের নিয়ন্ত্রণ থেকে মুক্তির চিন্তা বিস্তৃত হতে থাকে। যা পাকিস্তানি গোয়েন্দা নজরদারীতে ধরা পড়ে এবং সেনা কর্মকর্তাদের উদ্বেগের কারণ হয়। আর তাই ২৫ মার্চ কাল রাতের শুরুতেই ২২ বালুচ রেজিমেন্টের লক্ষ্যবস্তু হন পিলখানায় অবস্থানরত ৫ হাজার বাঙালি ইপিআর সদস্য।

তবে ট্রেসার বুলেটে আকাশ আলোকিত করে ট্যাংক, মর্টার আর অত্যাধুনিক রাইফেলে সজ্জিত পাকিস্তানি বাহিনীর বিরুদ্ধে প্রাথমিক প্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন পিলখানার বাঙালি ইপিআর সদস্যরা। তবে তা স্বাভাবিক কারণেই মাত্র কয়েক ঘণ্টার বেশি স্থায়ী হয়নি।

বিদেশী পরিদর্শকদের দেয়া তথ্যানুযায়ী, সেই রাতে ২ হাজারেরও বেশি বাঙালি ইপিআর সদস্যকে হত্যা করা হয়। অন্তত ৩’শ জনকে গ্রেফতার করা হয়। আর পালাতে সক্ষম হন ৪’শ-৫’শ জন।

মুক্তিযুদ্ধে ৮’শ ৮৭ জন ইপিআর সদস্যের শহীদ হওয়ার আনুমানিক তথ্য পাওয়া গেলেও ২৫ মার্চ রাতে ঘটনাস্থলে এবং পরে গ্রেফতার হওয়াদের মধ্য ঠিক কতজন নিহত হয়েছেন তার সঠিক হিসাব এখনো পাওয়া যায়নি।