২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনে জাতীয় সংসদে ঐতিহাসিক প্রস্তাব গৃহীত হয়েছে। প্রস্তাবে বলা হয়, ‘১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ কালরাতে বর্বর পাকিস্তানি সেনাবাহিনী কর্তৃক সংঘটিত গণহত্যাকে স্মরণ করে ২৫ মার্চকে জাতীয় গণহত্যা দিবস ঘোষণা করা হোক এবং আন্তর্জাতিকভাবে এ দিবসের স্বীকৃতি আদায়ে প্রয়োজনীয় কার্যক্রম নেয়া হোক।’ একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির একটি অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে আলোচনা করে ওইদিনই সংসদ অধিবেশনে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করতে অভিজ্ঞ পার্লামেন্টারিয়ান তোফায়েল আহমেদ সংসদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন। গত মাসের শেষ সপ্তাহের ওই আলোচনার রেশ ধরেই এ নিয়ে প্রস্তাব আনার কথা বলেন সংসদ নেতা ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এ পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) সংসদ সদস্য শিরীন আখতার শনিবার (১১ মার্চ) অধিবেশনের শুরুতেই প্রস্তাবটি উত্থাপন করেন। বাঙালি জাতির বহুল প্রতীক্ষিত এ ইচ্ছার প্রতিফলন ঘটায় জাতীয় সংসদকে আমরা অভিনন্দন জানাচ্ছি। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গভীর রাতে মুক্তিকামী বাঙালি জাতির ওপর পৈশাচিক বর্বর হামলা চালিয়েছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। একটি জাতির ওপর বর্বরতম গণহত্যা চালিয়ে মানবতাবিরোধী অপরাধে মেতে উঠেছিলো সেই পৈশাচিক হায়েনারা। তাদের ঘৃণ্য গণহত্যা থেকে নারী-শিশু-লেখক-ছাত্র-শিক্ষক-সাংবাদিক-বুদ্ধিজীবি কেউই রেহাই পায়নি। সেই রাতে সমগ্র ঢাকা শহরকে তারা এক মৃত্যুপুরীতে পরিণত করেছিল। পৃথিবীর ইতিহাসে বেসামরিক মানুষদের ওপর এমন নৃশংস গণহত্যা চালানোর ইতিহাস দ্বিতীয়টি নেই। এর ধারাবাহিকতায় একাত্তরে দীর্ঘ নয় মাস ধরে তারা বাঙালি জাতির ওপর একই নৃশংসতা চালিয়েছে। এ কারণে গিনেস বুক অব ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসে বাংলাদেশের এই হত্যাযজ্ঞকে বিশ শতকের পাঁচটি ভয়ঙ্কর গণহত্যার অন্যতম উল্লেখ করা হয়। ২০০২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন বিশ্ববিদ্যালয়ের নিরাপত্তা বিষয়ক আর্কাইভ তাদের অবমুক্তকৃত দলিল প্রকাশ করে। এখানেও বাংলাদেশে সংঘটিত এই নারকীয় হত্যাযজ্ঞকে জেনোসাইড হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। শেষ পর্যন্ত পাকিস্তানি বাহিনীর শোচনীয় পরাজয় ঘটে। এরপর প্রায় পাঁচ দশক পেরিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু, নিজেদের কর্মকাণ্ডের জন্য পাকিস্তান কখনও লজ্জিত হয়নি, বাংলাদেশের কাছে ক্ষমা প্রার্থনা করেনি। এমনকি ১৯৭১ সাল থেকেই তারা সারা বিশ্বের সামনে মিথ্যার আশ্রয় নিচ্ছে। তাই এ গণহত্যা নিয়ে তাদের চলমান মিথ্যাচারের বিরুদ্ধে সারা বিশ্বকে প্রকৃত সত্য জানাতে সরকারের যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ বলে আমরা মনে করি। পাকিস্তানি বর্বরদের হাতে নিহত ৩০ লাখ শহীদের আত্মার শান্তির জন্য হলেও শুধু কথার কথায় সীমাবদ্ধ না রেখে দিবসটিকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসে পরিণত করতে অনতিবিলম্বে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করতে আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি।