বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের উপমন্ত্রী আবদুস সালাম পিন্টুর সরকারি বাসভবন থেকে ২১ আগস্ট হামলায় ব্যবহৃত গ্রেনেডগুলো সরবরাহ করা হয় বলে জানিয়েছে রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি সৈয়দ রেজাউর রহমান।
মঙ্গলবার মামলার যুক্তিতর্কে তিনি মামলার অন্যতম আসামী মাওলানা মঈনউদ্দিন ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ’র স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীর আলোকে এ তথ্য তুলে ধরেন।
রাজধানীর পুরান ঢাকার নাজিমউদ্দিন রোডে পুরনো কেন্দ্রীয় কারাগারের পাশে স্থাপিত ঢাকার ১ নম্বর দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালের বিচারক শাহেদ নূর উদ্দিনের আদালতে এ মামলার বিচার চলছে।
ওই স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দীতে আসামী বলে, ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট সকালে জঙ্গি নেতা মুফতি আবদুল হান্নান মুন্সীসহ অন্য জঙ্গিরা পিন্টুর ভাই মাওলানা তাজউদ্দিন থেকে ১৫টি আর্জেস গ্রেনেড ও ২০ হাজার টাকা গ্রহণ করে। পরে ওইদিন জঙ্গি আহসানউল্লাহ কাজলের রাজধানীর মেরুল বাড্ডার বাসা থেকে প্রস্তুতি নিয়ে বঙ্গবন্ধু এভিনিউতে গিয়ে আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে গ্রেনেড হামলা চালানো হয়।
মুফতি হান্নানের জবানবন্দীর সমর্থনে রাষ্ট্রপক্ষে ১২জন সাক্ষি ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দী দিয়েছে। তাদের দেয়া জবানবন্দী যুক্তিতর্কে গতকাল সোমবার ও আজ মঙ্গলবার উপস্থাপন সম্পন্ন করেন রাষ্ট্রপক্ষের প্রধান কৌঁসুলি।
এসব জবানবন্দীতে ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা ঘটনার ষড়যন্ত্র, পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নের বিভিন্ন তথ্য-প্রমাণ উঠে এসেছে। এছাড়াও জঙ্গি মুফতি হান্নানসহ অন্য জঙ্গিদের সিলেটের বিভিন্ন স্থানে, সিপিবির সমাবেশ, উদীচীর সমাবেশে হামলার তথ্য উঠে এসেছে। ২১ আগস্ট হামলা বাস্তবায়নে বিভিন্ন পর্যায়ে জড়িতদের তথ্য উঠে এসেছে।
মুফতি হান্নানসহ ১২ আসামী এ মামলায় ফৌজদারী কার্যবিধির ১৬৪ ধারায় জবানবন্দি পেশ করেছে। এর মধ্যে মুফতি হান্নান ও মাওলানা মঈনউদ্দিন ওরফে মুফতি মঈন ওরফে খাজা ওরফে আবু জান্দাল ওরফে মাসুম বিল্লাহ’র জবানবন্দী রাষ্ট্রপক্ষ যুক্তিতর্কে উপস্থাপন করেছে।
সৈয়দ রেজাউর রহমান বলেন, এ মামলায় রাষ্ট্রপক্ষে মোট ৫১১ জনকে সাক্ষি করা হয়েছে। এর মধ্যে মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা (আইও) সিআইডির জ্যেষ্ঠ বিশেষ পুলিশ সুপার আব্দুল কাহার আকন্দসহ ২২৫ জনের সাক্ষ্য দিয়েছেন। আসামীপক্ষেও ২০ জন সাফাই সাক্ষ্য দিয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষ এসব সাক্ষ্য জেরা করেছে।
আসামীপক্ষের কোন কোন সাক্ষ্যকে জেরায় তাদের বিরুদ্ধে গিয়েছে বলে দাবি করেন সৈয়দ রেজাউর রহমান। ২১ আগস্টের ওই নৃশংস হামলায় পৃথক দুটি মামলায় মোট আসামী ৫২ জন।
প্রধান কোঁসুলিকে যুক্তিতর্ক পেশে আরো সহায়তা করছেন আইনজীবী মোশররফ হোসেন কাজল, আকরাম উদ্দিন শ্যামল, ফারহানা রেজা, মো. আমিনুর রহমান, আবুল হাসনাত ও আশরাফ হোসেন।
আসামীপক্ষে আইনজীবী আব্দুল সোবহান তরফদারসহ অন্যান্যরাও আদালতে উপস্থিত ছিলেন। ২১ আগস্ট গ্রেনেড হামলা মামলায় গত ২৩ অক্টোবর থেকে রাষ্ট্রপক্ষে যুক্তিতর্ক শুরু হয়।
বিএনপি-জামায়াতের জোট সরকারের আমলে ২০০৪ সালের ২১ আগস্ট আওয়ামী লীগের এক সন্ত্রাসবিরোধী সমাবেশে ভয়াবহ গ্রেনেড হামলার ঘটনা ঘটে। ওই নৃশংস হামলায় ২৪ জন নিহত ও নেতকর্মী-আইনজীবী-সাংবাদিকসহ পাঁচ শতাধিক লোক আহত হয়। নিহতদের মধ্যে ছিলেন তৎকালীন মহিলা আওয়ামী লীগের সভানেত্রী প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের স্ত্রী আইভি রহমান।
সেই সময়ের বিরোধী দলীয় নেতা ও বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং আওয়ামী লীগের প্রথম সারির অন্যান্য নেতা এই গ্রেনেড হামলা থেকে বেঁচে যান। এতে অল্পের জন্য শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচে গেলেও গ্রেনেডের প্রচন্ড শব্দে তার শ্রবণশক্তি ক্ষতিগ্রস্থ হয়।