২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতের নিট মুনাফা ৫৭ দশমকি ৫ শতাংশ কমেছে। শুধু তাই নয়, সম্পদের বিপরীতে আয়-হার ৪০ বেসিস পয়েন্ট কমে শূন্য দশমকি ৩ শতাংশে এবং মূলধনের বিপরীতে আয়-হার ৬শ বেসিস পয়েন্ট কমে ৪ দশমকি ৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের ‘ফাইন্যান্সিয়াল স্ট্যাবিলিটি রিপোর্ট-২০১৮’-তে এই তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।
মঙ্গলবার বাংলাদেশ ব্যাংকের জাহাঙ্গীর আলম কনফারেন্স হলে গভর্নর ফজলে কবির রিপোর্টটির মোড়ক উন্মোচন করেন।
ওই রিপোর্টে উল্লেখ করা হয়েছে, সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের তারল্য পরিস্থিতি ২০১৮ সালে তুলনামূলক চাপের মুখে ছিল। বছর শেষে আগাম-আমানত অনুপাত বেড়ে ৭৭ দশমকি ৬ শতাংশে উন্নীত হলেও বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরি পলিসিতে নির্ধারিত সীমার মধ্যেই ছিল। এই সময়ে কলমানি হারে মিশ্র প্রবণতা পরিলক্ষিত হয়, যা ডিসেম্বর ২০১৮-তে দাঁড়ায় ৪ দশমকি ১ শতাংশ।
রিপোর্টটিতে বলা হয়, ব্যাংকিং খাতে ২০১৮ সালে মোট শ্রেণিকৃত ঋণের হার ছিল ১০ দশমকি ৩ শতাংশ এবং নিট শ্রেণিকৃত ঋণের (রক্ষিত প্রভিশন সমন্বয়ের পর) হার ২ দশমকি ২ শতাংশ ছিল। বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর মোট শ্রেণিকৃত ঋণের হার ৬০ বেসিস পয়েন্ট বেড়ে ৫ দশমকি ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে।
ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি
রিপোর্টটিতে উল্লেখ করা হয়, ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতের ঝুঁকি সহনীয় মাত্রায় ছিল। সার্বিক ঝুঁকি পরিমাপক নির্দেশক সামান্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ব্যাংকিং খাতের মোট ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের মধ্যে ঋণঝুঁকির পরিমাণ ছিল ৮৮ শতাংশ। করপোরেট প্রতিষ্ঠানসমূহের ক্রেডিট রেটিং অধিকাংশ ক্ষেত্রে স্থিতিশীল ছিল এবং ব্যাংকিং খাতে সুদের হার, মুদ্রা বিনিময় হার, ইকুইটি মূল্য এবং তারল্যের ওপর স্ট্রেস টেস্টের অভিঘাত সহনক্ষম ছিল।
ব্যাংকিং খাতের কর্মদক্ষতা
রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৮ সালের সমাপনান্তে ব্যাংকিং খাতের সম্পদ ১১ দশমকি ৫ শতাংশ বেড়েছে। ঋণ ও আগাম ১৪ দশমকি ১ শতাংশ এবং আমানত ১০ দশমকি ৫ শতাংশ বেড়েছে। ২০১৮ সালে ব্যাংকিং খাতে মূলধন ও ঝুঁকিভিত্তিক সম্পদের অনুপাত কিছুটা কমে ১০ দশমকি ৫ শতাংশে দাঁড়িয়েছে, যা আবশ্যকীয় ন্যূনতম হার (১০ শতাংশ) অপেক্ষা বেশি।
বৈদেশিক মুদ্রা বাজার
২০১৮ সালে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারের স্থিতিশীলতা সহনীয় পর্যায়ে ছিল। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার মূল্যমান হ্রাস পেয়েছে। মূল্যমানের হিসেবে আমদানি ঋণপত্র খোলা ২০১৭ সাল অপেক্ষা কমলেও নিষ্পত্তি ৭ দশমকি ৮ বিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাওয়ায় ২০১৮ সালে বৈদেশিক মুদ্রা বাজারে চাপ সৃষ্টি হয়েছে।
রিপোর্টে বলা হয়, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতি সার্বিকভাবে স্থিতিশীল ছিল। প্রকৃত জিডিপি প্রবৃদ্ধির হার ৭ দশমকি ৯ শতাংশে উন্নীত হয়েছে যা পূর্ববর্তী অর্থবছরে ৭.৩ শতাংশ ছিল। ২০১৮ সাল সমাপনান্তে বার্ষিক গড় মূল্যস্ফীতি ছিল ৫ দশমকি ৫ শতাংশ এবং বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভের স্থিতি পূর্ববর্তী বছরের তুলনায় কিছুটা কমে ৩২ বিলিয়ন ডলারে দাঁড়িয়েছে।
আলোচ্য অর্থবছরে রফতানি বাণিজ্য এবং ওয়েজ আর্নার’স রেমিট্যান্স যথাক্রমে ৬ দশমকি ৪ ও ১৭ দশমকি ৩ শতাংশ বাড়লেও আমদানি বাণিজ্য ২৫ দশমিক ২ শতাংশ বেড়ে যাওয়ায় চলতি হিসাবের ঘাটতি ৯ দশমকি ৮ বিলিয়ন ডলারে (যা জিডিপির ৩ দশমকি ৬ শতাংশ) দাঁড়িয়েছে। চলতি হিসাবের ঘাটতি উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় সামগ্রিক ব্যালেন্স অব পেমেন্টে ঋণাত্মক প্রবণতা দেখা দেয়।
অনুষ্ঠানে ব্যাংকিং খাতে পুঞ্জীভূত মন্দ ঋণ (খেলাপি) কমাতে ব্যাংকারদের সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশ দিয়েছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির।
ফজলে কবির বলেন, ‘বৈশ্বিক শ্লথ প্রবৃদ্ধির হার ও নানামুখী ঝুঁকি থাকার পরও নিম্নমুখী মুদ্রাস্ফীতি, রেমিট্যান্স ও রপ্তানি প্রবৃদ্ধি এবং আর্থিক খাত নিয়ন্ত্রক প্রতিষ্ঠানগুলোর প্রবৃদ্ধি সহায়ক নীতিমালার পাশাপাশি শক্তিশালী রাজস্ব ব্যবস্থাপনার ফলে বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনৈতিক পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল রয়েছে।’
তিনি বলেন, ২০১৮ সালে সার্বিকভাবে ব্যাংকিং খাতের মূলধন পর্যাপ্ততা ও তারল্য ন্যূনতম আবশ্যকীয় হারের চেয়ে বেশি ছিল।
ফজলে কবির দেশের প্রবৃদ্ধির ধারা অব্যাহত রাখতে ঋণ ও আমানতের সুদের হার এক অঙ্কে নামিয়ে আনতে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহীদের প্রতি আহ্বান জানান।