বাংলাদেশের সমাজ ক্রমশ অসহিষ্ণু হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে আশুলিয়ায় শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা এবং নড়াইলের সাম্প্রদায়িক ঘটনায় ১৭ জন বিশিষ্ট নাগরিক উদ্বেগ প্রকাশ করে বিবৃতি দিয়েছেন।
বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মব্যবসায়ীদের অপ-তৎপরতার কারণে সমাজ বিভক্ত হচ্ছে ও সাম্প্রদায়িকতার বিস্তার ঘটছে। জামাত-হেফাজত চক্র এবং প্রশাসনের একাংশের প্ররোচনায় ও প্রশ্রয়ে বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িকতার অতল গহ্বরে হারিয়ে যেতে উপক্রম হয়েছে ।
ঢাকার আশুলিয়ায় স্কুল ছাত্রীকে ইভটিজিংয়ের প্রতিবাদ করায় উৎপল কুমার নামে একজন শিক্ষককে পিটিয়ে হত্যা করে এক বখাটে তরুণ।’
এতে আরও বলা হয়, ‘গণমাধ্যম সূত্রে আমরা আরো জানতে পেরেছি যে গত ১৮ জুন সাম্প্রদায়িক উসকানির অভিযোগ তুলে আবারো শিক্ষক লাঞ্ছনার ঘটনা ঘটেছে। নড়াইলের মির্জাপুর ইউনাইটেড ডিগ্রি কলেজের ছাত্র রাহুল দেব ভারতের বিজেপির বহিষ্কৃত নেত্রী নূপুর শর্মাকে প্রণাম জানিয়ে গত ১৭ জুন ফেসবুকে ‘প্রণাম নিও বস নূপুর শর্মা’ জয় শ্রী রাম’ ক্যাপশন দেয় বলে অভিযোগ করা হয়েছে। ১৮ জুন সকালে বহিরাগতদের প্ররোচনায় কলেজের একাংশের ছাত্রদের মধ্যে উত্তেজনা ছড়িয়ে পড়ে। একপর্যায়ে তা নিয়ন্ত্রণের জন্য পুলিশের সহায়তা চান ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাস। কলেজে পুলিশ এসে অভিযুক্ত রাহুলকে নিয়ে যেতে চাইলে ছাত্ররা বাধা দেয়।পরিস্থিতি এমন দাঁড়ায় ছাত্রদের দাবীর মুখে পুলিশ শুধুমাত্র হিন্দু সম্প্রদায়ের মানুষ হবার কারণে অধ্যক্ষ স্বপন কুমার বিশ্বাসকে এবং রাহুল দেবকে গলায় জুতার মালা পড়িয়ে থানায় নিয়ে যায়।
রাহুল দেব যদি ফেসবুক এ ধরণের কোন মন্তব্য করে থাকে কবে আমরা তার নিন্দা জানাই। এর জন্য পুলিশ আইন আনুগত্য ব্যবস্থা নিতে পারে।কিন্তু কলেজ অধ্যক্ষের গলায় জুতার মালা না খুলে জুতার মালা সমেত পুলিশ কোন আইন বা বিধিতে থানায় নিয়ে যায় তা আমাদের বিস্মিত ও ক্ষুব্ধ করেছে।স্মরণকালে শিক্ষকের গলায় জুতার মালা পরানোর মত ঘটনা আমরা প্রত্যক্ষ্য করিনি।শিক্ষা ও সামাজিক মূল্যবোধ কোন স্তরে নেমে গেছে তা ভেবে আমরা আতঙ্কিত।সাম্প্রদায়িকতা কিভাবে আমাদের সমাজকে ধর্মের ভিত্তিতে বিভাজিত করেছে তা দেখে আমরা দিশেহারা।’
ঢাকার আশুলিয়ার ঘটনা সম্পর্কে বিবৃতিতে বলা হয়, ‘গতকাল জনৈক ছাত্রের প্রহারে শিক্ষক উৎপল কুমারের মৃত্যুর ঘটনা যে প্রশ্নের সামনে আমাদের দাঁড় করায় তা হলো- আর কি থাকলো আমাদের।
চলমান এই সাম্প্রদায়িক ঘটনা কি প্রামাণ করেনা যে আমরা ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছে গেছি!
মুক্তিযুদ্ধের অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ আজ সাম্প্রদায়িকতার ছোবলে ক্ষতবিক্ষত। মানবিক মর্যাদা ভুলুন্ঠিত। সামাজিক মর্যাদা অদৃশ্য। কোথায় চলেছে বাংলাদেশ।’
সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কঠোর হস্তে দমনের আহ্বান জানিয়ে বিশিষ্ট নাগরিকরা বলেন, ‘আমরা সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলার স্বপ্ন বাস্তবায়নে সাম্প্রদায়িক শক্তিকে কঠোর হস্তে দমন করুন। মুক্তিযুদ্ধের চার মূলনীতির আলোকে শিক্ষা, প্রশাসন সহ রাষ্ট্রের সকল কার্য সাধনের প্রতিষ্ঠানগুলো ঢেলে সাজানো এখন সময়ের দাবী।
আর বিলম্ব নয় মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ পথ হারাবার আগেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য সরকারের প্রতি আহ্বান জানাই।’
বিবৃতিতে স্বাক্ষর করেছেন হাসান ইমাম, অনুপম সেন, সেলিনা হোসেন, রামেন্দু মজুমদার, সারোওয়ার আলী, ফেরদৌসী মজুমদার, আবেদ খান, আবদুস সেলিম, লায়লা হাসান, মফিদুল হক, শাহরিয়ার কবীর, মুনতাসির মামুন, হারুণ হাবীব, শফি আহমেদ, শিমূল ইউসুফ, সারা যাকের ও নাসির উদ্দীন ইউসুফ ।