২১ শে ফেব্রুয়ারী বাজেট অধিবেশনে পূর্ব পাকিস্তান গণপরিষদে বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্রভাষা করার দাবি নিয়ে যেতে ছাত্র জনতা যখন উন্মুখ, তখনই পূর্ব বাংলায় সভা সমাবশে নিষিদ্ধ করে সরকার। জারি করে ১৪৪ ধারা। আরোপিত ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা নিয়ে বৈঠক হয় সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের।
১৯৫২’র ২৭ জানুয়ারি পাকিস্তানের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী খাজা নাজিমুদ্দিনের বক্তৃতার প্রতিবাদে ২৯ জানুয়ারি প্রতিবাদ সভা এবং ৩০ জানুয়ারি ঢাকায় ছাত্র ধর্মঘট হয়।
সেদিন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আমতলায় সমবেত হয়ে ৪ ফেব্রুয়ারি ধর্মঘট ও প্রতিবাদ সভার সিদ্ধান্ত নেয় ছাত্র নেতৃবৃন্দ। ৩১ জানুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের লাইব্রেরী হলে অনুষ্ঠিত সভায় মওলানা ভাসানীর নেতৃত্বে ৪০ সদস্যের ‘সর্বদলীয় কেন্দ্রীয় রাষ্ট্রভাষা কর্মপরিষদ’ গঠিত হয়।
পরিষদ ২১ ফেব্রুয়ারি হরতাল, সমাবেশ ও মিছিলের বিস্তারিত পরিকল্পনা গ্রহণ করে। ভাষা সংগ্রামী কামাল লোহানী বলেন,‘ প্রথমে পরিষদের বৈঠকে ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করা হবে না বলা হয়। তবে পরিষদের ছাত্র প্রতিনিধিরা যারা ছিলেন তারা বললেন, এই সময়ে পিছিয়ে গেলে চলবে না। ১৪৪ ধারা ভঙ্গ করতে হবে।’
সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ৪ ফেব্রুয়ারি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এবং অন্যান্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ছাত্ররা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনে এসে জড়ো হয়। সমাবেশ থেকে আরবি লিপিতে বাংলা লেখার প্রস্তাবের প্রতিবাদ এবং বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে গ্রহণের দাবি ওঠে। সমাবেশ শেষে বের হয় বিশাল বিক্ষোভ মিছিল।
ভাষা সংগ্রামী হালিমা খাতুন জানান, ছাত্ররাই সিদ্ধান্ত নিলো ১৪৪ ধারা ভাঙবোই-ভাঙবো। ঢাকা হল, এস.এম হলে মিটিং হলো। আমতলার মিটিংয়ে গেলাম। ঠিক হলো পুলিশের চোখ এড়াতে সবাই এক সঙ্গে বের না হয়ে ছেলেরা ১০ জন করে, আর মেয়েরা ৪ জন করে ছোট ছোট ভাগে বের হবে।’
২০ ফেব্রুয়ারি সরকার এক মাসের জন্য সভা, সমাবেশ ও মিছিল নিষিদ্ধ করে ১৪৪ ধারা জারি করে। ঐদিন রাতে সর্বদলীয় রাষ্ট্রভাষা সংগ্রাম পরিষদের বৈঠকে ২১ ফেব্রুয়ারির জন্য পুর্বনিধারিত কর্মসূচি পালনের সিদ্ধান্ত হয। ভাষা সংগ্রামী আহমদ রফিক জানান,‘ ঘোড়ার গাড়িতে মাইক লাগিয়ে সরকার ঘোষণা দিলো ১৪৪ ধারা জারি হয়েছে। ঢাকার ম্যাজিস্ট্রেটের নির্দেশে আগামী এক মাসের মধ্যে সকল সভা-সমাবেশ নিষিদ্ধ।’