চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

রোগি প্রতি ডাক্তারের সময় বনাম ১০ হাজার নতুন ডাক্তার নিয়োগ

এ বছর ডিসেম্বর মাসের মধ্যেই দেশে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগ দেয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। স্বাস্থ্যমন্ত্রী মোহাম্মদ নাসিম জানিয়েছেন, ওই নিয়োগের অর্ধেক দেয়া হবে আগামী তিন মাসের মধ্যে। রোববার ঢাকায় বাংলাদেশ হেলথ রিপোর্টার্স ফোরামের সঙ্গে এক অনুষ্ঠানে স্বাস্থ্যমন্ত্রী এ কথা বলেন। গত বছর অাগস্টেও বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে ১০ হাজার চিকিৎসক নিয়োগের কথা বলেছিলেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী। তবে এবার তিনি সুনির্দিষ্ট সময়ের কথা বললেন। বাংলাদেশের চিকিৎসা সেবা নিয়ে অনেক প্রশ্ন আছে মানুষের মনে। সরকারি ডাক্তাররা গ্রামাঞ্চলে যেতে চান না। নিতান্ত চাকরি বাঁচাতে গেলেও তারা ঠিকমতো রোগি দেখেন না এবং সময়মতো স্বাস্থ্যেকেন্দ্রে উপস্থিতও থাকেন না বলে অভিযোগ আছে। রোগিদের চিকিৎসায় বাংলাদেশের চিকিৎসকেরা গড়ে যে সময় দেন সেটি এক মিনিটও নয়। আর তাতে কতোটুকুই বা রোগ নির্ণয় আর চিকিৎসা সম্ভব। তবু ডাক্তাররা হয়তো যুক্তি দেখাবেন সময় বেশি দিলে বেশি রোগি দেখতে পারবেন না। কিন্তু চিত্রটি সম্পূর্ণ বিপরীত। গ্রামের কোনো কোনো স্বাস্থ্য কেন্দ্রে ডাক্তারই থাকেন না। ফলে রোগিদের বাধ্য হয়ে অন্যত্র চলে আসতে হয়। ব্রিটিশ মেডিকেল জার্নালের এক জরিপে জানা যায়, বাংলাদেশে রোগি প্রতি গড়ে মোটে ৪৮ সেকেন্ড সময় দেয়া হয়। মিনিটের কাটায়ও পৌছায় না চিকিৎসকের সময়। রোগি দেখায় সময় দেয়ার ক্ষেত্রে পাকিস্তান ও ভারত বাংলাদেশ থেকে এগিয়ে। সবচেয়ে বেশি সময় দেয়া ডাক্তারের দেশ সুইডেন। তারা রোগি প্রতি গড়ে বাইশ মিনিট সময় দেয়। আর এই দেশে এক মিনিটও মেলে না কোনো রোগির জন্য। ফলে সুচিকিৎসা দূরের কথা প্রাথমিক চিকিৎসা সেবাটুকুও পায় না দেশের জনগণ। এ বিষয়ে সরকারের সীমাবদ্ধতা হচ্ছে বাংলাদেশে রোগির তুলনায় ডাক্তারের সংখ্যা কম। সরকার এই বিষয়ে নজর দিচ্ছে এটি একটি সুখবর। সঙ্গে সঙ্গে এটিও মনে রাখতে হবে শুধু নিয়োগ দিলেই হবে না। ডাক্তারদের তাদের নির্ধারিত স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগিদের যথেষ্ট সময় দিতে হবে। বিশেষ বিসিএসের মাধ্যমে এই চিকিৎসকদের নিয়োগ দিয়ে গ্রামাঞ্চলের স্বাস্থ্য সেবা কেন্দ্রগুলোতে তাদের পদায়ন করা হবে বলে জানান মন্ত্রী। জনবল ঘাটতিকে স্বাস্থ্য খাতের প্রধান সমস্যা হিসেবে চিহ্নিত করে তিনি বলেন, আমরা যদি ১০ হাজার চিকিৎসক পদায়ন করতে পারি তাহলে গ্রামে ডাক্তারের আর অভাব হবে না।গ্রামে চিকিৎসকদের উপস্থিতি নিশ্চিত করতে আগেও এ ধরনের উদ্যোগ সফল হয়নি। ২০০৯ সালে আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার পর চার হাজারের বেশি চিকিৎসককে অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হয়। পরে ২০১৪ সালে আরও প্রায় ছয় হাজার চিকিৎসক নিয়োগ হয় পিএসসির মাধ্যমে। বাংলাদেশের উন্নয়নের গতিধারা অব্যাহত রাখতে হলে স্বাস্থ্যখাতকেও এগিয়ে নিতে হবে। এর কোনো বিকল্প নেই। সরকারের নতুন ভাবে ১০ হাজার ডাক্তার নিয়োগ একটি শুভ উদ্যোগ। এটি বাস্তবায়ন করে সরকার তাদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী জনগণের দোর গোড়ায় স্বাস্থ্যসেবা পৌঁছে দেয়ার কার্যকর উদ্যোগ হাতে নেয়ায় তাদের অভিনন্দন। তবে, এটি যেনো অপরাপর উদ্যোগগুলোর মত মাঠে মারা না যায় সেদিকে সরকারে দৃষ্টি দেয়া প্রয়োজন।