করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে যেদিন দেশে সর্বোচ্চ মৃত্যুর (১১৯ জন) রেকর্ডের খবর পেয়ে শঙ্কিত হয়ে পড়েছে পুরো দেশের মানুষ, সেদিনই আরেক ঘটনায় অবাক বিস্ময়ে থমকে গেছে তারা। ঘটনাটা হলো শরীয়তপুর জেলার সদর উপজেলার আঙ্গারিয়া ইউনিয়নের দাঁদপুর নতুন হাটের। সেখানে সাগর সরদার নামের এক ব্যক্তি বিয়ের পর স্বাস্ব্যবিধি ভেঙে হেলিকপ্টর করে নতুন বউ এনেছে বাড়িতে। এখানেই ঘটনার শেষ নয়, সেই বউ আর হেলিকপ্টার দেখতে জমা হয় হাজার হাজার মানুষ। যাদের বেশির ভাগের মুখেই ছিল না কোনো মাস্ক। শেষ পর্যন্ত সেখানে হস্তক্ষেপ করতে হয় প্রশাসনকে। বিয়ের আয়োজকদের অর্ধলাখ টাকা জরিমানা করে ভ্রাম্যমাণ আদালত।
আমরা আগেও দেখেছি, অনেকেই শখের বসে হেলিকপ্টারে বিয়ে করতে যান, বউ নিয়ে আসেন। কেউ যান হাতি বা ঘোড়ায় চড়ে। খুব অস্বাভাবিক কোনো ঘটনা নয় এটা। কিন্তু অনেকেই পরিবেশ-পরিস্থিতি ভুলে যান। নিজের সুবিধার দিকে তাকাতে গিয়ে সামষ্টিকের জন্য বড় ক্ষতির সুযোগ করে দেন। শরীয়তপুরের এই ঘটনাও তেমনই। হয়তো বিয়ের আয়োজকদের সামষ্টিক ক্ষতির বিষয়টি মাথাতেই আসেনি! আবার গ্রামের বহু মানুষের কাছে হেলিকপ্টার এক বিরল বস্তু। সেটা দেখার লোভ ছোট-বড় অনেকেই সামলাতে পারে না। এটাও হতে পারে; হয়তো সাধারণ মানুষকে নিয়ন্ত্রণ করতে গিয়েও পারেনি বরপক্ষ।
এই ঘটনায় আমরা শুধু সাগর সরদার বা তার পরিবারকেই দোষারোপ করছি না। এটাকে উদাহরণ হিসেবে দেখছি। কেননা আমরা জানি, এমন ঘটনা আরও ঘটছে। তা হয়তো অন্যভাবে? অন্য কোনো রূপে? হয়তো তা থেকে যাচ্ছে প্রশাসন কিংবা গণমাধ্যমের চোখের আড়ালে! যাদের বেশিরভাগেরই কোনো জবাবদিহিতা বা শাস্তির মুখে পড়তে হচ্ছে না। আর তাতেই ঘটছে পুনরাবৃত্তি।
কিন্তু সময় এখন পাল্টে গেছে। এখন শুধু নিজেকে নিয়ে, নিজের পরিবার বা ঘরকে নিরাপদে রাখার সুযোগ সীমিত হয়ে গেছে। শুধু নিজেকে ভালো রেখে ভালো থাকার দিন শেষ। করোনাভাইরাস মানুষ নতুন করে অনেক কিছুই দেখিয়েছে। শিখিয়েছে নতুন নতুন সব ধারনা, চিন্তা আর পরিকল্পনা। যার মূল কেন্দ্রে পুরো পৃথিবী আর মানুষ।
আমরা মনে করি, এখন যে পরিস্থিতি; তাতে ব্যক্তির সুবিধার চেয়ে সমাজের সার্বিক স্বার্থ বা ভালো-মন্দ নিয়ে আগে ভাবতে হবে। সে জন্য অনেকক্ষেত্রে ব্যক্তি মানুষকে ত্যাগ স্বীকার করতে হবে। আমাদের কাণ্ডজ্ঞান বিবেচনায় নিয়ে কাজ করতে হবে। এমন কিছুই করা যাবে না, যাতে পুরো সমাজ, দেশ ক্ষতির মুখে পড়ে।