অসাম্প্রদায়িক ধর্মনিরপেক্ষ আদর্শের ভিত্তিতেই আওয়ামী মুসলিম লীগ হতে আওয়ামী লীগে রূপ নিয়েছিল দলটি। ১৯৭১ সালের মহান মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব দিয়েছিল দলটি। আওয়ামী মুসলিম লীগ,আওয়ামী হিন্দু লীগ,আওয়ামী খ্রিস্টান লীগ ও আওয়ামী বৌদ্ধ লীগ এমন ধর্মভিত্তিক রাজনৈতিক দল গঠন যে সঠিক নয়। তার ভিত্তিতে সঠিকতায় ফিরে আসতেই গঠিত হয়েছিল আওয়ামী মুসলিম লীগ হতে আওয়ামী লীগ।কেমন হবে এ দলটির নেতাকর্মীদের আদর্শিক নৈতিক অবস্থান?নিশ্চয়ই অসাম্প্রদায়িকতা ও ধর্মনিরপেক্ষতার পক্ষে।আওয়ামী লীগের কোন নেতাকর্মী নিশ্চয়ই পরধর্ম বিদ্বেষী সাম্প্রদায়িক হতে পারেনা।প্রতিটি রাজনৈতিক দলেরই উচিত তাদের নেতাকর্মীদের আদর্শতাড়িত মানদন্ড অনুযায়ী গড়ে তোলা। আওয়ামী লীগ কি তা করতে পেরেছে?পারলে সুনাম গঞ্জের শাল্লায় আওয়ামী লীগের অঙ্গসহযোগী সংগঠনের নেতা কিভাবে সনাতন ধর্মাবলম্বীদের উপর হামলা চালালো?পক্ষ নিলো হেফাজত নেতা মামুনুল হকের।যে মামুনুল হক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভাস্কর্যও বুড়িগঙ্গায় ফেলে দেয়ার হুমকি দিয়েছিল।যেখানে মামুনুল হকের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর কথা। তা না করে কেন এই পক্ষাবলম্বন?হেফাজত ইসলাম অত্যন্ত সুকৌশলে কি দলটিকে আওয়ামী মুসলিম লীগের দিকে ঠেলে দিচ্ছেনা?
তেলে জলে যেমন মিশ খায়না সাম্প্রদায়িকতার সাথে তেমন অসাম্প্রদায়িকতাও মিশ খেতে পারেনা।পারেনা আওয়ামী লীগের কোন নেতা হেফাজত, জামাতের মতো আচরণ করতে পারেনা।এটা আওয়ামী লীগ, আওয়ামী মুসলিম লীগ নয়।তাই পারেনা কেউ আওয়ামী মুসলিম লীগের আচরণ করতে।কারন আওয়ামী মুসলিম লীগ অনেক আগেই বিলুপ্ত হয়ে গেছে।এই দলটি এখন কোন ধর্মভিত্তিক দল নয়।তবে কেন হেফাজতে ইসলামের উগ্র ধর্মান্ধতার প্রতি নতজানুতা? মামুনুল হক বঙ্গবন্ধুর ভাস্কর্য বুড়িগঙ্গায় ফেলার হুমকি দিয়েও বহাল তবিয়তে।আর তার বিরুদ্ধে ফেসবুকে সামান্য একটি স্ট্যাটাস দেয়ায় তার পুরো সম্প্রদায়ই হামলার শিকার হল।জুমন দাসকে কারাগারে যেতে হল।আর তার প্রাণের নিরাপত্তার জন্য তার কারাগারে থাকাটাই নিরাপদ মনে করছে প্রশাসন।ইতোমধ্যেই দেশব্যাপী নানা ইস্যুতে সাম্প্রদায়িক অপশক্তি মাথাচারা দিয়ে উঠেছে।২০১২ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর কক্সবাজারের রামুতে বৌদ্ধদের উপর হামলা হয়েছিল।২০১৩ সালের ২ নভেম্বর পাবনার সাথিয়ায় হিন্দুপল্লী বনগ্রামে হামলা হয়।২০১৪ সালের ২৭ এপ্রিল কুমিল্লার হোমনা উপজেলার বাঘসীতারাম পুর গ্রামে আক্রমন করা হয়।কেন আওয়ামী লীগের শাসনামলে এমন সাম্প্রদায়িক উৎপাত?
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধের মিত্র ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর আগমন উপলক্ষে দেশব্যাপী হেফাজতে ইসলাম নাশকতা শুরু করলো।অবোঝ শিশুদের হাতে তারা ধর্মের নামে লাঠি তুলে দিল।মসজিদ গুলোকে তারা গড়ে তুললো সন্ত্রাসী হামলার মিলন কেন্দ্র।এখান হতেই তারা সংগঠিত হয় ও বিভিন্ন হামলা ভাঙচুর চালায়।ব্রাহ্মনবাড়িয়াতে প্রেসক্লাব,পাঠাগার,সাংস্কৃতিক সংগঠন ও বিভিন্ন সরকারী অফিস আদালতে হেফাজত কর্মীরা ভাঙচুর চালালো।তারা হামলা চালালো ট্রেনে,বাসে, ট্রাকে ও অটো,সিএনজিতে।অথচ এর উস্কানী দাতা মামুনুল হকের নেতৃত্বেই হেফাজত নেতারা একসময় ভারতে গিয়ে নরেন্দ্র মোদীর সাথে সাক্ষাত করেছিল।সোশ্যাল মিডিয়ায় নরেন্দ্র মোদীর সাথে তাদের সাক্ষাতের ছবি প্রচার হচ্ছে।আজকে যারা তার নির্দেশনায় শ্লোগান দিচ্ছেন,মোদীর দুই গালে জুতা মারো তালে তালে। এই সাক্ষাতকে কী বলবেন তারা?
ভারতের পেঁয়াজ কি এসব আন্দোলনকারীরা খায়নি।কেন তারা সেদিন বললোনা,এই পেঁয়াজ আমরা খাবোনা।করোনার ভেকসিন কি তারা নেয়নি?কেন তারা বললনা ভারতের ভেকসিন আমরা নেবোনা।এদেশের অনেক মানুষ চিকিৎসার জন্য ভারতের মাদ্রাজ,বেঙ্গালুর ও চেন্নাইয়ে যায়।হেফাজত কর্মীরা কেন এসবের বিরুদ্ধে আন্দোলন গড়ে তুললোনা?কেন তারা বললোনা আমরা চিকিৎসার জন্য বিধর্মী মোদীর দেশ ভারতে যাবোনা।মোদী কি পাকিস্তান,তুরস্ক ও সৌদী আরব সহ অন্যান্য মুসলিম দেশ সফরে যাননি।কই সেদেশেতো এ নিয়ে কোন আন্দোলন হলোনা।হেফাজতের ধর্মীয় উস্কানিতে অনেক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীও সাম্প্রদায়িক আচরণ করে চলেছে।তারাও এসব মিছিলে অংশ নিয়ে আওয়ামী লীগকে ফের নিয়ে যেতে চাইছে আওয়ামী মুসলিম লীগে।নইলে এই দলের পরিচয়দানকারী অনেক নেতাকর্মীও কেন হেফাজতের সাম্প্রদায়িকতার পক্ষে?কেউ কেউ হেফাজতের পক্ষ নিয়ে দলত্যাগও করছে। তবে কি দলটির মধ্যে আদর্শিকতা শিক্ষার কোন ব্যবস্থা নেই?
দল ক্ষমতায় থাকা স্বত্তেও কিশোরগঞ্জ আওয়ামী লীগ কার্যালয় ভেঙ্গে তছনছ করে দিলো হেফাজত কর্মীরা।ব্রাহ্মন বাড়িয়ায় আওয়ামী লীগ নেতার বাড়ি ভাঙচুর করলো।এ নিয়ে দলটি কেন তা রুখে দাঁড়াতে পারলোনা?এতিম খানার শিশুদেরকে ধর্মের নামে উস্কে দিলো রেলস্টেশনে আগুন দিতে।মসজিদ হতে মুসল্লীদের উস্কে দিয়ে তাদের হাতে তুলে দিলো লাঠি। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদেরকেও ধর্মের নামে বিভ্রান্ত করে চলেছে তারা।সেজন্যই কিছু লোক আওয়ামী মুসলিম লীগের মতো আচরণ করে চলেছে।হেফাজত কার মিত্র?একসময় তারা আজ যার আগমনকে ঘিরে আন্দোলন করছে তার সাথে ভারতে গিয়ে দেখা করেছে।তবে কি হেফাজত মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাকে উস্কে দিয়ে ভারতের হিন্দু সাম্প্রদায়িকতাকে জাগিয়ে দিচ্ছেনা?এখন যদি ভারতের হিন্দুরা সেদেশের মুসলিমদের উপর নির্যাতন চালায়।এর দায় কে নেবে?বাংলাদেশের সাথে যদি তারা সকল ধরনের কূটনৈতিক ও ব্যবসায়িক সম্পর্ক ছিন্ন করে এর দায় নেবে কে?যদি বাংলাদেশের প্রধান মন্ত্রী ভারতে গেলে সেদেশের হিন্দুরা প্রতিবাদ করে এর দায় কে নেবে?
এখন যদি ভারতের হিন্দুরা সেদেশে চিকিৎসার জন্য যাওয়া মুসলিমদের হাসপাতাল হতে বের করে দেয় এর দায় নেবে কে?সাম্প্রদায়িকতা যেমন অসুস্থ মানসিকতার বহির্প্রকাশ।সাম্প্রদায়িকতার সাম্প্রদায়িক জবাবও তাই।তবে হেফাজত নিশ্চয়ই একটা সুদূর প্রসারী দূরভিসন্ধিতে এসব করে বেড়াচ্ছে।তারা মূলত নরেন্দ্র মোদীর বিরোধিতা করে নরেন্দ্র মোদীকে সহযোগিতাই করে চলছে।ভারতের আসন্ন নির্বাচনে তাদের এই কর্মকান্ডকে নজীর হিসাবে তুলে ধরে মোদী হিন্দুত্ববাদী ধোঁয়া তুলে তার ভোটের পাল্লা ভারী করে নেবে।হেফাজতের উদ্দেশ্যবাজরা এটিই হয়তো ভাবছে যে ভারতে যদি হিন্দুত্ব বাদী ধোঁয়া তুলে ক্ষমতায় চলে যেতে পারে।এদেশে কেন তা সম্ভব নয়?এক্ষেত্রে ভারতের মুসলমানদের নিরাপত্তা নিয়ে তাদের কোন ভাবনা নেই।ভাবনা ভারতে মুসলমানরা আরও নির্যাতিত হোক।এতে করে এদেশে তাদের মুসলিম সাম্প্রদায়িকতাকে আরও উস্কে দিতে কাজে লাগবে।আর মুসলমানরা এক হয়ে গেলে তাদের ক্ষমতার গদি গ্রহন ঠেকায় কে?এমন দিবা স্বপ্নই দেখে চলছে দাঙ্গা মুখর হেফাজতের উদ্দেশ্যবাজ ও তাদের নেপথ্য মদতদানকারীরা।
উদ্দেশ্যবাজ চক্র ব্যস্ত রয়েছে ধর্মের নামে তাদের উদ্দেশ্যবাজী নিয়ে।আর অসংখ্য মানুষ লাফাচ্ছে হুজুগে।যে এতিম শিশুরা রেল স্টেশনে আগুন দিলো।কী বোঝ আছে তাদের।অনেককে দেখছি বঙ্গবন্ধুর ছবি দিয়ে ফেসবুক আইডি খুলতে আবার হেফাজতের পক্ষ নিতে।জামাত সঙ্গে বিএনপির কী হাল হয়েছে?দলটির সাংগঠনিক কোন শক্তি বলতেই নেই।অথর্ব দলটি এখন হয়তো ভাবছে হেফাজতকে দিয়েই ক্ষমতায় চলে যাবে!এগুলো দিবাস্বপ্ন ও রাতের অসুস্থ স্বপ্ন মাত্র।শাপলা চত্বরে যখন হেফাজতরা একত্রিত হয়েছিলো তখনও বিএনপি তার নেতাকর্মীদের হেফাজতের পাশে দাঁড়াতে নির্দেশনা দিয়েছিল।ফলাফল কী দাঁড়ালো?এই অথর্ব দলটি কি বারবার বেকুবের মতো আচরণ করে চলছেনা?নরেন্দ্র মোদী কিন্তু ভোটের রাজনীতিতে এগিয়েই গেলেন। হেফাজতী তান্ডবে মনে হয়না বিএনপির কোন লাভ হবে।
স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তি অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে এসে মুসলিম সাম্প্রদায়িকতার বিক্ষোভে তিনি নিজ দেশে হিন্দু সাম্প্রদায়িকতা সৃষ্টিতে সফলই হবেন।তিনি বাংলাদেশ সফরে এসে চলে গেলেন সাতক্ষীরার শ্যামনগরের যশোরেশ্বরী মন্দির ও গোপাল গঞ্জের ওড়াকান্দি গ্রামের মতুয়া মন্দির পরিদর্শনে।মতুয়াদের আদি আশ্রম গোপাল গঞ্জের ওড়াকান্দিতে।১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর বেশির ভাগ মতুয়া ভক্ত পশ্চিম ভঙ্গে চলে যান। পশ্চিম ভঙ্গের মোট ভোটের ১৮% হলো মতুয়া ভোট।পশ্চিম বঙ্গের উত্তর ২৪ পরগণা, দক্ষিন ২৪ পরগনা,নদীয়া,মালদহ,মুর্শিদাবাদ সহ আরও কয়েকটি এলাকায় রয়েছে মতুয়াদের শক্ত অবস্থান। মতুয়াদের সাথে রয়েছে তৃণমূলের সুসম্পর্ক। বিজেপি এ সম্পর্ক ভেঙ্গে নিজেদের পক্ষে নিতে চাইছে। তাই নরেন্দ মোদী এদেশে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তীতে এসেও ছুটে গেলেন মতুয়া মন্দিরে। মতুয়া ধর্মটি সৃষ্টি হয়েছে এদেশেই।বাংলাদেশ সফরে এসে নরেন্দ্র মোদীর ষোলো আনাই লাভ হলো। এতে তিনি নিজ হিন্দুত্ববাদী হুজুগ তুলতে সক্ষম হবেন। হেফাজতের বিক্ষোভ ও ভাঙচুর তাকে এই সুযোগ করে দিলো। আরও সম্ভাবনা সৃষ্টি হলো মতুয়া সম্প্রদায়ের ভোট সংগ্রহে। কিন্তু হেফাজত ও মদতদানকারীদের এতে কোন লাভ হবে বলে মনে হয়না। কেবল দেশের ক্ষতি, নিজের ক্ষতি ও ধর্মেরই ক্ষতি করলো তারা।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)