চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

হিন্দি সিনেমা দেখে ডাকাতি চক্র গড়ে তোলে রানা

হিন্দি সিনেমা ‘বস’ দেখে অনুপ্রাণিত হয়ে সংঘবদ্ধ ডাকাতি চক্র গড়ে তোলে রাজধানীর বংশাল এলাকার বাসীন্দা এ কে এম রানা। তিনি গোয়েন্দা পুলিশের সহকারী কমিশনার (এসি) পরিচয়ে বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করা দলে প্রধান।

চক্রটি মূলত পুরান ঢাকা কেন্দ্রিক ব্যবসায়ীদের তথ্য সংগ্রহ করে। ওই এলাকার বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকদের মাধ্যমে দেশের বিভিন্ন এলাকা থেকে আসা ব্যবসায়ীদের বিষয়ে তথ্য নিত। এরপর সেসব ব্যবসায়ীদের টার্গেট করে রাজধানীর অন্য এলাকা থেকে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে সর্বস্ব কেড়ে নিত।

সোমবার রাতে পুরান ঢাকার ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে ডিবি পরিচয়ে ডাকাতি চক্রের প্রধান রানাসহ আটজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই)।

গ্রেপ্তার অন্যরা হলেন- ডিবির পরিদর্শক পরিচয়দানকারী জাবেদ আহমেদ ওরফে বাবু (৩৭) ও সোহাগ খন্দকার (৩১), উপ-পরিদর্শক পরিচয়দানকারী নাজমুল হোসেন (২৪) ও দেলোয়ার হোসেন (৫০), কনস্টেবল পরিচয়দানকারী আসাদুজ্জামান (৩৫), বুলবুল আহমেদ (৩২), হারুন ওরফে হিরা (৩২)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ৪টি মোটরসাইকেল, ৩টি ওয়ার্লেস, একজোড়া হ্যান্ডকাফ, খেলনা পিস্তল ২টি, চাপাতি ১টি, ১টি চাকু উদ্ধার করা হয়।

মঙ্গলবার রাজধানীর ধানমন্ডিতে পিবিআই সদর দপ্তরে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা জানান পিবিআই’র প্রধান ডিআইজি বনজ কুমার মজুমদার।

তিনি বলেন, গত ২৫ অক্টোবর বিকেলর পল্টন এলাকা থেকে খিলক্ষেত এলাকায় নিজ বাসায় যাওয়ার জন্য এক বন্ধুসহ সুপ্রভাত গাড়িতে উঠেন মোস্তাফিজুর রহমান। বাসটি নর্দ্দা যাওয়ার পর কয়েকজন ব্যক্তি বাসটির সামনে ২ টি মোটর সাইকেল দিয়ে ব্যারিকেড দিয়ে বাসটি থামায়। এরপর ওই ব্যক্তিরা বাসে ওঠে, তাদের ১ জনের কাছে ওয়ার্লেস সেট ও ২ জনের পরনে ডিবি লেখা জ্যাকেট ছিল। তারা মোস্তাফিজুর ও তার বন্ধুকে বলে ‘আমরা ডিবির লোক, আমাদের কাছে তথ্য আছে তোরা ইয়াবা খাস, তোদের কাছে ইয়াবা আছে।’ এই কথা বলে মোস্তাফিজুর রহমান এবং তার বন্ধুকে জোরপূর্বক বাস থেকে নামায়।

এরপর মোস্তাফিজ ও তার বন্ধুকে চড়-থাপ্পর, কিল-ঘুষি মারতে থাকে এবং মোস্তাফিজের পকেটে থাকা নগদ ৪২ হাজার টাকা ও ২টি মোবাইল ফোন সেট এবং ভিকটিমের বন্ধুর কাছে থাকা নগদ ১৫ হাজার টাকা ও ১টি মোবাইল ফোন সেট জোরপূর্বক ছিনিয়ে নেয়। ভিকটিমের বন্ধুর কাছে ইয়াবা আছে বলে তার বন্ধুকে সার্চ করে কিছু না পেয়ে তাকে ছেড়ে দেয়। পরে মোস্তাফিজের ব্যাগে ইয়াবা আছে বলে তাকে জোর করে মোটর সাইকেলে উঠায়। পরে তাকে থানায় নিয়ে মামলা দেওয়ার কথা বলে গুলশান, বাড্ডা, হাতিরঝিল এলাকায় ঘুরতে থাকে।

রাত সাড়ে তিনটার দিকে ভিকটিমকে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানাধীন বিএসটিআই মোড়ে এনে বলে ‘তোকে আজকের মত ছেড়ে দিলাম। তুই আর ইয়াবা খাবি না।’ তখন তারা ভিকটিমের কাছ থেকে টানাটানি করে তার ব্যাগটি নেয়ার চেষ্টা করে, ব্যাগে ১৩ লাখ টাকা ছিল। একপর্যায়ে মোস্তাফিজ বুঝতে পারেন তারা পুলিশ না, তখন ডাকাত ডাকাত বলে চিৎকার করলে আশেপাশের লোকজন ছুটে আসে। এরপর আসামীরা ভিকটিমের ব্যাগটি ছেড়ে দিয়ে মোটর সাইকেল যোগে দ্রুত পালিয়ে যায়।

পরে মোস্তাফিজুর রহমান বাদী হয়ে তেজগাঁও শিল্পাঞ্চল থানায় মামলা (নং-৩১) দায়ের করেন। মামলাটি পিবিআই তদন্ত শুরু করলে একপর্যায়ে আসল তথ্য বেরিয়ে আসে।

বনজ মজুমদার বলেন, পুরান ঢাকার ব্যবসায়ী প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিকরা এই চক্রের সোর্স। তারা তথ্য দিত, কোন ব্যবসায়ী কত টাকা নিয়ে ফেরত যাচ্ছে। তথ্য অনুযায়ী ভিক্টোরিয়া পার্কের সামনে থেকে অনুসরন করত। এরপর অন্য এলাকায় যাওয়ার পর কখনো মোটরসাইকেল বা কখনো মাইক্রোবাসে ডিবি পরিচয়ে তুলে নিয়ে সবকিছু কেড়ে নিত। এরপর ডাকাতির থেকে প্রাপ্ত অর্থের ৪০ ভাগ সেসব সোর্সকে দিয়ে দিতো।

এ চক্রের আরো দুইজন সদস্য পলাতক রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এমন আরো দুইটি চক্রের বিষয়ে তথ্য পাওয়া গেছে। তাদের বিষয়ে তথ্য যাচাই-বাছাই করা হচ্ছে, আশা করি শীঘ্রই তাদেরকে আইনের আওতায় নিয়ে আসা সম্ভব হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে পিবিআই প্রধান বলেন, আসামিদের নামে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় একাধিক মামলা আছে, আসামি হারুন অস্ত্র ও হত্যা মামলায় তেরো বছর জেল খেটে বের হয়ে আবার অপরাধের সঙ্গে জড়ায়।