বহু ভাষাভাষীর দেশ ভারতে হিন্দিকে জাতীয় ভাষা করার প্রস্তাব দিয়ে তীব্র ক্ষোভের মুখে পড়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ। তার এই প্রস্তাবে ফুঁসে উঠেছেন দেশটির বিভিন্ন অঞ্চলের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষ। প্রতিবাদে মাঠে নেমেছেন অনেকে।
গত শনিবার ‘হিন্দি দিবস-২০১৯’ উপলক্ষে এক টুইটে অমিত শাহ হিন্দিকে জাতীয় ভাষার প্রস্তাব দিয়ে এই ভাষার মাধ্যমেই ভারতকে একসূত্রে বাঁধার আহ্বান জানান।
অমিত শাহ বলেন, বহু ভাষাভাষীর দেশ ভারতে প্রতিটি ভাষার নিজস্ব গুরুত্ব থাকলেও বিশ্বব্যাপী পরিচিতির জন্য একটি অভিন্ন ভাষার প্রয়োজন। দেশের সর্বাধিক কথিত ভাষা হলো হিন্দি। আর এই ভাষা দেশের মানুষের মধ্যে একতা তৈরির ক্ষমতা রাখে।
এরপর থেকেই তার এই বক্তব্যের সমালোচনা হতে থাকে ভারতজুড়ে। এরমধ্যে পশ্চিমবঙ্গে এবং দক্ষিণাঞ্চলের রাজনীতিবিদসহ সাধারণ মানুষ এই বক্তব্যে তীব্র প্রতিবাদ করেন।
এনডিটিভি জানায়, বুধবার দক্ষিণের সুপারস্টার রজনীকান্ত অমিত শাহ’র এই প্রস্তাবের বিরোধিতা করে বলেন, কোনও ভাষাই জোর করে চাপিয়ে দেয়া যাবে না। একটি সাধারণ ভাষা একটি দেশের উন্নয়নের জন্য ভাল, তবে দুর্ভাগ্যক্রমে ভারতে কোনও একটি নির্দিষ্ট ভাষাকে সাধারণ ভাষা হিসাবে গণ্য করা সম্ভব নয়।
চেন্নাই বিমানবন্দরে জনপ্রিয় এই অভিনেতা সাংবাদিকদের বলেন, আপনি যদি জোর করে হিন্দি চাপিয়ে দেন, তা শুধু তামিলনাড়ু নয়, দক্ষিণের কোনো রাজ্যই তা গ্রহণ করবে না, এমনকি উত্তরের অনেক রাজ্যও তা গ্রহণ করবে না।
অমিত শাহ’র প্রস্তাবের প্রতিবাদে সোচ্চার হন আরেক অভিনেতা-রাজনীতিবিদ কমল হাসান। তিনি বলেন, ভারতের গণতান্ত্রিক পরিকাঠামোয় এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া থেকে বিরত থাকা উচিত। তিনি নরেন্দ্র মোদি সরকারকে ভাষা-যুদ্ধের হুঁশিয়ারি জানিয়ে বলেন, এটা ভারত বা তামিলনাডু কারও কাম্য নয়।
অমিত শাহ’র এই প্রস্তাবে অবশ্য প্রথম প্রতিবাদ জানিয়ে সোচ্চার হন কেরালার মুখ্যমন্ত্রী পিনারাই বিজয়ন। এক টুইট বার্তায় তিনি জানান, ‘‘হিন্দি ভাষার মাধ্যমেই দেশকে ঐক্যবদ্ধ করে তোলা সম্ভব’’ এই দাবি একেবারেই অযৌক্তিক।
দক্ষিণের পাশাপাশি পশ্চিমবঙ্গেও এই প্রস্তাবের বিরুদ্ধে জোরালো অবস্থান লক্ষ্য করা গেছে। পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় টুইটারে লিখেছেন, আমাদের উচিত সব ভাষা ও সংস্কৃতিকে সমানভাবে সম্মান দেওয়া। আমরা অনেক ভাষাই শিখতে পারি। কিন্তু মাতৃভাষাকে ভোলা উচিত নয়।
এছাড়া বিভিন্ন স্থানে প্রতিবাদ সমাবেশের আয়োজন করা হয়। সোমবার কলকাতার কলেজ স্ট্রিটের কফি হাউসের সামনে আয়োজিত প্রতিবাদ সমাবেশ থেকে অমিত শাহ’র কুশপুত্তলিকা দাহ করা হয়।
এদিকে পশ্চিম বাংলার বিভিন্ন ক্ষেত্রের ৫০ জন বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বও রাজ্যের মানুষকে এর বিরুদ্ধে প্রতিবাদে গর্জে ওঠার আহ্বান জানান। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে তারা ভাষাকে তাদের জীবন থেকে সরিয়ে দেওয়ার যেকোনও প্রয়াসের বিরুদ্ধে প্রতিবাদে সামিল হতে সকলকে অনুরোধ জানান।
আর আগে গত জুনে নতুন শিক্ষানীতি-২০১৯ এর খসড়ার পর দেশজুড়ে তীব্র বিরোধিতার মুখোমুখি হতে হয়েছিলো মোদি সরকারকে। বিশেষ করে দক্ষিণ ভারতের রাজ্যগুলো থেকে চরম প্রতিবাদ আসে। মূলত দেশের সমস্ত স্কুলে হিন্দি বাধ্যতামূলক করার সুপারিশ করে কেন্দ্রীয় সরকার। আর তখনই ক্ষোভে ফেটে পড়ে দক্ষিণের রাজ্যগুলো।
পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও এই পদক্ষেপের বিরোধিতা করেন এবং বলেন, প্রত্যেক রাজ্যেরই আলাদা আলাদা চরিত্র এবং আলাদা আলাদা ভাষা রয়েছে। আঞ্চলিক ভাষাগুলোকেই অগ্রাধিকার দিতে হবে। আঞ্চলিক ভাষার প্রতি আমার সম্পূর্ণ সমর্থন আছে। মাতৃভাষাকে এবং তারপরে অন্যান্য ভাষাগুলোকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
বিভিন্ন পক্ষের প্রবল চাপের মুখে প্রস্তাবিত নতুন শিক্ষানীতির খসড়ায় বড় ধরনের পরিবর্তন করতে বাধ্য হয় মোদি সরকার। তবে জাতীয় হিন্দি দিবসে আবারও একক ভাষার কথা বলে আগের ক্ষোভকে ফের উস্কে দিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী অমিত শাহ।