চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

‘হাসিনা: অ্যা ডটার’স টেল’ কিছু অজানা সত্য

সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশনের আমন্ত্রণে বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স-এ গিয়ে দেখার সুযোগ হলো ডকুড্রামা ‘হাসিনা: অ্যা ডটার’স টেল’ এর প্রিমিয়ার শো। ভালো লাগলো অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত থেকে শুরু করে মন্ত্রিপরিষদের অনেক সদস্য, গণমাধ্যমের অনেক বন্ধু, লেখক, সাংবাদিক অনেককেই সিনেপ্লক্স-এ দেখে। অত্যন্ত মার্জিত ও শিল্পসম্মত আমন্ত্রণপত্র থেকে শুরু করে বসুন্ধরা সিনেপ্লেক্স এর একাংশের সজ্জাও এই প্রামাণ্য চলচ্চিত্রটিকে ঘিরে পাল্টে গেছে। যারা দেখতে গিয়েছেন তারা ভালো কিছুর আশা নিয়েই গিয়েছেন। একেবারে দর্শকপূর্ণ সিনেমা হলে পিনপতন নীরবতায় সত্যিই সে আশার অনেকখানিই পূরণ হয়েছে। আমি একবাক্যেই বলবো ভালো একটি নির্মাণ।

ক্যামেরার কাজ যথেষ্টই ভালো। বেশিরভাগ ক্লোজ ট্রিটমেন্টের ওপর আলোছায়ার খেলাগুলো চোখে পড়ার মতো। স্বাভাবিক ও অকৃত্রিম দৃশ্যপট ধারণের উদ্দেশ্য মাথায় রেখেই যে কাজগুলো করা হয়েছে তা বোঝা যায়। সিনেমাটোগ্রাফার সাদিক আহমেদ ধন্যবাদ পাবার দাবি রাখেন। সব মিলিয়ে সেন্টার ফর রিসার্চ এন্ড ইনফরমেশন সিআরআই অন্যতম উদ্যোক্তা রেদওয়ান মুজিব সিদ্দিক ববি ও বিদ্যুৎ ও জ্বালানী প্রতিমন্ত্রী নসরুল হামিদ চৌধুরীকে ধন্যবাদ অত্যন্ত মার্জিত ও বাহুল্যমুক্ত গ্রহণযোগ্য একটি ডকুড্রামার মাধ্যমে জাতির সামনে ইতিহাসের চরম সত্যগুলো উপস্থাপন করার জন্য।

‘হাসিনা: অ্যা ডটার’স টেল’ এর একটি বিশেষত্বের কথা না বললেই নয়, এখানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও তার বোন শেখ রেহানার সাবলীল বয়ানে এমন কিছু সত্য উঠে এসেছে যে সুক্ষ্ম সত্যগুলো অনেকেরই অজানা। পঁচাত্তরের ১৫ আগস্টের কালো অধ্যায়কে মূল পটভূমি করে চলচ্চিত্রটি শুরু হলেও এর সঙ্গে আগে-পিছের ঘটনার যে পরম্পরা তা এসেছে অত্যন্ত নিখুঁতভাবে। বিশেষ করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হওয়ার পর টানা ছয় বছর দিল্লিতে তার দুই কন্যার দুঃসহ সময়টি আবিস্কার করা গেছে অল্প কথার বিবরণীতে। বোঝা গেছে, জাতির জীবনে নেমে আসা দুঃসময়ে কে কোথায় কীভাবে জাতির জনকের উত্তরসুরীদের গ্রহণ করেছেন।

নির্মাণের সার্থকতা এখানেই যে, দর্শক ঘটনার সঙ্গে হাঁটতে পেরেছেন বিশেষ মনোযোগে। প্রধানমন্ত্রীর আটরপৌরে ও সাদাসিধে জীবনবোধ, জন্মভূমির প্রতি দায় আর সরকারে থেকেও সহজ সাবলীল জীবনাচার চলচ্চিত্রের গভীরতাকে বাড়িয়ে দিয়েছে। সবই ঘটনা পরম্পরা। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন দর্শনের সঙ্গে প্রধামন্ত্রী শেখ হাসিনার জীবন দর্শনের একটি সাজুয্যও আবিস্কার করা যায়, চলচ্চিত্রটির মধ্য দিয়ে। তার মমত্ব সম্পর্কে অনেকেই জানেন, কিন্তু দুইবোন টুঙ্গিপাড়া তাদের শেকড়টিকে যে এত গভীরভাবে লালন করেন, তা প্রথম জানা গেল।

আমরা যারা ষাটোর্ধ্ব, তারা ঊনসত্তরের অভ্যুত্থান, অসহযোগ আন্দোলন থেকে শুরু করে স্বাধীনতা সংগ্রামের সকল প্রেক্ষাপটই আমাদের স্মৃতিতে গাঁথা, কিন্তু তার পরের প্রজন্মের কাছে এই ইতিহাসের অনেক কিছু অজানা। বিশেষ করে আমাদের স্বাধীকার থেকে স্বাধীনতা সংগ্রামের দীর্ঘ পথ পরিক্রমায় জাতির জনক ও তার পরিবারের যে অবদান তা যেন নতুনভাবে মূর্ত হয়ে উঠেছে এই ডকুড্রামায়। শুধু দলীয় দৃষ্টিভঙ্গি থেকেই নয়, মানবিক জায়গা থেকেও এটি নতুন প্রজন্মের জন্য অপরিহার্য এক বিষয়।

যদিও ডকুড্রামার কন্টেন্টটিই ইতিহাসের এক আকর, এখানে নির্মাণ বিবেচনা বড় ব্যাপার নয়। যদি অতিরিক্ত রং দিয়ে, অতিরঞ্জিত বক্তব্য দিয়ে কিছু করতে চাইতেন হয়তো তা এমন সাবলীল ও গ্রহণযোগ্য থাকত না। পুরোপুরি স্বাধীন একটি জায়গা থেকে শুধু প্রধানমন্ত্রীর দুই কন্যার জবানিকেই আকর হিসেবে নেয়ার কারণে কাজটি হয়েছে পুরোপুরি প্রভাবমুক্ত।

এটি কোনোভাবেই ব্যক্তির ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র নয়, মূলত ঘটনা পরম্পরা। এর সঙ্গে যথাপোযুক্ত সুর, কিছু শব্দের খেলা আর আবহসঙ্গীতে দর্শক ছবির উপস্থিত বিষয়কে যতটা ধরতে পেরেছে ততটাই গভীরভাবে একাত্ম হতে পেরেছে চলচ্চিত্রে যে দৃশ্যপটগুলো নেই, সেগুলোর সঙ্গেও। সবাই যেন আলোচ্য সময়ের ভেতর দিয়েই চলতে পেরেছে। ঘটনার বাস্তবতা তুলে ধরার ক্ষেত্রে এই নির্মাণকে বেশ দক্ষতাপূর্ণ বলা যাবে।