যুবলীগের ঢাকা মহানগর দক্ষিণের বহিষ্কৃত সভাপতি ইসমাইল চৌধুরী সম্রাট এখন জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট হাসপাতালে স্থিতিশীল অবস্থায় আছেন। সম্রাটকে সিসিইউতে (করোনারি কেয়ার ইউনিট) স্থানান্তর করার পর তার শয্যাপাশে থাকা নিয়ে দ্বিতীয় স্ত্রী শারমীন ও ছোট ভাই বাদলের মধ্যে সেখানে বাকবিতণ্ডা হয়। পরে পুলিশের নির্দেশে তারা হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান।
মঙ্গলবার দুপুরে রাজধানীর শেরে বাংলানগরের জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতলে এ ঘটনা ঘটে।
সিসিইউ সংশ্লিষ্টরা চ্যানেল আই অনলাইনকে জানান, যুবলীগ নেতা সম্রাটকে সিসিইউতে স্থানান্তরের পর সেখানে তার দ্বিতীয় স্ত্রী শারমীন চৌধুরী এবং তার ভাই বাদল উপস্থিত হন। এসময় তারা সম্রাটের শয্যাপাশে কে থাকবে দুজনে তর্ক শুরু করে।
বাকবিতণ্ডার বিষয়টি পুলিশ দেখতে পেয়ে তাদের কাছে গিয়ে জানাতে চায় কোন রোগীর লোক তারা? তারা সম্রাটের নাম না বলে বেড নম্বর ১২ বলেন। কিন্তু তখনও সম্রাটকে ওই বেডে নেয়া হয়নি। খানিকক্ষণ পরে পুলিশ বিষয়টি বুঝতে পরে দ্রুত তাদের হাসপাতাল ছেড়ে বেড়িয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।
পরে পুলিশের নির্দেশে তারা দুজনেই হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে যান। বিষয়টি নিয়ে জানতে চাইলে সম্রাটের দ্বিতীয় স্ত্রী শারমীন চৌধুরীর সঙ্গে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
সিসিইউ সংশ্লিষ্ট একজন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এই ঘটনার পর সম্রাটকে সিসিইউ-১ এর বি-১২ শয্যায় স্থানান্তর করা হয়। সেখনে তার শয্যাপাশে কারা কর্তৃপক্ষ, পুলিশ এবং গোয়েন্দা বাহিনীর সদস্যরা আছে।
মঙ্গলবার বুকে ব্যথা অনুভব করলে সকাল সাড়ে ৭টায় সম্রাটকে কারাগার থেকে প্রথমে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেয়া হয়। এরপর ঢামেক চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালে নিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ।
হৃদরোগ হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, সাবেক এই যুবলীগ নেতাকে সকাল সাড়ে ৮টার দিকে হৃদরোগ হাসপাতালে নিয়ে আসে কারা কর্তৃপক্ষ। এসময় শেরেবাংলা নগর থানার পুলিশ সদস্যরা সেখনে উপস্থিত ছিলেন। এসময় হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ সম্রাটকে হাসপাতালে ভর্তি করে করোনারি কেয়ার ইউনিটে (সিসিইউ) তিন নম্বর শয্যায় স্থানান্তর করে।
ভর্তির পর হাসপাতালের পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান, সার্জারি বিভাগের ডা. আশরাফুল হক সিয়াম এবং কার্ডিওলজি বিভাগের ডা. ফাদিয়া আফরোজ ঝুমার সমন্বয়ে ৩ সদস্যের প্রাথমিক একটি মেডিকেল বোর্ড করা হয়।
বেলা ১২টার দিকে সম্রাটের বুকের এক্সরে করতে পারমর্শ দেন চিকিৎসকরা। তবে তার এক্সরে হৃদরোগ হাসপাতালের কোন মেশিনে করা হয়নি। বাইরের একটি বেসরকারি হাসপাতাল থেকে পোর্টেবল মেশিন এনে তার বুকের এক্সরে করা হয়।
দুপুরে বেলা আড়াইটার দিকে একজন চিকিৎসক পুনরায় সম্রাটের ইসিজি পরীক্ষা করে। তখনও তার ইসিজি রিপোর্ট স্বাভাবিক আসে। কিন্তু তখন সম্রাট বলেন, আমার বুকে ব্যথা হচ্ছে। কোথায় কিভাবে ব্যথা হচ্ছে সেটি তিনি বলতে পারছেন না। তখন চিকিৎসক সম্রাটকে বলেন, আমরা আপনার হৃদযন্ত্রে কোন সমস্যা দেখাতে পাচ্ছিনা। যদি আপনি বুকে ব্যাথার কথা বলেন, তাহলে আমরা ওষুধ স্প্রে করবো। কিন্তু আপনার ব্যথা না থাকলে স্প্রে করলে কিন্তু সমস্যা হবে। তবে শেষ পর্যন্ত স্প্রে করেননি ডাক্তাররা।
পরিচয় প্রকাশে অনিচ্ছুক সিসিইউতে কর্মরত একজন চিকিৎসক চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, সম্রাটের হৃদযন্ত্রে ১৯৯৮ সালে বাল্ব প্রতিস্থাপন করা হয়েছে। তার যদি বাল্বে কোন সমস্যা হয়, তাহলে তার শ্বাসকষ্ট হবে, শরীরে ঘাম হবে, রক্তের ঘনত্ব বাড়বে। কিন্তু আমরা পরীক্ষা করে এ ধরনের কোন উপসর্গ পাই নি। তাছাড়া তিনি স্বাভাবিক কথা বলতে পারছেন এবং হাসপাতাল থেকে সরবরাহ করা তরল খাবারও স্বাভাবিক ভাবে খেতে পারছেন।
এসময় জাতীয় হৃদরোগ ইনস্টটিউিট ও হাসপাতালে পরিচালক অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমানের নেতৃত্বে একটি সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় পরিচালককে প্রধান করে ৭ সদস্যের একটি মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়। বোর্ডের সদস্যরা সম্রাটকে ২৪ ঘন্টা পর্যবেক্ষণে রাখার পরামর্শ দেন। এছাড়া কয়েকটি পরীক্ষার ফলফল পেতে সময় লাগবে। তাই সব মিলিয়ে বুধবার তার ২৪ ঘন্টার পর্যবেক্ষণ ফলাফল এবং বাকী পরীক্ষার রিপোর্ট পর্যালোচনা করে তাকে হাসপাতালে রেখে চিকিৎসা দিতে হবে নাকি ছেড়ে দেয়া হবে সেই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।
এর পরপরই হাসপাতালে উপস্থিত সাংবাদিকদের অধ্যাপক ডা. আফজালুর রহমান জানান, ইসমাইল চৌধুরী সম্রাটের অবস্থা স্বাভাবিক। তার শারীরিক অবস্থা পর্যবেক্ষণে এবং প্রয়োজনীয় চিকিৎসায় সাত সদস্যের মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। বেশকিছু জরুরী পরীক্ষা করানো হয়েছে, যার রিপোর্ট ভালো। তবুও তাকে ২৪ ঘণ্টার জন্য অবজারভেশনে রাখতে হচ্ছে। কারণ যেকোনো হৃদরোগের রোগী এলে নিয়মানুযায়ী পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
তিনি বলেন, ‘আজ সরকারি ছুটির দিন সত্ত্বেও চিকিৎসকরা সময় দিচ্ছেন। মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। আগামীকাল সকালে মেডিকেল বোর্ড সভা অনুষ্ঠিত হবে। আসল কথা হলো সম্রাট এখন স্থিতিশীল। সব রিপোর্টও ভালো।’