চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

অবশেষে ন্যায় বিচার পেয়েছেন পাকিস্তানী সেই তরুণী

তিন বছর কঠোর লড়াইয়ের পর অবশেষে ন্যায় বিচার পেলেন পাকিস্তানের আইনের ছাত্রী খাদিজা সিদ্দিকী। তার ওপর বর্বর হামলা চালানো সহপাঠীর ৫ বছরের সাজা বহাল রেখে বুধবার রায় দিয়েছে আদালত।

বিবিসি জানায়, খাদিজা এখন লন্ডনে আইন বিষয়ে পড়ছেন। ঘটনাটি ২০১৬ সালের। সে বছরের ৩ মে প্রকাশ্যে লাহোরের রাস্তায় খাদিজার ওপর হামলা চালায় তার সহপাঠী শাহ হুসাইন। হুসাইন তার সাবেক প্রেমিক। ছোট বোনকে স্কুল থেকে আনতে যান খাদিজা। সেসময় তার ওপর হামলা হয়। ২৩টি কোপ পড়ে তার শরীরে। সৃষ্টি হয় গভীর ক্ষত। তবে অলৌকিকভাবে বেঁচে যান খাদিজা।

পাকিস্তানে আইন পড়ার সময় সহপাঠী শাহ হুসাইনের সঙ্গে সম্পর্ক হয় তার। তবে তা বেশিদিন স্থায়ী হয়নি। খাদিজার অভিযোগ হুসাইন ছিল হতাশ প্রেমিক, যার ছিল ভয়ানক সহিংস রূপ এবং সে তাকে ব্ল্যাকমেইল করতো।

খাদিজা গত বছর বিবিসিকে বলেন, হুসাইন ছিল এমন লোক যে নারীকে পায়ের জুতা হিসেবে বিবেচনা করতো। যে ভাবতো নারীকে যা কিছু খুশি করা যাবে, আবার কোন অভিযোগও দিতে পারবে না।

তিনি বলেন, যখন হুসাইন আমার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম হ্যাক করে, আমি তখন তার সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করি। এরপর থেকেই সে আমাকে হুমকি দিতে থাকে। আমার আত্মীয় এবং বন্ধুদের ফোন দিতে থাকে যেন তার সঙ্গে দেখা করি। তা না হলে আমার ভালো হবে না।

সম্পর্ক ছিন্নের সাত মাস পর তার ওপর নৃশংসভাবে হামলা চালায় হুসাইন। মৃত্যুর মুখ থেকে ফিরে আসে খাদিজা। চুপ না থেকে ন্যায়বিচারের জন্য আইনি লড়াইয়ের সিদ্ধান্ত নেন।

কিন্তু তার আইনি লড়াইয়ের পথ মোটেও মসৃণ ছিল না। পদে পদে ছিল প্রতিকূলতা এমন একটি দেশে জন্ম তার যেখানে নারীদের ওপর এ ধরনের “অনার কিলিং’’ অহরহ ঘটে থাকে। আবার ন্যায় বিচারও সবসময় হয় না।

তবে তার ক্ষেত্রে সাহস হারাননি তিনি। দৃঢ় মনোবল নিয়ে এগিয়ে গেছেন। শেষ পর্যন্ত তার বিজয় হয়। সাত বছরের সাজা হয় হুসাইনের। জেলেও যেতে হয় তাকে। কিন্তু পিতা প্রভাবশালী এবং আইনজীবী হওয়ায় তার সাজা কমে যায়। জেল থেকে ছাড়া পায় সে। আদালত মামলা পনুরায় তদন্তের নির্দেশ দেয়।

এরপর কঠিন পরিস্থিতির মধ্যে পড়ে খাদিজা এবং তার পরিবার। অর্থের তাকে মামলা তুলে নিতে বলা হয় বার বার। হুমকি দেয়া হয় নানা ধরনের। আমরা হতাশ হয়ে পরি। তাদের প্রস্তাব গ্রহণেরও সিদ্ধান্ত নিতে যাচ্ছিলাম।

কিন্তু আমার মধ্যে সবসময় একটা বিষয় কাজ করেছে যে তারা ক্ষমার যোগ্য নয়। তারা আমার চরিত্র নিয়েও প্রশ্ন তুলেছে। অনেকের সঙ্গে আমার সম্পর্ক-এমন অভিযোগও দিয়েছে। তারা আমাকে বোঝানোর চেষ্টা করেছে যে কোন মামলাতেই হুসাইনকে সাজা দেয়া যাবে না। 

তবে আমি সিদ্ধান্তে অনড় ছিলাম। আমার পরিবারও আমার পাশে ছিল। পরিস্থিতি পাল্টাতে শুরু করে যখন অধিকার কর্মীরা পাশে দাঁড়ান এবং ‘‘#জাস্টিস ফর খাদিজা’’, “#ফাইট লাইক খাদিজা” আওয়াজ তুলে সামাজিকভাবে প্রচারণা চালাতে থাকেন।

এই প্রচারণা আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের মনোযোগ আকর্ষণ করে। এছাড়া সুপ্রিম কোর্টের একদল তরুণ আইনজীবীও এই মামলার পক্ষে কাজ করেন।

অবশেষে ২০১৭ সালে হুসাইনের সাত বছরের জেল হয়। তবে এরপরই আদালত দুই বছরের সাজা কমিয়ে দেয়। গত জুনে লাহোর হাইকোর্ট অভিযোগ পুরো উল্টে দেয়। এ ঘটনা খাদিজার সমর্থক, পরিবারসহ অনেককে শোকাহত করে।

কোন আনুষ্ঠানিক আদেশ ছাড়াই কোর্ট তার ক্ষমতা বলে মামলা পুনরায় তদন্তের কথা বলে। তবে দীর্ঘ প্রতীক্ষার পর বুধবার নিম্ন আদালতে হুসাইনকে দেয়া পাঁচ বছরের সাজা বহাল রাখে সুপ্রিম কোর্ট।

এই রায়ে সন্তুষ্টি প্রকাশ করে খাদিজা। তিনি আদালত প্রাঙ্গনেই সাংবাদিকদের বলেন, আজকের বিজয় সকল নারীর জন্য। আজ যে দৃষ্টান্ত স্থাপন হলো তাতে প্রমাণিত হয়, আপনি যদি সত্যের পক্ষে আওয়াজ তোলেন, আপনি বিজয়ের স্বাদ পাবেনই।