একই সঙ্গে রেকর্ড আর লজ্জার হাতছানি। ২৩ রান পেলে হবেন ওয়ানডেতে দ্রুততম ১২ হাজার রান তোলা ব্যাটসম্যান। আর হারলে হবেন প্রথম ভারতীয় অধিনায়ক, যিনি টানা ছয় ওয়ানডেতে হেরেছেন! তবে টানটান ম্যাচে ভাগ্য হেসেছে বিরাট কোহলির দিকেই। ক্রিকেটের দেবতা তাকে দিলেন গৌরব, বাঁচালেন লজ্জা থেকে। হার্দিক পান্ডিয়া আর রবীন্দ্র জাদেজার বিধ্বংসী ব্যাটিংয়ের পর তৃতীয় ম্যাচে পেসারদের জ্বলে উঠার রাতে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে ১৩ রানের মান বাঁচানো জয় পেয়েছে ভারত।
তিন ম্যাচের সিরিজে শেষটি প্রথমবারের মতো আগে ব্যাট করেছিলো ভারত। টপঅর্ডারে ধসের পরও রান তুলেছিলো ৩০২। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের লড়াইয়ের পরও ২৮৯ রানে অলআউট হয়েছে অজিরা। অবশ্য এই হারের পরও ২-১’তে সিরিজ গেছে স্বাগতিকদের দিকেই।
ম্যাচের আগে দ্রুততম ১২ হাজার রানের রেকর্ড থেকে মাত্র ২৩ রান দূরে ছিলেন কোহলি। এর আগে দ্রুততম ১২ হাজার রানের রেকর্ডটা ছিলো কিংবদন্তি শচীন টেন্ডুলকারের, তিনি অবশ্য এই কীর্তি গড়েছেন ৩০০তম ইনিংসে। শচীনের চেয়ে ৫৮ ইনিংস কম খেলেই ওয়ানডের ১২ হাজারি ক্লাবে ঢুকে গেছেন কোহলি।
ভারতকে তিনশো পেরনো স্কোর এনে দেওয়ার মূল কৃতিত্বটা দুই লোয়ার মিডলঅর্ডার ব্যাটসম্যান হার্দিক পান্ডিয়া ও রবীন্দ্র জাদেজার। পুরো সিরিজের ধারাবাহিকতা ধরে রেখে শেষ ম্যাচেও ব্যর্থ ভারতীয় ওপেনাররা।
হোয়াইট ওয়াশ এড়াতে মায়াঙ্ক আগারওয়ালকে বসিয়ে শিখর ধাওয়ানের সঙ্গে ওপেনিং করতে পাঠানো হয় শুভমন গিলকে। ৩৩ রানের মোটামুটি একটা ইনিংস খেলেছেন গিল তবে তার অভিজ্ঞ সঙ্গী ধাওয়ান ফেরেন ১৬ রান করে।
দ্রুততম ১২ হাজার রানের রেকর্ড গড়ার দিনে কোহলির লড়াই ছিলো আরেক অঘটনকে এড়িয়ে যাওয়ার। ২০০৮ সালে অভিষেকের পর ১২ বছরে এই প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি পাননি ৪৩ ওয়ানডে শতকের মালিক। চেষ্টা যে ছিলো সেটা তার ৬৩ রানের ইনিংসটি দেখলেই বোঝা যায়। ভালোই খেলছিলেন, হঠাৎ করে হ্যাজেলউডের বলে উইকেটের পেছনে দিয়ে বসেন ক্যাচ। প্রথমে আম্পায়ার সাড়া দেননি, পরে রিভিউ নিয়ে ভারত অধিনায়ককে সাজঘরে ফেরত পাঠায় অস্ট্রেলিয়া।
চলতি বছরে আর মাত্র তিনটি টু-টুয়েন্টি আর একটি টেস্ট খেলার সুযোগ আছে ভারত অধিনায়কের সামনে। এই চার ম্যাচে সেঞ্চুরি না পেলে এক লজ্জাই অপেক্ষা করে আছে কোহলির সামনে। ওয়ানডে তো বটেই চলতি বছরে টি-টুয়েন্টি কিংবা টেস্টেও এখনও পর্যন্ত কোনও শতরান পাননি, বাকি চার ম্যাচেও না পেলে কোনো শতক ছাড়াই ১২ বছরের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারে প্রথমবারের মত একটা বছর শেষ করতে হবে তাকে।
কোহলি ফেরার পর দ্রুতই মড়ক নামে ভারতের ইনিংসে, একে একে ফেরেন শ্রেয়াস আয়ার ও লোকেশ রাহুলও। ১৫২ রানে নিজেদের পঞ্চম উইকেট হারায় ভারত।
নড়বড়ে ভারতের ব্যাটিংয়ে মাটি এনে দেয় ১৮ ওভারে পান্ডিয়া-জাদেজার মারদাঙ্গা ১৫০ রানের জুটি। উইকেটে এসেই পাল্টা আঘাত হেনেছেন দুজনে, অবিচ্ছিন্ন থেকে চালিয়ে গেছেন ব্যাট।
ছয়ে নেমে ৭৬ বলে ৯২ রানের দারুণ এক ব্যাটিং উপহার দিয়েছেন হার্দিক পান্ডিয়া, ৭ চারের সঙ্গে ছয়ের মার তাতে একটি। ইনিংস শেষ বলে অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে মাত্র ৮ রানের জন্য সেঞ্চুরির আক্ষেপটা থেকে যেতেই পারে।
পান্ডিয়ার সঙ্গী জাদেজা ছিলেন আরও বিধ্বংসী। ৫০ বলে ১৩২ স্ট্রাইকরেটে ৬৬ রানের ইনিংস খেলে অপরাজিত ছিলেন বাঁহাতি অলরাউন্ডার ৩ ছক্কার সঙ্গে চারের মার তাতে ৫টি।
অবশ্য অজিদেরও খানিকটা বদ্যানতা আছে ভারতের ম্যাচের জয়ের পেছনে। অভিজ্ঞ দুই পেসার মিচেল স্টার্ক ও প্যাট কামিন্সকে বসিয়ে অভিষিক্ত দুই পেসার অলরাউন্ডার শন অ্যাবট ও ক্যামেরন গ্রিনকে দিয়ে খানিকটা পরীক্ষা-নিরীক্ষা সেরেছেন অজি অধিনায়ক অ্যারন ফিঞ্চ। জবাবে ১০ ওভারে অ্যাবট খরচ করেছেন ৮৪ রান, উইকেট একটি । গ্রিনকে ৪ ওভারের পর আর বোলিংয়েই আনেননি ফিঞ্চ, এই অলরাউন্ডার খরচ করেছেন ২৭।
আগের দুই ম্যাচে মুড়ি মুড়কির মত রান তোলা অজি ব্যাটিং লাইনআপ এদিন ডেভিড ওয়ার্নের অভাবটা বেশ ভালো টের পেয়েছে। আগের ম্যাচে চোট পেয়ে ছিটকে যান ওয়ার্নার, তার জায়গায় ফিঞ্চের সঙ্গে ওপেনিং করতে পাঠানো হয় মার্নাশ লাবুশেনকে। ৭ রানেই আউট হয়ে লাবুশেন বুঝেছেন, আপাতত ওপেনিং তাকে দিয়ে হচ্ছে না।
ব্যর্থ হয়েছেন টানা দুই সেঞ্চুরিয়ান স্টিভেন স্মিথও। শেষ ম্যাচে শার্দুল ঠাকুরের বলে পেছনে ক্যাচ দিয়ে ৭ রানে ফিরেছেন ডানহাতি ব্যাটসম্যান। চারে নেমে মোজেশ হেনরিক্স ২২ রানে আউট হয়েছেন এই শার্দুলের বলেই।
ওপর প্রান্তে সঙ্গীদের আসা-যাওয়ার মিছিলে একটা প্রান্ত সামলে ৭৫ রান তোলেন অজি অধিনায়ক ফিঞ্চ। সেঞ্চুরি যখন দেখা দিতে শুরু করেছে তখনই জাদেজার এক নির্বিষ বলে অহেতুক শট খেলতে গিয়ে লং অনে ধরা পড়েন ধাওয়ানের হাতে। ১২৩ রানে চতুর্থ ও ১৫৮ রানে নিজেদের পঞ্চম উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া।
হার যখন চোখ রাঙ্গাচ্ছে তখন অ্যালেক্স ক্যারিকে নিয়ে ৫২ ও অ্যাস্টন অ্যাগারের সঙ্গে ৫৮ রানের জুটিতে ম্যাচটা ভারতের হাত থেকে প্রায় বেরই করে নিয়েছিলেন ম্যাক্সওয়েল। ৪ ছক্কা ও ৩ চারে ৩৮ বলে ৫৯ রান করে জসপ্রিত বুমরাহর বলে ম্যাক্সওয়েল বোল্ড হয়ে যখন সাজঘরে ফিরছেন তখন ৩৩ বলে মাত্র ৩৫ রান দরকার ছিলো অজিদের। বাকি তিন উইকেটে এই রান তুলতে অজিদের ব্যর্থ হওয়ার মূল কারণ অভিষিক্ত পেসার টি নটরাজন ও শার্দুল ঠাকুর। ম্যাক্সওয়েল ফেরার পর কিপ্টে বোলিংয়ে ১৩ রান আগে স্বাগতিকদের অলআউট করে মান বাঁচায় ভারত।
৫১ রানে ৩ উইকেট পেয়েছেন শার্দুল, ২ উইকেট পেয়েছেন নটরাজন। ৪৩ রানে ২উইকেট পেয়েছেন আগের দুই ম্যাচে দেদারসে রান বিলানো বুমরাহও।