প্রায় আনকোড়া কিন্তু ভীষণ শক্তিশালী এক দল নিয়ে ২০১৮ বিশ্বকাপ খেলতে রাশিয়ায় যাচ্ছে ফ্রান্স। দলে তারুণ্যের ছড়াছড়ি। অভিজ্ঞতার ঘাটতি থাকলেও ফরাসিদের শক্তি কতখানি তা বোঝাতে কেবল নামগুলোর দিকে তাকালেই চলবে- কাইলিয়ান এমবাপে, উসমানে ডেম্বেলে, পল পগবা, অ্যান্টনে গ্রিজম্যান, অলিভিয়ের জিরুদ। রাশিয়া বিশ্বকাপে অন্যতম দামি দলের তকমাটাও তাই ফ্রেঞ্চদেরই।
শুধু কী দল? ফ্রান্সের ডাগআউট থেকে কলকাঠি নাড়বেন এমন একজন, যার ভালোমতই জানা চাপ সয়ে কীভাবে বিশ্বকাপ ঘরে আনতে হয়। তিনি দিদিয়ের দেশম। ১৯৯৮ সালে অধিনায়ক দেশমের হাতেই উঠেছিল ফরাসিদের একমাত্র বিশ্বকাপ শিরোপাটি।
২০১২ সাল থেকে ফ্রান্সকে কোচিং করাচ্ছেন দেশম। ছয় বছর ধরে তরুণ দলটিকে একসুতোয় গেঁথে শিরোপার অন্যতম দাবীদার বানিয়েছেন। ২০১৬ সালে তো ইউরো প্রায় জিতেই যাচ্ছিল তার দল! শিরোপা জিততে না পারলেও সেটা থেকে শিক্ষা নিয়ে বিশ্বকাপে চমক দেখানোর অপেক্ষায় দেশমের শিষ্যরা। লক্ষ্য ছুঁতে কতটা প্রস্তুত ফ্রান্স, সেটাই জানাচ্ছেন দেশম-
এবারের ফ্রান্সকে বিশ্বকাপের অন্যতম ফেভারিট বলা হচ্ছে? আপনিও কী একমত?
দেশম: বিশ্বকাপে যতগুলো দল অংশ নেয়, সবাই চায় বিশ্বকাপ জিততে। আমরাও এর ব্যতিক্রম নই। তবে আমাদের বাস্তববাদী হতে হবে। গ্রুপে আমাদের তিন প্রতিপক্ষকেই চিনি আমরা। তাদের দিকে এক চোখ রেখে আমাদের দ্বিতীয় রাউন্ডের জন্য প্রস্তুতি নিতে হবে। এক বিষয়ে সন্দেহ নেই যে, আসরে আমরা অনেকদূর পর্যন্ত যেতে চাই। আর আমাদের সেই উচ্চাকাঙ্ক্ষাও আছে। তবে আমাদের পর্ব ধরে ধরে এগোতে হবে।
এমন কোন কোন দল আছে যারা আপনাদের উচ্চাশা ধূলিসাৎ করে দিতে পারে?
দেশম: আছে। কয়েকটা দল আছে যারা নামে, শিরোপার ভারে আন্তর্জাতিক ফুটবলে বেশ উঁচু দল। জার্মানি, স্পেন, ব্রাজিল আছে। এসব দলগুলো বড় বড় আসরে শিরোপা জিতে অভ্যস্ত। সর্বোচ্চ জায়গায় যাওয়ার মতো তাদের প্রয়োজনীয় সবগুণই আছে।
২০১৬ ইউরোতে ফ্রান্স শিরোপা জিততে পারলো না…
দেশম: সেই বিষয়টা আমাদের দলকে অনেক আশাবাদী করেছে। তবে আমাদের দলটা বেশ তরুণ। অনেকের এটা প্রথম বিশ্বকাপ। বড় একটা আসরে খেলা কিন্তু যেনতেন বিষয় নয়। আমাদের অবশ্যই প্রথম ধাপ পেরোতে হবে। এরপর দ্বিতীয় রাউন্ড। লক্ষ্য অর্জন করতে হলে আমাদের সুশৃঙ্খল হতে হবে। সঙ্গে দৃঢ় সংকল্প থাকাটাও জরুরী।
আপনি একজন বিশ্বকাজয়ী অধিনায়ক। এবার বিশ্বকাপে জাতীয় দলকেও কোচিং করাচ্ছেন। কেমন মনে হচ্ছে?
দেশম: অবশ্যই এটা দারুণ সাহায্য করছে। বিশ্বকাপজয়ী অধিনায়ক বলে কিন্তু নয়, আমি লম্বা একটা সময় পেশাদার ফুটবল খেলেছি। এটাই সাহায্য করবে। যদিও এখনকার দায়িত্বটা একটু ভিন্ন। কিন্তু খেলোয়াড় এবং তার মনস্তত্ত্ব বুঝতে আমাকে সাহায্য করবে। কারণ আমিও খেলোয়াড় ছিলাম। আমার দায়িত্ব হল যারা ফ্রান্সের হয়ে খেলবে তাদের তৈরি করা। এটা আমার জন্য সর্বোচ্চ সম্মানের কারণ আমি আমার দেশের হয়ে প্রতিনিধিত্ব করতে পারছি। এটা এক মধুর দায়িত্ব।
দেখে মনে হচ্ছে দিদিয়ের-বেনজেমা ঝামেলাটা এখনও রয়ে গেছে…
দেশম: একটা কথা বলতে চাই যে, করিমের(বেনজেমা) সঙ্গে আমার কোনো ঝামেলা নেই। আমার দায়িত্ব ছিল সেরা দল খুঁজে বের করা। এমন খেলোয়াড়দের বেছে নেয়া যাদের অন্তর্ভুক্তি দলকে লাভবান করবে। সবচেয়ে বড় বিষয় এখানে দেশের সম্মান জড়িয়ে, আর সেই বিবেচনায় আমাকে খেলোয়াড়দের দলে নিতে হয়েছে। কয়েকবছর আগে যখন সংবাদ মাধ্যমগুলো এবিষয়ে খোঁচাখুঁচি শুরু করল, তখন আমাকে নিশ্চিত করতে হয়েছে যে দলের পারফরম্যান্সে যেন কোনো প্রভাব না পড়ে। দল দারুণভাবে সাড়া দিয়েছে। আমরা ইউরোর ফাইনাল পর্যন্ত চলে গেলাম। হ্যাঁ, আমরা হেরেছি। কিন্তু ছেলেরা আমার বিশ্বাস অর্জন করেছে। মাঠ কিংবা মাঠের বাইরে, তারা পরিকল্পনা মোতাবেকই খেলেছে। তখনই আমরা সিদ্ধান্ত নিলাম যে এই দল নিয়েই আমরা এগোবো।
নতুন প্রজন্মের, নতুন খেলোয়াড়দের কীভাবে এক সূতায় গাঁথলেন?
দেশম: ছেলেদের সঙ্গে আমি আলোচনায় বিশ্বাসী। আর আমরা কখনোই একে-অন্যের উপর প্রভাব খাটাই না। মানুষ হিসেবে তাদের সবারই নিজস্ব গুণাবলি আছে। আর খেলোয়াড় হিসেবে তারা আত্মবিশ্বাসী। তাদের চালনা করাটা খুব কঠিন কিছু না। শুধু তাদের একটু পথ দেখালেই হবে।
ডেনমার্ক, পেরুর সঙ্গে অস্ট্রেলিয়ার মতো দল একই গ্রুপে। পরের পর্বে যেতে ফ্রান্সের খুব বেগ পাওয়ার কথা নয়…
দেশম: ফুটবল কখনো কাগজে কলমে খেলা হয় না। সবকিছু হাল্কাভাবে নেয়া ভীষণ বিপজ্জনক, বিশ্বকাপে তো আরও ভয়ঙ্কর। অস্ট্রেলিয়া নিয়মিতই ভালো খেলে। পেরু আলাদা মহাদেশের, আলাদা ঘরানার ফুটবল খেলে। আর ডেনমার্ক ভীষণ ভয়ঙ্কর দল। আমাদের খুব সতর্ক থাকতে হবে।
কোচ হিসেবে এটা তো আপনার দ্বিতীয় বিশ্বকাপ। সেটা কি বাড়তি চাপ?
দেশম: নাহ, বাড়তি কোনো চাপ দেখছি না। কারণ এই কাজটা করতে আমি ভালোবাসি। আর ভালোবাসাটাই আমাকে কাজে উৎসাহ যোগায়। খেলোয়াড়ি জীবনেও এটা আমাকে পথ দেখিয়েছে, এখনও দেখায়। আমি সবসময় মাথায় রাখি যে, খেলা হচ্ছে বিনোদনের জন্য আর সেখানে বিনোদনের প্রতিটি অংশই থাকা উচিত।
ইউরোর ফাইনালে হারা কতটা বেদনার ছিল?
দেশম: নিজ দেশে ফাইনাল হেরে যাওয়ার চেয়ে হতাশা আর কী হতে পারে? আমরা আমাদের দেশে বিশ্বকাপ খেলেছি, জিতেছি। তবে প্রতিপক্ষ(পর্তুগাল) দারুণ খেলেছে, আমাদের গোল করতে দেয়নি। হারটা আমাদের দারুণ এক শিক্ষা ছিল। আমরা একে ইতিবাচক ভাবেই নিয়েছি যা আমাদের রাশিয়ায় খুব সাহায্য করবে।