বিসিবির কাছে হাথুরুসিংহের পদত্যাগপত্র। এই এক লাইনেই বৃহস্পতিবার দুপুর থেকে ঝড় বয়ে যায় বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনে। খবরটা যখন ছড়িয়ে পড়ল, শুরুতে কথা বলতে চাইছিলেন না বোর্ডের কোন দায়িত্বশীল কর্মকর্তা। সন্ধ্যে নাগাদ পাওয়া গেল বিসিবি সভাপতিকেই। নাজমুল হাসান পাপন স্পষ্টই বলে দিলেন, কেউ যদি থাকতে না চায় তাকে জোর করে রাখতে চাইবে না বিসিবিও।
খবরটা ২৫ দিন পরে চাউর হলেও নাজমুল হাসানের কথায় জানা গেল চণ্ডিকা হাথুরুসিংহে বিসিবিকে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন আসলে সেই ১৫ অক্টোবর। সাউথ আফ্রিকা সিরিজের দ্বিতীয় টেস্ট চলাকালীন সময়ে। বিসিবির সঙ্গে কোন যোগাযোগ না করেই। কিন্তু কী কারণে পদত্যাগপত্র দিয়েছেন সেটা জানেন না বোর্ড সভাপতিও।
বিসিবি সভাপতি মনে করছেন পদত্যাগপত্র দেয়ার বিষয়টা আবেগজনিত কারণে হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি, ‘ইমোশনালও হতে পারে। আগেও এমন হয়েছে, তখন দুপক্ষ আলোচনা করে সমাধান করেছি। কিন্তু এবার তিনি এখনও কোন প্রকার যোগাযোগ করেননি। তাই বিষয়টা বলা মুশকিল।’
ব্যক্তিগত কার্যালয়ে বসে এরপরই বোর্ডের মনোভাবটা স্পষ্ট করেছেন নাজমুল হাসান, ‘কেউ যদি থাকতে না চায় তাকে জোর করে রাখার কোন মানে হয় না।’
হাথুরুর সকল চাওয়ায় বিসিবির সমর্থন ছিল ভালোভাবেই। তবে এবার বোর্ড যে খানিকটা বিরক্ত, তারই ইঙ্গিত যেন মিলল সভাপতির কথায়। এমনকি বিসিবি শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে আসন্ন হোম সিরিজের জন্য আপদকালীন কোচের কথাও ভাবতে শুরু করেছে বলে ইঙ্গিত মিলল।
যদি পদত্যাগপত্র গৃহীত হয়। সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা সিরিজে দলের হাল ধরবেন কে? এমন প্রশ্নে নাজমুল হাসান জানালেন, ‘সেক্ষেত্রে শ্রীলঙ্কা সিরিজে দেশিয় কাউকে নেবে বিসিবি।’ সেটা খালেদ মাহমুদ সুজন হলেও হতে পারে। সুজনের নাম নিয়ে ছুঁড়ে দেয়া সাংবাদিকদের প্রশ্নে এভাবেই আপদকালীর কোচের প্রসঙ্গে সুর মেলালের বোর্ড সভাপতি।
আপাতত হাথুরুর সঙ্গে বারবার চেষ্টা করেও যোগাযোগ করতে পারছে না বিসিবি। কোচের মোবাইলও বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। এমনিতে ১৫ তারিখের পর আসার কথা রয়েছে তার। তখন সরাসরি কথা বলেই চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নিতে চায় বিসিবি। তবে নতুন বছরের জানুয়ারির পর শ্রীলঙ্কার কোচ হওয়ার যে সম্ভাবনার কথা জানা যাচ্ছে হাথুরুকে ঘিরে, তাতে বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার অধ্যায়ের সমাপ্তির আভাসও মিলছে।
আগে গত বছর অক্টোবরেও পদত্যাগ করতে চেয়েছিলেন বাংলাদেশ ক্রিকেট ইতিহাসের অন্যতম সেরা কোচ হাথুরুসিংহে। তার সঙ্গে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের (বিসিবি) চুক্তি ২০১৯ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত। তার অধীনে বাংলাদেশ ক্রিকেটবিশ্বের নতুন পরাশক্তি হিসেবে আবির্ভূত হয়েছে। ওয়ানডে বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার পর চ্যাম্পিয়ন্স ট্রফির সেমিফাইনাল খেলেছেন মাশরাফীরা। হাথুরু প্রায়ই বলেন, ২০১৯ সালের বিশ্বকাপে এই বাংলাদেশকে দিয়ে তিনি ক্রিকেটবিশ্বকে আরেকবার চমকে দিতে চান। যাওয়ার আগে এই বাংলাদেশকে ১৯৯৬ সালের ‘শ্রীলঙ্কা’ বানিয়ে যেতে চান। তার সেই ইচ্ছার পরের ধাপটি আপাতত বড় প্রশ্ন হয়েই ঝুলে থাকল।