চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

হাথুরুসিংহে ছুটছেন, আমরা ঘুমাচ্ছি

২০১৯ বিশ্বকাপের সময় এগিয়ে আসছে। বিশ্বকাপে চোখ রেখে আমাদের সাবেক কোচ চন্ডিকা হাথুরুসিংহে রীতিমতো গা ঝাড়া দিয়ে উঠছেন। নানা পরিকল্পনায় দল গুছিয়ে নিচ্ছেন। আর আমরা? একজন ‘হেড মাস্টারের’ অনুপস্থিতিতে ‘গা ছেড়ে’ দিয়েছি!

২০ ফেব্রুয়ারি বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন বাংলাদেশ দলের সাম্প্রতিক ব্যর্থতা নিয়ে কথা বলার সময় বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উচ্চারণ করেন। তার সারাংশ করতে গেলে একটাই অর্থ দাঁড়ায়, ‘অধিক সন্ন্যাসীতে গাজন নষ্ট!’

বিসিবি সভাপতির ভাষায় কথাটা এরকম, ‘পরিকল্পনা যদি পাকাপোক্ত না হয়, যদি একেক জনের মতামত নেয়া হয়, তবে তো এমন হবে। লিডারশীপটা এখানে ছিল না। আমাদের একজন হেড কোচ লাগবে।’

নাজমুল হাসান পাপন কখনোই কোচ ছাড়া খেলতে চাননি। তার দাবি, তিনি কর্মকর্তা আর খেলোয়াড়দের কারণে হেড কোচ ছাড়া ত্রিদেশীয় সিরিজ, পরে টেস্ট এবং টি-টুয়েন্টি খেলার অনুমতি দেন। পরিণাম দেখে তিনি ‘ব্যথিত’। বিদেশে বসে ত্রিদেশীয় সিরিজের ফাইনাল দেখেছেন আর অবাক হয়েছেন।

নাজমুল হাসানের ভাষায়, ‘মনটাই ভেঙে গেছে’। তিনি কথা দিয়েছেন, দ্রুততম সময়ের মধ্যে ‘ভালো কোচ’ আনবেন। নাজমুল হাসানের প্রতি আস্থাটা রাখাই যায়। তিনি হাথুরুসিংহেকে এনেছিলেন, তার প্রতি ভরসাও রেখেছিলেন। অতীতের মতো কোচের ওপর খবরদারি করেননি। যেটুকু করেছেন, সেটুকু কোচের মত নিয়েই। এবং আমরা বিশ্বাস করতে চাই, সবটাই করেছেন বাংলাদেশ ক্রিকেটের ভালোর জন্য।

সামনে শ্রীলঙ্কার মাটিতে নিধাস ট্রফি। সেখানে ভারতের মতো দল আছে। সেই দলে আবার বিরাট কোহলি নামের একটা লোক আছে! ভয় দিচ্ছি না। পরের দেশের সিরিজটি বাংলাদেশের জন্য কতটা কঠিন হবে, তা বলতে চাইছি মাত্র। সেই কঠিন সিরিজের আগে বাংলাদেশ ‘গা ছাড়া ভাবে’র প্রস্তুতি নিতে চেয়েছিল!

বিসিবি সভাপতির ভাষায় বিষয়টি এমন, ‘সামনে বড় সফর। ওরা (কোচিং-স্টাফ) ২৪ বা ২৮ তারিখে ক্যাম্প করার কথা বলছিল। আমার কাছে মনে হয়েছে, এটা পর্যাপ্ত নয়। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাদের মাটিতে খেলব। ভারতের মতো দল আছে। এরকম গা ছাড়া ভাবে হবে না। আমাদের তো ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করতে হবে।’

বুঝুন অবস্থা।

হাথুরুসিংহে বাংলাদেশের ‘অনেক ক্ষতি’ করেছেন। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের ঘনিষ্ঠ সাংবাদিকরা অনেকেই এমন দাবি করে থাকেন। সেই দাবি শতভাগ মিথ্যা নয়। হাথুরুসিংহের অনেক দোষ ছিল। তিনি বেশি কড়া ছিলেন। অনুশীলনে বাড়াবাড়ি করতেন। একবার নেটে মুমিনুলের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করেন। অনেক ক্রিকেটারই তাকে পছন্দ করতেন না। হাথুরুও কয়েকজনকে পছন্দ করতেন না। একটি প্রতিষ্ঠানে এমন ঘটনা বিরল নয়। আপনি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, সেখানে সবাই আপনার বন্ধু নয়। সবাই শত্রুও নয়। জাতীয় দলের ক্ষেত্রেও বিষয়টি এমন।

বলা হয়ে থাকে, হাথুরুর চেয়ে সাবেক কোচদের আমলে ক্রিকেটারদের ব্যক্তিগত উন্নতি বেশি হয়েছিল। তার মধ্যে মোটা দাগে বলা যায় জেমি সিডন্সের আমলের কথা। তাহলে হাথুরু করেছেনটা কী?

 

বাংলাদেশের মতো অস্থির ক্রিকেট প্রশাসনের দেশে এসে একজন কোচের খুব একটা কিছু করারও থাকে না। বিসিবির ইতিহাসে এমনও কোচ ছিলেন যিনি চোখের জলে বিদায় নিয়েছেন। ১৯৯৯ সালে বাংলাদেশের প্রথম বিশ্বকাপের সময় তৎকালীন কোচ গর্ডন গ্রিনিজকে বরখাস্ত করা হয়। অবাক করার বিষয় হলো সেদিন পাকিস্তানকে হারিয়েছিল বাংলাদেশ। তার চেয়ে বেশি অবাক করার বিষয় হল এমন একটা দিনে তাকে তাড়িয়ে দেয়া হয়, যার একদিন পরেই জাতীয় দলের সঙ্গে তার চুক্তি শেষ হয়ে যাওয়ার কথা ছিল! অতীত ঘেঁটে এখন আর লাভ নেই। আবার হাথুরু প্রসঙ্গে ফেরা যাক।

হাথুরু না করার ভেতর যেটা করেছেন, একটা স্ট্যান্ডার্ড গড়েছিলেন। নাহ, ‘গড়েছিলেন’ বলার থেকে ‘গড়ার চেষ্টা করেছিলেন’ বললে হয়তো বেশি যুক্তিসঙ্গত হবে। তার আমলে অধিকাংশ ক্রিকেটার (সবাই নন) এটা জানতেন, ‘ডাক মারলে বাদ পড়বো না, কিন্তু ঝাড়ি খাবো। পরের ম্যাচে এই কাজ করা যাবে না।’ হাথুরুর ব্যর্থতা সবার ক্ষেত্রে তিনি সেটা করতে পারেননি। হয়তো সেটা সম্ভবও নয়। ত্রিদেশীয় সিরিজ এবং তার পরে আমরা দেখলাম সেই স্ট্যান্ডার্ড ভেঙেচুরে একাকার। সব মিলিয়ে গেছে ওই ‘গা ছাড়া ভাবে’র অতলে।

হাথুরু তার বর্তমান দল শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে কী করছেন, এবার সেই আলোচনায় আসা যাক।

১১ জনের বাইরে পাইপলাইন শক্তিশালী করতে উঠেপড়ে লেগেছেন। শ্রীলঙ্কার দায়িত্ব নিয়েই বলেছিলেন, ‘যারা এক মাস টানা ওয়ানডে খেলতে পারে আমি তাদের নিয়ে বিশ্বকাপে যাবো।’

অতিরিক্ত খেলোয়াড়দের বাইরে যারা নিয়মিত খেলেন, তাদের সবার খুঁত বের করেও কাজ করছেন। প্রতিটি খেলোয়াড়ের জন্য আলাদা আলাদা পরিকল্পনা করছেন। ইংল্যান্ডে খেলা বলে রিস্ট স্পিনার বাড়ানোর চেষ্টা করছেন। অফস্পিনার আকিলা ধনঞ্জয়াকে লেগ স্পিনার বানানোর চেষ্টা করছেন। বিস্তারিত জানতে পারেন এই লিংকে গিয়ে-বিশ্বকাপের আগে হাথুরুসিংহের মহাপরিকল্পনা

হাথুরুসিংহে এত কিছু করে সফল হতেও পারেন, নাও হতে পারেন। এই পথে তিনি যদি ব্যর্থ হন নিশ্চয়ই পরের কোচ তাকে দেখে অন্য পথের সন্ধান করবেন।

আর ঘুমিয়ে থাকলে?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)