পটুয়াখালীর কলাপাড়ার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের উমেদপুর দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র বেল্লাল আকন পা দিয়ে লিখেই দাখিল (এসএসসি সমমান) পরীক্ষায় পাস করেছে। তার স্বজনরা জানান, এবছর দাখিল পরীক্ষায় সে জিপিএ ৩.৮৫ (এ মাইনাস) পেয়েছে। তবুও প্রত্যাশানুযায়ী ফলাফল করতে না পারায় অখুশি বেল্লাল।
উমেদপুর গ্রামের খলিল আকন ও হোসনে আরা বেগমের ছেলে বেল্লালের জন্মগতভাবেই দু’টি হাত নেই। পা দু’টিতেও রয়েছে জন্মগত ত্রুটি। পা দিয়ে চলাচলের পাশাপাশি লেখার কাজটিও করে সে। শারীরিক প্রতিবন্ধী হয়েও মায়ের অনুপ্রেরণায় লেখাপড়ায় এগিয়ে চলছে বেল্লাল। পা দিয়ে লিখেই ইবতেদায়ি ও জেডিসি পরীক্ষায় জিপিএ-৫ জিপিএ-৫ অর্জন করেছিল সে।
বেল্লালের মা হোসনে আরা বেগম জানান, ছেলের দু’টি হাত নেই। হাঁটু বিহীন দু’পা রয়েছে। প্রথমে এ নিয়ে অনেক কষ্ট পেতে হয়েছিলো। নানা রকমের অপকথা ছড়াত গ্রামের লোকজন। এসব কারণে প্রথমদিকে বেল্লালকে ঘরের মধ্যে লুকিয়ে রাখতেন। এক শিক্ষকের অনুপ্রেরণায় ছেলেকে লেখাপড়া করানোর সিদ্ধান্ত নেন তার মা। ঘরে বসে বেল্লালকে পড়াতে আর পায়ের আঙুলের মধ্যে চক দিয়ে স্লেটে লেখা শেখানোর অভ্যাস তৈরি করেন হোসনে আরা। বাড়ি থেকে প্রায় এক কিলোমিটার দূরের উমেদপুর মাদ্রাসায় ছেলেকে ভর্তি করান। পা দিয়ে লিখে এই মাদ্রাসা থেকেই আগের দুই পরীক্ষা জিপিএ-৫ ও দাখিলে এ মাইনাস পেয়েছে বেল্লাল।
পরীক্ষার ফলাফলে অসন্তোষ জানিয়ে বেল্লাল বলেন, শুধু ডান পায়ের আঙ্গুল দিয়ে লিখে পিএসসি ও জেডিসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৫ পেয়েছি। তবে দাখিল পরীক্ষায় সাফল্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে পারিনি। কারণ শারীরিক প্রতিবন্ধকতার পাশাপাশি দরিদ্র পরিবারে জন্মগ্রহণ করায় অর্থ সঙ্কট ছিলো প্রকট। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও মাধ্যমিক লেখাপড়ার গণ্ডি পার হয়েছি। উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় আরো ভালো ফলাফল অর্জন করতে চাই ।
বেল্লালের পিতা খলিল আকন বলেন, আমার ছেলে প্রতিবন্ধী এটা বলতে পারছি না। মেধা ও দক্ষতা দিয়ে সমাজে বেল্লাল নিজেই নিজের স্থান তৈরি করে নিয়েছে। আমি বেল্লালের লেখাপড়া চালিয়ে যেতে চাই।