পাহাড়ি ঢলে আগাম বন্যায় হাওরাঞ্চলের ক্ষতিগ্রস্থ এলাকায় দুর্গত মানুষদের জন্য বরাদ্দকৃত ত্রাণ পরিমানের চেয়ে কম দেয়া, কার্ড করতে নগদ টাকা নেয়াসহ সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন অভিযোগ করেছেন ভুক্তভোগি মানুষ। হাওরে আগাম বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মিস্টার মিয়া নামের এক কৃষকের ছয় দিন পর সরকারের দেয়া চালে ভাত খেতে পারার খবরে দেশবাসীর উচ্ছ্বসিত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে অনিয়মের অভিযোগ পাওয়ার বিষয়টি নিন্দনীয়। যে সময়ে ধান কাটা ও মাড়াইয়ে ব্যস্ত সময় কাটানোর কথা ছিল হাওরবাসীর, সেই সময়ে সবকিছু হারিয়ে তারা যখন বাধ্য হয়ে ত্রাণ সহায়তার লাইনে দাঁড়াচ্ছে তখন সরকারি ত্রাণ বিতরণের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে এমন অভিযোগ গ্রহণযোগ্য নয়। ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের এই গুরুতর অভিযোগ আমলে নিয়ে দায়ীদের বিরুদ্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট মহলে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিৎ। পাশাপাশি দুর্যোগের শিকার হওয়া এসব মানুষের জন্য দেয়া ত্রাণকে প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল হিসেবে বলেছেন সেখানকার জনপ্রতিনিধিরা। তাদের এই অভিযোগ আমলে নিয়ে সেখানে পর্যাপ্ত ত্রাণ সহায়তা দেয়ার জন্য সরকারের প্রতি আমাদের আহ্বান রইলো। অবশ্য ইতোপূর্বে ক্ষতিগ্রস্ত হাওর এলাকা পরিদর্শনে গিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুর্গত মানুষদের আশ্বস্ত করে বলেছিলেন, খাবার নিয়ে চিন্তা করবেন না। আমাদের খাদ্য মজুদ আছে। মজুদ কম হলে আমরা আরো খাবার আমদানি করবো। কিন্তু কেউ না খেয়ে কষ্ট পাবে না। প্রধানমন্ত্রীর এমন প্রশংসনীয় উদ্যোগ কিছুসংখ্যক দুর্নীতিবাজের কারণে ম্রিয়মান হয়ে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, ইতোপূর্বে হাওরাঞ্চল রক্ষার জন্য বাঁধ নির্মাণে দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে যথাসময়ে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা না নেয়ার ফলে হাওরাঞ্চলের সাধারণ মানুষকে এমন ভয়াবহ ও নজিরবিহীন দুর্যোগের কবলে পড়তে হয়েছে। হাওরাঞ্চলের মানুষের জীবন-মরণ নিয়ে খেলা করা সেসব দুর্নীতিবাজসহ ত্রাণ বিতরণে অনিয়মের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে সরকারকে অতি শীঘ্র অবশ্যই ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এমন দুর্যোগের মূহূর্তে হাওরাঞ্চলের দুর্গত একজন মানুষকেও যাতে না খেয়ে থাকতে না হয় এই বিষয়টি সরকারকেই নিশ্চিত করতে হবে। এই দুর্যোগ কাটিয়ে ওঠা পর্যন্ত তাদেরকে বিভিন্ন সহায়তা দেয়া অব্যাহত রাখতে হবে। পাশাপাশি হাওরাঞ্চলের মানুষের এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের লক্ষ্যে দীর্ঘমেয়াদী পরিকল্পনা গ্রহণ ও তার বাস্তবায়নের জন্য সংশ্লিষ্টদের প্রতি আমাদের আহ্বান রইলো।