আবহাওয়া পূর্বাভাস ও সঠিক সতর্কবার্তার অভাবে প্রতি বছর ফ্লাস ফ্লাডে (ফসল ডোবা বন্যা) ডুবছে হাওরাঞ্চলের কৃষকের ফসল। প্রতি বছর ফসল কাটার সময় ভারত থেকে নেমে আসা পাহাড়ী ঢলে তলিয়ে যাচ্ছে কিশোরগঞ্জ, সুনামগঞ্জ, সিলেট ও নেত্রকোনাসহ পার্শ্ববর্তী এলাকার হাওর। এতে একমাত্র ফসল হারিয়ে পথে বসতে হচ্ছে কৃষকদের।
বুধবার রাজধানীর পুরানা পল্টনে ‘সেভ দ্য সোসাইটি অ্যান্ড থাণ্ডারস্টর্ম অ্যাওয়ারনেস ফোরাম’ আয়োজিত হাওরাঞ্চলের সাংবাদিক ও কৃষকদের সঙ্গে এক আলোচনা সভায় এসব তথ্য উঠে আসে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পানি ও বন্যা ব্যবস্থাপনা ইনস্টিটিউটের সিনিয়র রিসার্চার ড. মোহন কুমার দাশ বলেন: সারাদেশে উৎপাদিত ধানের ১৮ শতাংশ আসে হাওরাঞ্চল থেকে। কিন্তু কোনো রকম বন্যা হলেই ফসলগুলো তলিয়ে যায়। এতে পথে বসতে হয় কৃষকদের। এসব অঞ্চলে পানি উন্নয়ন বোর্ড বন্যার পূর্বাভাস জানানোর জন্য লাল পতাকা টানিয়ে দেয়। কিন্তু কৃষক এই পতাকা উড়ানোর অর্থ বোঝে না।
সংগঠনটির গবেষণা সেল প্রধান আব্দুল আলীম বলেন: ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ মানুষের পক্ষে ঠেকিয়ে দেয়া সম্ভব নয়। তবে মোকাবিলা করা সম্ভব। ভারতের পাহাড়ী অঞ্চলে অতি বৃষ্টি হলে সেখান থেকে পানি নেমে বাংলাদেশের হাওরে প্রবেশ করতে সময় লাগে ১০ থেকে ১২ দিন। উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহার করলে এই সময়ের মধ্যেই ধান কেটে ফেলা সম্ভব। তবে ভারতে যে বৃষ্টি হচ্ছে এই খবরটা কৃষকের কাছে পৌঁছে দিতে হবে। সহজ শর্তে কৃষককে ধান কাটার মেশিন কিনতে সহায়তা করতে হবে।
সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক রাশিম মোল্লা বলেন: হাওরাঞ্চলের কৃষকের প্রধান সমস্যা দু’টি। প্রথমত তারা সময় মতো বন্যার সঠিক পূর্বাভাস পায় না। দ্বিতীয়ত উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার না করায় বন্যার সময় দ্রুত ফসল কেটে ঘরে তুলতে পারেনা।
অনুষ্ঠানে নাগরিক টেলিভিশনের সাংবাদিক আবদুল্লাহ শাফি বলেন: আগে হাওরাঞ্চালে বন্যা হতো না। কারণ নদীর নাব্যতা ছিল। এখন পাহাড়ী ঢলে নেমে আসা পলিতে নাব্যতা হারিয়েছে প্রায় সব নদী। এ কারণে ইদানিং ভারতে একটু বৃষ্টি হলেই এ অঞ্চলের নদীগুলো উপচে পানি প্রবেশ করে হাওরে। এতে তলিয়ে যায় কৃষকের ফসল।
দৈনিক যুগান্তরের সাংবাদিক যোবায়ের আহসান যাবের বলেন: বন্যা শুরু হওয়ার আগে পেকে যাবে এমন ধানের জাত উদ্ভাবন করে তা কৃষকের মাঝে ছড়িয়ে দেয়ার ব্যবস্থা করা উচিৎ। একই সঙ্গে এসব অঞ্চলের বাধ নির্মাণসহ ধান কাটার মেশিন কিনতে সরকারিভাবে ভর্তুকি দেয়া উচিৎ। প্রয়োজনে পেডি হারভেস্টার মেশিন নামাতে হবে।
আলোচনায় অংশ নিয়ে কৃষকেরা বলেন: সন্তান জন্ম নিলে যেমন তাকে সবসময় আলাদাভাবে দেখাশোনা করতে হয় তেমনই যেসব কৃষক হাওরে ধান চাষ করেন, ফসল নিয়ে তাদের অবস্থা এমন হয়। সবসময় ভয়ে থাকে কখন জানি পানি এসে তলিয়ে যায়।
আলোচনা সভায় বিভিন্ন জেলা থেকে আগত কৃষক ও গণমাধ্যমকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।