চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

হাইকমিশনে হামলাকারীরা এখনো গ্রেপ্তার হচ্ছে না কেন?

শুরুতেই ব্রিটেনের বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলাকারী ও জাতির পিতার ছবি অবমাননাকারী সন্ত্রাসীদের প্রতি নিন্দা জানিয়ে বাংলাদেশে বসবাসরত ইংল্যান্ডের বাঙালি সন্ত্রাসীদের সকল আত্মীয়-স্বজনদের গ্রেপ্তারের দাবি জানাচ্ছি। তবে ব্রিটেন সম্পর্কে আরও কিছু কথা বলার আছে। জিয়া অরফানেজ ট্রাষ্ট দুর্নীতির মামলায় খালেদা জিয়ার কারাগারে যাওয়ার কারণে পশ্চিমা ৩টি দেশ তাদের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের বিষয়ে সতর্কতা জারি করে নোটিশ দিয়েছে। অর্থাৎ এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ ভ্রমণ করা তাদের জন্য নিরাপদ নয়। ওই ৩ দেশের মধ্যে একটি দেশ হলো গ্রেট ব্রিটেন বা যুক্তরাজ্য।

এই মূহুর্তে একটা স্বাভাবিক প্রশ্ন, এই ব্রিটেন কোন ব্রিটেন? উত্তর স্বাভাবিক। এই ব্রিটেন হলো সেই ব্রিটেন, যেই ব্রিটেনের নিজের ভূখণ্ডে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের দূতাবাসের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। সেখানে বাঙালি নামধারী এক শ্রেণির লোক যারা নিজেদেরকে ব্রিটিশ বাঙালি বলে পরিচয় দেয়। তারা হলো আইনগত ভাবে ব্রিটিশ নাগরিক, যারা জন্মসূত্রে বাঙ্গালী হলেও এই মূহুর্তে তাদেরকে আর বাঙালি বলা যায় না। কারণ তারা ব্রিটিশ নাগরিক। সেই ব্রিটিশ নাগরিকেরা যখন ভিন্ন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা চালায়, তখন এটাকে কী বলে ?

ব্রিটিশ নাগরিক কর্তৃক বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা নাকি বাঙালি কর্তৃক বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলা? এই দুটি প্রশ্নের উত্তর খুঁজে দেখা দরকার। এটা এজন্য দরকার যে, ব্রিটিশ সরকার যেহেতু ইতোমধ্যে বাংলাদেশ ভ্রমণে তার দেশের নাগরিকদের সতর্ক করেছে নোটিশ দিয়েছে, সেহেতু এসব ব্রিটিশ বাঙালি কোন দেশের সন্ত্রাসী হিসেবে বিবেচিত হবে?

যদি উত্তর হয় ব্রিটিশ নাগরিক, তাহলে স্বাভাবিক প্রশ্ন আসবে, ব্রিটেনের আইনশৃঙ্খলা কতটুকু উন্নত বা নিরাপদ? অপরদিকে বাংলাদেশের দূতাবাসে হামলাকারী সন্ত্রাসীরা যদি বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে বিবেচিত হয়, তাহলে ব্রিটেনের আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কেন তাদেরকে গ্রেপ্তার করে দ্রুত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কাছে হস্তান্তর করার ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। এটা না করে কেন তারা ব্রিটেনের নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণের সতর্কতার নোটিশ দিয়েছে?

জুলিয়ান অ্যাসাঞ্জ

কূটনৈতিক আইন বলে একটা ভাষা আছে। উদাহরণ হিসেবে বলা যায়, উইকিলিক্সের প্রতিষ্ঠাতা জুলিয়ানের লন্ডনস্থ ইকুয়েডর দূতাবাসে আশ্রয় গ্রহণ, স্কটল্যান্ড ইয়ার্ডের কাছে গ্রেপ্তারি পরোয়ানাসহ রেড এল্যার্ট থাকার পরেও লন্ডন পুলিশ জুলিয়ানকে গত ৮ বছর ইকুয়েডর দূতাবাস থেকে বের করতে পারেনি। কারণ হলো, ডিপ্লোমেটিক ল এটাই বলে যে এক দেশের দূতাবাস যখন ভিন্ন দেশে থাকে, তখন সেই দূতাবাসকে ওই দেশের স্বাধীন সার্বভৌম ভূখণ্ড বলেই বিবেচনা করা হয়। সেই হিসেবে লন্ডনের ইকুয়েডর দূতাবাস ইকুয়েডরের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত, পাশাপাশি প্রতিটা দেশের দূতাবাসসহ লন্ডনের বাংলাদেশের দূতাবাস একটি বাংলাদেশের ভূখণ্ড হিসেবে বিবেচিত হবে।

বিদেশের মাটিতে প্রবাসীদের রাজনীতির চর্চা এই বাক্যটা সারা বিশ্বের মধ্যে শুধু বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তানের নাগরিকেরাই বেশি করে। আর কাউকে দেখিনি বলবো না, তবে এই তিন দেশের নাগরিক মতো আর কোন দেশের নাগরিকদের ‘রাজনৈতিক কৃমি’ খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলাদেশের বাস্তবতায় ভিন্ন দেশে বাংলাদেশের রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রী, মন্ত্রী, এমপি সহ বিশিষ্ট নাগরিকদের অপমান অপদস্থের চর্চা মূলত শুরু হয় যুদ্ধাপরাধীদের বিচার প্রক্রিয়া শুরু করার মূহুর্ত থেকে। এই অপরাধীদের আবার একটি পরিচিত ডায়ালগ আছে: ‘এরা কষ্ট করে ইনকাম করে বাংলাদেশে রেমিটেন্স পাঠায়।’ এরা আসলে ডলার পাউন্ড যাই পাঠাক না কেন, দেশের জন্য পাঠায় না। এসব ডলার পাউন্ড খরচ হয় তাদের ফেলে যাওয়া অতীত গ্রামের বাড়ির বাবা-মা, বউ শ্বশুর-শাশুড়ির সুখ সুবিধা নির্ণয়ে। তবে সাধারণ প্রবাসীরা এই অপরাধীদের আওতায় পড়েন না। তাদের অকৃত্রিম দেশেপ্রেমের কারণে বাংলাদেশ অবশ্যই উপকৃত হচ্ছে।

তবে এই হামলার পক্ষে সাফাই গাইতে গিয়ে আরেকটি অদ্ভূত কথা শোো গেল একটি টিভি টক শো’তে বিএনপি ঘরানার পেশাজীবী সাংবাদিক কাম বুদ্ধিজীবীর কথায়। তার মতে- ব্রিটেনে বাংলাদেশ হাই কমিশনে হামলা ও বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননা যেমন উচিত হয়নি, সেই সাথে খালেদা জিয়াকে কারাগারে দেওয়াও নাকি ঠিক হয়নি। ভদ্রলোক আগরতলা আর উগারতলা সব এক মঞ্চে নিয়ে এসেছেন। সম্ভবত এটাই বিএনপির আদর্শিক রাজনীতির প্যাটার্ন। না হলে কোনো অবস্থায় উনি ওপেন শোয়ে এরকম করে বলতে পারতেন না।

যেখানে বলতে গেলে শেখ হাসিনার সাথে খালেদা জিয়ার তুলনা চলে না, সেখানে একটি দেশের জাতির পিতার সঙ্গে; যার চিন্তা-চেতনা থেকে বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রর জন্ম, সেই ব্যাক্তির অবমাননার সাথে খালেদা জিয়ার জেলে যাওয়ার তুলনা কোনভাবেই হতে পারে না। তবে এটাও সত্য যে, আজ যারা বঙ্গবন্ধুকে অপমান করেছে তারা খালেদা জিয়াকেও অপমান করতে দ্বিধা করবে না। লন্ডনের ওই সব বাঙালেরা একটু বঞ্চিত হলেই খালেদার শরীরের চামড়া দিয়ে ঢোল বানানোর মিছিলও দিতে পারে। বিএনপির রাজনীতির ইতিহাস এমনই।

গণমাধ্যমে পাওয়া খবরে জানা গেছে, বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলাকারীদের মধ্য থেকে আটক হওয়া এক সন্ত্রাসী নাকি ব্রিটেনের পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের নির্দেশেই বাংলাদেশ দূতাবাসে হামলা চালিয়েছে, বঙ্গবন্ধুর ছবি অবমাননা করেছে। এটা যদি সত্য হয়, তবে ব্রিটেন সরকারকে অবশ্যই তারেক রহমানকে গ্রেপ্তার করে বাংলাদেশের কাছে হস্তান্তর করতে হবে। বাংলাদেশ সরকার কি এখনও এই বিষয়ে চুপ থাকবে?

(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)