‘হাঁস, মুরগী অার ছাগল লালন-পালন করে আমার বাজান সিদ্দিকুরের লেখাপড়ার খরচ দিতাম, সেই ছিল আমরা সব চাওয়া-পাওয়ার ভরসা। কিন্তু এখন আমার চাওয়া-পাওয়ার অার কিছু নেই। শুধু একটাই চাওয়া আমার ছেলেটার চোখ দুটো যেন ভালো হয়।’
এভাবেই বিলাপ করে চ্যানেল আই অনলাইনের কাছে কথাগুলো বলছিলেন পুলিশের টিয়ার শেলের আঘাতে চোখ হারাতে বসা তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সিদ্দিকুরের মা ছোলেমা খাতুন।
রোববার বিকেলে জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের বারান্দায় আলাপকালে তিনি জানান, বাল্যকালে বাবা হারানো পর হাঁস-মুরগী লালন পালন করে, বাসা বাড়িতে কাজ করে লেখাপড়া করিয়েছেন, বড় ছেলে মেট্রিক পাশ করে রড মিস্ত্রির কাজ শুরু করে, সংসারের খরচের টাকা খরচের আগে সিদ্দিকের লেখাপড়ার টাকা দিতাম আমরা, অথচ আজ আমাগো সিদ্দিকের এই অবস্থা।
“কতো কষ্ট করছি ওর জন্য আমরা, ও কইছিল আর মাত্র দুইটা বছর। তারপর আর কষ্ট হবে না, আমি বিসিএস দিবো, সরকারী চাকরি করব, আর এখন সিদ্দিকুর অন্ধ হয়ে যাচ্ছে, এ আমার কল্পনার বাইরে।”
নিজের ছোট ভাইয়ের এমন অবস্থায় পুরো ভেঙ্গে পড়েছেন বড় ভাই নায়েব আলী। কাঁদো কাঁদো স্বরে তিনি বলেন, আমার দুইটা চোখ নিয়া যাইতো, আমার শিক্ষিত ছোট ভাইয়ের চোখ কেন নিয়া গেলো। প্রধানমন্ত্রী ও শিক্ষামন্ত্রীর কাছে সিদ্দিকের ভাইয়ের দাবী উন্নত চিকিৎসার মাধ্যমে যেন তার ভাই চোখ ফিরে পায়।
তিতুমীর কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র সিদ্দিকুরের বাড়ি ময়মনসিংহের তারাকান্দি উপজেলার ডাকিরকান্দা গ্রামে। দুই ভাই ও এক বোনের মধ্যে সবার ছোট সে। বাবা হারিয়েছেন শিশু বয়সে।
২০ জুলাই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত রাজধানীর সাতটি সরকারি কলেজ ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা কলেজ, তিতুমীর কলেজ, কবি নজরুল কলেজ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ ও সরকারি বাঙলা কলেজের শিক্ষার্থীরা রুটিনসহ পরীক্ষার তারিখ ঘোষণার দাবিতে রাজধানীর শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনের রাস্তায় অবস্থান নেয়।
একপর্যায়ে তাদের ছত্রভঙ্গ করতে কাঁদানে গ্যাস ছোড়ে পুলিশ। এ সময় শিক্ষার্থীদের লাঠিপেটা করা হয়। ওই দিন পুলিশের টিয়ার শেলে চোখে গুরুতর আঘাত পান তিতুমীর কলেজের ছাত্র সিদ্দিকুর।
চিকিৎসকরা বলছেন, সিদ্দিকুরের চোখে দৃষ্টিশক্তি ফেরা প্রায় অসম্ভব।