গুলশানের অভিজাত হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গিদের বর্বরতম ও নৃশংস হামলার শিকার হয়ে নিহতদের স্মরণ করে তাদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন সর্বস্তরের মানুষ। নিহতদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে ধর্মের অপব্যাখ্যা দিয়ে যারা কোমলমতি তরুণদের বিপদগামী করছে তাদের খুঁজে বের করার আহ্বান জানিয়েছে তারা।
বেসরকারী নর্দান বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র নুরুল আমিন চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, এক বছর আগে যে জঙ্গি হামলাটি হয়েছে তা আমাদের বাঙ্গালি সংস্কৃতির জন্য একটি কালো অধ্যায়। যারা এ হত্যাকাণ্ড ঘটিয়েছে তারাও আমার মতো তরুণ। কিন্তু তাদেরকে ধর্মের নামে অপব্যাখ্যা দিয়ে মগজ ধোলাই করা হয়েছে। তাই ধর্মের নামে যারা অপব্যাখ্যা দিয়ে তরুণ সমাজকে নষ্ট করছে তাদের আইনের আওতায় আনতে হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শিকাগোতে লেখাপড়া করা তরুণী অধরা মাধুরী বলেন, জঙ্গি হামলা মেনে নেয়ার মতো কিছু না। আমার বয়সী কয়েকজন তরুণীও এখানে ছিল। দেশে হঠাৎ করে এমন পরিস্থিতি হবে তা কল্পনা করিনি। এই হামলার দু’মাস পর লেখাপড়ার জন্য আমি দেশ ছেড়ে শিকাগোতে যাওয়ার সময় ভেবেছিলাম ওখানকার ফ্রেন্ডরা আমাকে অন্যভাবে গ্রহণ করবে, কিন্তু তেমন কিছুই হয়নি।
একসময় ইতালি নিবাসী সুবোধ কুমার হালদার পরিবারসহ শ্রদ্ধা জানাতে এসে বলেন, ‘বাংলাদেশের পর সবচেয়ে বেশি সময়, প্রায় ১১ বছর ছিলাম আমি ইটালিতে। সেই ইটালির এতগুলো মানুষকে আমার দেশে হত্যা করা হয়েছে, এ নিয়ে একটা অপরাধবোধ নিয়ে এতদিন ছিলাম। আজ তাদেরকে শ্রদ্ধা জানাতে এসেছি, সবার কাছে ক্ষমা চাইতে এসেছি।’
ওই হামলায় নিহত ইশরাতের বন্ধু, মামা ও পরিবারের অন্য সদস্যরা আজ সেই স্থানে এসে দাঁড়ান। কারও মুখে কথা নেই। মামা বিচারপতি ওবায়দুল হাসান সেখানে গিয়ে নীরবে দাঁড়িয়েছিলেন।
ওবায়দুল হাসান গণমাধ্যমকে বলেন: জঙ্গিবাদ দূর করতে আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর পাশাপাশি পরিবার ও সমাজকে এগিয়ে আসতে হবে। আপনার ছেলে কাদের সঙ্গে মিশছে তা বাবা-মা হিসেবে আপনার জানতে হবে।
মায়ের সঙ্গেই এসেছিলেন এ প্রজন্মের ছেলে আবেদীন। সে জানায়, ছোট থাকতে একবার রমনার বটমূলে বোমা হামলা হয়েছিল, তখন বুঝতাম না কি হয়েছিল। যখন হলি আর্টিজানে হামলা হলো, এর ভয়াবহতা আঁচ করতে পারছি। এটি বিভীষিকাময় অধ্যায় দেশ ও জাতির জন্য। এরকম কোন ঘটনা আমরা চাই না।
এছাড়াও নৃশংস হত্যাযজ্ঞের শিকার নিরীহ, নিরাপরাধ ব্যক্তিদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েছেন বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত, আওয়ামী লীগ, বিএনপি, ওয়ার্কাস পার্টি, প্রজন্ম ৭১, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ বিভিন্ন সংগঠন।
ছবি: ওবায়দুল হক তুহিন