বেশ বন্ধুর পথ পাড়ি দিতে হচ্ছে মোস্তফা সরয়ার ফারুকীর ‘ডুব’ ছবিটিকে। ছবিটি বাংলাদেশে মুক্তির অনুমতি পায়নি এখনো। তবে প্রশংসা পাচ্ছে বিদেশের মাটিতে। ‘২০তম সাংহাই আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ ও ‘৩৯তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসব’ মাতিয়ে এবার হলিউড রিপোর্টারের প্রশংসা পেয়েছে ‘ডুব’। হলিউড রিপোর্টারে পুরো ছবিটির রিভিউ দেওয়া হয়েছে। এখানে বলা হয়েছে, ইরফান খানের অভিনয়ের দক্ষতার জন্য ‘ডুব’ সিনেমাটি দর্শককে আকৃষ্ট করবে। বাংলাদেশি নির্মাতা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী এ সিনেমায় অত্যন্ত যত্নের সঙ্গে সূক্ষ্ম কিছু বিষয় তুলে ধরেছেন দর্শকের সামনে, যা এই ছবিকে করে তুলেছে প্রাণবন্ত ও বাস্তবধর্মী। তিশার অভিনয়েরও বেশ প্রশংসা করা হয়েছে। আর এর মধ্য দিয়ে বেরিয়ে এসেছে ছবির গল্প।
হলিউড রিপোর্টারের রিভিউতে বলা হয়েছে, ‘ডুব’ ছবির কাহিনী একজন মধ্যবয়স্ক স্বনামধন্য চলচ্চিত্র নির্মাতাকে নিয়ে। ছবিতে নির্মাতা তার স্ত্রীকে ছেড়ে মেয়ের সহপাঠীকে বিয়ে করেন। ঢাকার মধ্যবিত্ত একটি পরিবারের সম্পর্কের টানাপড়েনকে নিখুঁতভাবে ফুটিয়ে তোলা হয়েছে ছবিতে। হলিউড রিপোর্টারে আরও বলা হয়েছে যে, ফারুকীর ‘টেলিভিশন’ এবং ‘পিঁপড়াবিদ্যা’র ছবি দুটোর তুলনায় একদম আলাদা এই ছবিটি। ছবির ভিজ্যুয়াল স্টাইল এবং কাহিনীর গভীরতা মস্তিষ্কে নাড়া দেবে।
ছবির মূল চরিত্র জাভেদ হাসান খানের ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ইরফান খান। তার স্কুল শিক্ষিকা স্ত্রী মায়া’র ভূমিকায় আছেন রোকেয়া প্রাচী। তিশা অভিনয় করেছেন মেয়ে সাবেরির ভূমিকায়। সাবেরির সহপাঠী নিতুর ভূমিকায় অভিনয় করেছেন ভারতীয় অভিনেত্রী পার্ণো মিত্র। ছবিতে দেখানো হয়, জাভেদ হাসানের নামে গুজব ছড়াচ্ছে যে সে তার ছবির অভিনেত্রী এবং মেয়ের সহপাঠি নিতুর সঙ্গে সম্পর্কে জড়িয়েছেন। স্ত্রী মায়ার কাছে সত্য জানানোর সাহস ছিল না জাভেদ হাসানের। মায়াকে গাড়িতে করে লং ড্রাইভে যান জাভেদ। ধীরে ধীরে কঠিন সত্যটা জানান। জাভেদ জানান, তাদের বৈবাহিক জীবন একঘেয়ে হয়ে যাচ্ছে। অতীতের মতো নেই আর। জাভেদের মুখে এ ধরনের কথা শুনে অবাক হয়ে যান মায়া। জাভেদের সন্তানেরা এসব জানতে পারে বাবার সঙ্গে কথা বলা বন্ধ করে দেয়।
নিতুকে জীবন থেকে আলাদা করার জন্য জাভেদ তার ফিল্ম স্টুডিওর এক পাশে তৈরি করা ঘরে একা থাকা শুরু করে। স্ক্যান্ডাল এড়াতে নিতু ছবির কাজ ছেড়ে দেয়। কিন্তু খুব সহজেই জাভেদের মন গলাতে সক্ষম হয় নিতু। জাভেদের পরিবারের জন্য পরিস্থিতি মেনে নেয়া এবং জাভেদের অনুপস্থিতি খুব কঠিন ছিল। পরিবার ও প্রেমিকার মধ্যে একজনকে বেছে নেওয়ার সময়টাতে জাভেদকেও স্বার্থপর হতে হয়েছে। আরেকটি প্রাণবন্ত এবং শক্তিশালী একটি চরিত্র ছবি নির্মাতার মেয়ে সাবেরি। বাস্তবসম্মত, আবেগপ্রবণ ও শক্তিশালী এই চরিত্র সুনিপুণ ভাবে ফুটিয়ে তুলেছেন তিশা।
গত ২৬ জুন হলিউড রিপোর্টারে প্রকাশিত এই রিভিউ পড়ে গতকাল সোমবার নিজের ফেসবুক পেজে মোস্তফা সরয়ার ফারুকী লিখেছেন, ‘সব ঝড়, সব পরিশ্রম, সকল বিনিদ্র রাতের স্মৃতি এক নিমিষে উড়ে যায় এই রকম একটা রিভিউ পড়লে। যদিও এমন না যে, এই রকম রিভিউ পাবার আশায় আমরা ছবি বানাই। কিন্তু সব পরিশ্রমের পর এই রকম রিভিউ পেলে আনন্দ হয়। বাংলা ছবি এগিয়ে যাক।’
বাংলাদেশ কিংবা ভারত, কোথাও এখনো মুক্তি পায়নি মোস্তফা সরয়ার ফারুকী পরিচালিত নতুন ছবি ‘ডুব’। তার আগেই ছবিটি রাশিয়ার ৩৯তম মস্কো আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে ‘কমেরসান্ত জুরি প্রাইজ’ পেয়েছে। গত ২৯ জুন মস্কোর অক্টোবর সিনেমা হলে ফারুকীর হাতে এই পুরস্কার তুলে দেন রুশ চলচিত্র সমালোচক আন্দ্রেই প্লাখোব।