হেমন্তের এই সময়টাতে সচারচর শীত খুব একটা নামে না। হালকা শীতের আমেজ থাকে। থাকে কুয়াশা ও শিশির। শীত আগমনীর বার্তাই আসলে হেমন্তের বৈশিষ্ট্য। কিন্তু এ বছর শহর গ্রামে একযোগে হুট করে শীত নেমে এলো একটু আগেভাগেই। শীত যেমন এই বংলার একটি প্রিয় ঋতু তেমনি বেশ ঝক্কিঝামেলারও। বয়স্ক মানুষের এই ঋতুতে বেশ বেগ পেতে হয় জীবন যাপনে। নানান রোগ ব্যাধি দেখা দেয়। বিশেষ করে ঠাণ্ডাজনিত রোগের প্রকোপ বেড়ে যায়। তার ওপর এবার আছে বিশ্ব মহামারি করোনা ভাইরাসের প্রকোপ। ইউরোপসহ পশ্চিমে শুরু হয়ে গেছে করোনার দ্বিতীয় ধাক্কা। আমাদের বাড়তি সতর্কতা নিয়ে এই মহামারির শেষ কামড় মোকাবেলা করতে হবে। এই সময় সরকার কি পদক্ষেপ নেবে সেটা এখন দেখার বিষয়। ইতিমধ্যে দেশের উত্তরাঞ্চলে শীত বেশ জাঁকিয়ে বসেছে।
দেশের সর্বোত্তরের জেলা পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়ায় গত শনিবার থেকে একটানা পাঁচ দিন ধরে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। বুধবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটি সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। মঙ্গলবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের মধ্যে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১৩ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ঐ দিন সন্ধ্যা ৬টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩১ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। গত সোমবার সকাল ৯টায় তেঁতুলিয়ায় সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ১২ দশমিক ৮ ডিগ্রি সেলসিয়াস। ওই দিন সন্ধ্যা ৬টায় তেঁতুলিয়ায় দিনের সর্বোচ্চ তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৩১ দশমিক ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস। প্রায় দুই সপ্তাহ ধরে পঞ্চগড়ে দিনেরবেলা রোদের তীব্রতা থাকলেও রাতে শীত অনুভূত হচ্ছে। সাথে সাথে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে বইছে শীতের হিমেল হাওয়া।
হিমালয়ের খুব কাছাকাছি জেলা হওয়ায় পঞ্চগড়ে সহজেই উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে হিমালয়ের হিম বায়ু প্রবেশ করায় হেমন্তেই এমন শীত অনুভূত হচ্ছে বলে জানিয়েছেন আবহাওয়াবিদরা। হেমন্তের মাঝামাঝি সময়ে সন্ধ্যা নামলেই জেলার মানুষকে ঠান্ডায় কাবু করছে উত্তরের হিমেল বাতাস। প্রতিদিন সন্ধ্যার পর থেকে পরদিন ভোর পর্যন্ত হালকা কুয়াশায় ঢাকা পড়ছে চারদিক। বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে রোদের দেখা মিললেও রাতে গায়ে জড়াতে হচ্ছে গরম কাপড়। তেঁতুলিয়া আবহাওয়া পর্যবেক্ষণাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. রাসেল শাহ বলেন: পাঁচ দিন যাবৎ তেঁতুলিয়ায় দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা বিরাজ করছে। তেঁতুলিয়া হিমালয়ের খুব কাছাকাছি হওয়ায় উত্তর–পশ্চিম দিক থেকে হিমেল বাতাস সরাসরি এখানে আসছে। সাইপ্রাস থেকে আসা ঠান্ডা বাতাস হিমালয়ে ধাক্কা খেয়ে সরাসরি এই এলাকায় আসায় এখানে তাপমাত্রা কমে যাচ্ছে। এ ছাড়া দিনভর রোদ থাকায় সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় পার্থক্যের সৃষ্টি হচ্ছে বলে তিনি জানান।
শীতে এমনিতে নিম্ন আয়ের লোকজনের দুর্ভোগ বাড়ে। তারা শীত বস্ত্রের অভাবে খাদ্যাভাবে পর্যদুস্ত থাকে। সরকারের উচিৎ এইসব অঞ্চলের জন্য এখনই প্রস্তুতি নেয়া। কোভিড মোকাবেলা ও একই সঙ্গে শীতার্ত জনগনের জন্য চিকিৎসাসেবাসহ সব কিছুর দ্রুত ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে দক্ষতার সঙ্গে মোকাবেলা করতে হবে। বিশেষ করে কোভিড মহামারির এইসব ভয়ংকর দিনে অতি সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেয়ার জন্য স্থানীয় প্রশাসনকে ত্বরিত ব্যবস্থা নিতে হবে। নতুবা আমরা নতুন একটি বিপর্যয় সামাল দিতে ব্যর্থ হবো।