চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

সড়ক নিরাপদ হবে কবে?

শনিবার সন্ধ্যার আগে রাজধানীর শনির আখড়ায় বাসের ধাক্কায় এক মোটরসাইকেল আরোহী নিহত হয়েছেন। চ্যানেল আই অনলাইনসহ বেশ কয়েকটি গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবরটি মর্মান্তিক। যদিও সব মৃত্যুর খবরই তাই। তবে কখনও কখনও ঘটনার পেছনের গল্প, তাকে আরো বেশি মর্মস্পর্শী করে তোলে। শনির আখড়ার ঘটনাটিও তেমনই।

এই ঘটনায় যিনি মারা গেছেন তার নাম মামুন। বছরের চল্লিশ বয়সী এই ব্যক্তি আজই একটি মোটরসাইকেল কিনেছিলেন। যে ছিল তার দীর্ঘদিনের শখ। নতুন কেনা সেই মোটরসাইকেলটি নিয়েই তিনি বাড়িতে ফিরছিলেন স্ত্রী-সন্তানের কাছে। কিন্তু বেপরোয়া বাস, তাকে পিষ্ট করেছে চাকায়। দ্রুত হাসপাতালে নিয়েও বাঁচানো যায়নি মামুনকে।

আমরা নিশ্চিত করেই বলতে পারি, প্রতিদিন দেশের সড়ক, মহাসড়কে দুর্ঘটনা নিহত ব্যক্তিদের প্রত্যেকেরই এমন আলাদা আলাদা মর্মস্পর্শী গল্প রয়েছে। যা যে কোনো মানুষের অন্তর স্পর্শ করে যাবে। কিন্তু আমাদের শিক্ষা হচ্ছে কেই? রাস্তার এই বেপরোয়া দানবদেরকে আমরা থামাতে পারছি? কোনো আইন, কোনো নিয়মে কি নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে তাদের? না, তা করা যাচ্ছে না। তাহলে কি আমরা দিনের পর দিন এভাবেই চলতে থাকবো? এভাবে প্রতিদিন রক্ত ঝরবে সড়ক-মহাসড়কে? হারিয়ে যাবে সম্ভাবনার নতুন নতুন উৎস?

মামুনদের যেদিন সড়কে এভাবে মরতে হচ্ছে, সেদিনই দুর্ঘটনা নিয়ে কাজ করা বেসরকারি সংগঠন ‘নৌ, সড়ক ও রেলপথ রক্ষা জাতীয় কমিটি’র (এনসিপিএসআরআর) নিয়মিত মাসিক জরিপ ও পর্যবেক্ষণ সড়ক দুর্ঘটনার ভয়াবহ কিছু তথ্য তুলে ধরা হয়েছে।

সংবাদ বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রকাশিত ওই প্রতিবেদন প্রকাশ বলা হয়েছে, গত চার মাসে (১ জানুয়ারি থেকে ৩০ এপ্রিল) ১ হাজার ৪৯৫টি সড়ক দুর্ঘটনায় ১ হাজার ৫৫২ জন নিহত ও ৩ হাজার ৩৯ জন আহত হয়েছে। নিহতের মধ্যে ১৯৫ জন নারী ও ২৬৮ জন শিশুও রয়েছে।

সেখানে আরো বলা হয়, জানুয়ারিতে ৩৮৩টি দুর্ঘটনায় ৫৩ নারী ও ৭১ শিশুসহ ৪১১ জনের প্রাণহানি এবং ৭২৫ জন আহত হয়েছে। ফেব্রুয়ারিতে ৪০১টি দুর্ঘটনায় নিহত ও আহত হয়েছে যথাক্রমে ৪১৫ জন ও ৮৮৪ জন আহত। নিহতের তালিকায় ৫৮ নারী ও ৬২ শিশু রয়েছে। মার্চে ৩৮৪টি দুর্ঘটনায় ৪৬ নারী ও ৮২ শিশুসহ ৩৮৬ জন নিহত ও ৮২০ জন আহত হয়েছে। এপ্রিলে দুর্ঘটনা ঘটেছে ৩২৭টি। এতে ৩৪০ জন নিহত ও ৬১০ জন আহত হয়েছে। নিহতদের মধ্যে ৩৮ নারী ও ৫৩ শিশু রয়েছে।

তার মানে সড়ক দুর্ঘটনা কোনোভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা যাচ্ছে না। কিন্তু কেন? আমরা জানি, এ নিয়ে সরকার একটি কমিটিও করে দিয়েছে। বিতর্কিত পরিবহন শ্রমিক নেতা শাজাহান খান আবার সেই কমিটির চেয়ারম্যান। এরই মধ্যে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে কিছু সুপারিশও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে জমা দিয়েছে কমিটি। কিন্তু সেই সুপারিশ বাস্তবায়িত হবে কবে? আর কমিটির সুপারিশ কতটা বাস্তব সম্মত? এসব নিয়েও প্রশ্ন আছে।

আমরা মনে করি, কমিটি, সুপারিশ, পরিকল্পনা – এসবের আগে প্রয়োজন সড়কের বেপরোয়া চালকদেরকে নিয়ন্ত্রণ করা। তারপর বিভিন্ন মেয়াদী সুপারিশ বা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা যাবে। কিন্তু এভাবে আর কতদিন? এ বিষয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা নিরাপদ সড়কের বিকল্প নেই।