সামাজিক সচেতনতাই সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারে বলে মন্তব্য করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যলয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক ড. আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক।
তিনি বলেন, সড়ক দুর্ঘটনা প্রতিরোধে আমাদের সামাজিক সচেতনতা সৃষ্টি করতে হবে। এই সামাজিক সচেতনতাই সড়ক দুর্ঘটনা কমাতে পারে। এর বাইরে আমি আর কোনো পথ দেখি না। যিনি গাড়ি চালাবেন তাকে সচেতন হতে হবে, যিনি যাত্রী তাকেও সচেতন হতে হবে।
বৃহস্পতিবার দুপুরে শাহবাগে অবস্থিত জাতীয় যাদুঘরের সামনে আয়োজিত এক মানববন্ধনে তিনি এসব কথা বলেন। ‘সড়কে রক্তপাত ও প্রাণহানি বন্ধ করো, জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করো’ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে মানববন্ধনের আয়োজন করে দীপ্ত স্লোগান।
আরেফিন সিদ্দিক বলেন, প্রতিদিন যেভাবে দেশের বিভিন্ন জায়গায় সড়ক দুর্ঘটনায় মানুষ মৃত্যুববরণ করে, এজন্য কাউকে এককভাবে দায়ী করা ঠিক হবে না। এখানে সরকার, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী, চালক, যাত্রী, পথচারী, সড়ক পরিবহন, সংক্রান্ত সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সকলের দায়িত্ব আছে। আমরা যদি আমাদের দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করি, তাহলে নিশ্চয়ই এ সড়ক নিরাপদ সড়কে পরিণত হবে।
তিনি বলেন, অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় কোনো কারণে দুর্ঘটনা ঘটে গেলে চালক আক্রান্ত ব্যক্তিকে রেখে পালিয়ে যায়। এটা কোনো সভ্য দেশে কাম্য নয়। দুর্ঘটনার পরে আক্রান্ত ব্যক্তিকে সঠিক চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে। এই বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি করতে হবে।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়েন সাবেক এই ভিসি বলেন, অনেক সময় যাত্রীরা তাদের গন্তব্যে দ্রুত পৌছানোর জন্যে চালককে দ্রুত গাড়ি চালাতে বলে। সেই কারণে চালক দ্রুত গাড়ি চালাতে গিয়ে যদি কোনো দুর্ঘটনা ঘটায়, তাহলে সেই দায় শুধু চালকের একার নয়। যাত্রীদেরও সেই দায় বহন করতে হবে। কেননা চালককে দ্রুত গাড়ি চালানোর জন্যে চাপ দেয়াও একটা অপরাধ। এই বিষয়ে সকলকে সচেতন করতে হবে।
দীপ্ত স্লোগানের আহ্বায়ক সাখাওয়াত আল আমিনের সভাপতিত্বে মানববন্ধনে আরো বক্তব্য রাখেন দূর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের শিক্ষক জুয়েল মিয়া।
মানববন্ধনে সড়কে জীবনের নিরাপত্তার জন্য ১১দফা দাবি উপস্থাপন করেন সংগঠনটির আহ্বায়ক সাখাওয়াত আল-আমিন।
দাবিগুলো হলো:
১. ঈদের আগেই সব মহাসড়ক চলাচল উপযোগী করতে হবে এবং দুর্ঘটনা প্রবন এলাকাগুলো চিহ্নিত করে সতর্কবানী টাঙাতে হবে।
২. ঈদ সার্ভিস চালু হওয়ার আগেই পরিবহন কোম্পানিগগুলো যেন তাদের চালক এবং সহকারীদের সড়ক নিরাপত্তা এবং ট্রাফিক সিগন্যালের ব্যাপারে যথাযথ প্রশিক্ষণ দেয় সে ব্যাপারে তাদের বাধ্য করতে সড়ক পরিবহন মন্ত্রণালয় এবং বিআরটিএকে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে।
৩. ফিটনেসবিহীন যানবাহনগুলো যেন কোনো অবস্থাতেই মহাসড়কে চলতে না পারে সে ব্যাপারে ব্যবস্থা নিতে হবে।
৪. রাজধানীতে চলাচলকারী গণপরিহননগুলো যেন যত্রতত্র না থামিয়ে নির্দিষ্ট জায়গা থেকে যাত্রী তোলা এবং নামানোর ব্যবস্থা করে সে ব্যাপারে তদারকি করতে হবে।
৫. প্রতিটি সিগনালে পর্যাপ্ত সংখ্যক ট্রাফিক পুলিশ মোতায়েন করতে হবে এবং প্রয়োজনে সিগনাল বাতি চালু করতে হবে।
৬.উল্টোপথে গাড়ি চালালে বা ফুটপাত ধরে বাইক চালালে সে যেই হোক না কেনো, তাকে আইনের আওতায় এনে শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
৭. ফুট-ওভারব্রিজ এবং আন্ডারপাসগুলো প্রয়োজনীয় মেরামত এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন করে জনসাধারণের চলাচল উপযোগী করতে হবে। ফুটওভারব্রিজ এবং আন্ডারপাস থাকা সত্ত্বেও যদি কেউ তা না ব্যবহার করে সড়ক পারাপারের চেষ্টা করে তবে তাকে জরিমানা-শাস্তির আওতায় আনতে হবে।
৮. বয়োবৃদ্ধ-শিশু এবং শারীরিকভাবে অক্ষম লোকদের জন্য জেব্রা ক্রসিংগুলো কার্যকর করতে হবে এবং বাড়াতে হবে। পরিবেশবান্ধব যানবাহনগুলোকে উৎসাহিত করতে আলাদা সাইকেল লেনের ব্যবস্থা করতে হবে।
৯. ফুটপাতগুলো দখলমুক্ত করে জনসাধারণের চলাচল উপযোগী করতে হবে এবং রাতে চলাচল নির্বিঘ্ন করতে সড়ক বাতিগুলো ঠিক করতে হবে এবং প্রয়োজনীয় জায়গাগুলোতে নতুন করে স্থাপন করতে হবে।
১০. গণপরিবহনসহ সড়কে নারীর নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে এবং নারী নিপীড়নকারীদের কঠোর শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
১১. সড়কে নিহত এবং আহত ব্যক্তি অথবা তার পরিবারকে সরকারের পক্ষ থেকে পর্যাপ্ত আর্থিক সহায়তা নিশ্চিত করতে হবে।