চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ

সৎ কাজের আদেশ ও অসৎ কাজের নিষেধ

“তোমরাই সর্বোৎকৃষ্ট উম্মত। তোমাদের আবির্ভাব হয়েছে মানবজাতির জন্য। তোমরা সৎ কাজের আদেশ দাও এবং অসৎ কাজে নিষেধ করো এবং আল্লাহকে বিশ্বাস করো” (সূরা আল-ইমরান : ১১০)।

আলোচ্য আয়াতে আল্লাহ তা‘আলা আমাদেরকে সর্বোৎকৃষ্ট, শ্রেষ্ঠ উম্মত বলে সুস্পষ্ট ঘোষণা দিলেন। এবং সাথে সাথে শ্রেষ্ঠ উম্মত হিসেবে আমাদের কাজ কী হবে তাও বলে দিলেন। সাবলীল ভাষায় হুকুম দিলেন, ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’।

এ প্রসঙ্গে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “সেই মহান সত্তার শপথ যার হাতে আমার প্রাণ, তোমরা অবশ্যই অবশ্যই সৎ কাজের আদেশ করবে এবং অসৎ কাজ থেকে বিরত রাখবে। অন্যথায় আল্লাহ তা‘আলা তোমাদের উপর অবশ্যই আযাব নাযিল করবেন। এরপর তোমরা যখন আল্লাহকে ডাকবে তিনি তোমাদের ডাকে সাড়া দিবেন না” (মিশকাত শরীফ : ৪৩৬)।

কুরআন শরীফে আল্লাহ পাক বান্দাদের ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ সম্পর্কে সরাসরি হুকুম জারি করলেন। অতঃপর রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম নিজেও আপন উম্মতকে এ ব্যাপারে সতর্ক করলেন। আল্লাহ এবং তাঁর রাসুল উভয়ের একই বাণী দ্বারা আমরা উপলব্ধি করতে পারছি যে, ইসলামে ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ কতটা গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যবহ। আদেশ-নিষেধের পদ্ধতি মানুষকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ কিভাবে করব সেটাও ইসলামী শরীয়তে বলা আছে।

ভাল কাজের প্রতি মানুষকে আহ্বান করার পদ্ধতি সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “তুমি মানুষকে তোমার প্রভুর পথে আহ্বান করো কৌশল, উত্তম উপদেশ এবং উৎকৃষ্ট তর্কের মাধ্যমে” (সূরা নাহল : ১২৫)। অত্র আয়াতে আল্লাহ পাক আমাদেরকে ‘সৎ কাজে আদেশ’ প্রদানে তিনটি মাধ্যম ব্যবহার করতে বলেছেন। (১) হিক্মত তথা কৌশল, দক্ষতা। (২) উত্তম উপদেশ। (৩) উৎকৃষ্ট তর্ক বা উত্তম যুক্তি প্রদর্শন।

এ সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ হাদিস বিদ্যমান। রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেন, “তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি গর্হিত-মন্দ কাজ হতে দেখবে সে যেন তা আপন হাত দ্বারা প্রতিহত করে। যদি তার সামর্থ্য না থাকে তবে মুখ দ্বারা। তাও যদি সম্ভব না হয় তবে হৃদয়ে ঐ মন্দ কর্মের প্রতি ঘৃণিত ভাব পোষণ করবে। আর এটাই হচ্ছে ঈমানের দুর্বল স্তর” (মিশকাত শরীফ : ৪৩৬)।

এখন আমরা যদি আল্লাহ এবং তাঁর রাসুলের দেখানো পন্থা মোতাবেক ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ করতে পারি তবে এটা অবশ্যই ফলপ্রসূ হবে। নিজ সত্তায় আমল: আমি যখন কাউকে ন্যায় কাজের প্রতি আহ্বান করব তখন আমার চিন্তা করতে হবে যে, আমি ঐ ন্যায় কাজ করছি কি না। যখন কাউকে নিষিদ্ধ বস্তু থেকে বিরত রাখতে যাব তখন ভাবতে হবে আমি নিজে ঐ মন্দ কাজ থেকে বিরত আছি কি না। এটাই ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ এর মানদণ্ড। প্রথমে নিজে আমল করতে হবে। অতঃপর অপরকে বলতে হবে।

এ সম্পর্কে আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “হে ইমানদারগণ! কেন তোমরা তা বল, যা তোমরা নিজেরাই করো না? আল্লাহর নিকট এটি বড় অপছন্দনীয় যে, তোমরা তা বল যা তোমরা করো না” (সূরা সাফ্ফ : ২,৩)। ‘যা বলে তা না করা’র ভয়াবহতা সম্পর্কে রাসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, “আমি মি’রাজের রাতে এমন কিছু ব্যক্তিকে দেখেছি যাদের ঠোঁটগুলো আগুনের কাঁচি দ্বারা কর্তন হচ্ছে। আমি জিব্রাইল (আঃ)- কে জিজ্ঞাসা করলাম, এরা কারা? জিব্রাইল (আঃ) উত্তরে বললেন, এরা আপনার উম্মতের সেসব উপদেশদাতা যারা অন্যকে সৎকাজের আদেশ দিত অথচ নিজেরাই ছিল উদাসীন” (মিশকাত শরীফ)।

আলোচ্য কর্মের প্রতিদান: যারা ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ করবে তাদের প্রতিদান কী হবে? প্রভু তাদেরকে কীভাবে পুরস্কৃত করবেন? আল্লাহ তা‘আলা বলেন, “যারা সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করবে তারাই হবে সফলকাম” (সূরা আল-ইমরান : ১০৪)। ‘সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ’ যে করবে তার জন্য রয়েছে প্রভুর পক্ষ থেকে সফলতার নিশ্চয়তা। সাথে আমলনামায় সওয়াব তো লেখা হবেই।

আসুন, এই মহান কর্ম সম্পাদনের মাধ্যমে আমরা আমাদের ‘শ্রেষ্ঠত্ব’ সম্পর্কে জানান দেই। আল্লাহ তা‘আলা আমাদের সকলকে সৎ কাজের আদেশ এবং অসৎ কাজের নিষেধ করার তৌফিক দান করুক, আমিন।