সাউথ আফ্রিকা ছেড়েছেন, কিন্তু বল টেম্পারিংয়ের কলঙ্ক ফেলে আসতে পারেননি স্টিভেন স্মিথ। দেশে পা রেখে সংবাদমাধ্যমের সামনে এসে কান্নায় ভেঙে পড়েছেন অস্ট্রেলিয়ার সদ্যসাবেক অধিনায়ক, চেয়েছেন ক্ষমাও। তাতেও কলঙ্কের বোঝা ঘাড় থেকে নামছে না! সংঘবদ্ধভাবে টেম্পারিংয়ের মতো অপরাধে জড়ানোর মূল হোতা হওয়ার দায়টা হয়ত বয়ে বেড়াতে হবে সারাজীবনই।
ক্ষমা চেয়ে কষ্ট যদি কিছুটা লাঘব নাও হয়, এক জায়গায় চোখ রেখে খানিকটা সান্ত্বনা পেলেও পেতে পারেন স্মিথ! দেশকে লজ্জায় ডোবানোর তালিকায় যে তিনি একা নন। খ্যাতিমান আরও অনেক অধিনায়কই সারাজীবন বয়ে বেড়ানোর মত ভুল করেছিলেন-
হ্যান্সি ক্রনিয়ে (সাউথ আফ্রিকা)
সাউথ আফ্রিকা ক্রিকেটে একইসঙ্গে মহানায়ক ও মহাখলনায়কের নাম হ্যান্সি ক্রনিয়ে। প্রোটিয়া ক্রিকেটের একমাত্র বৈশ্বিক শিরোপাটি এসেছিল তার নেতৃত্বেই। ১৯৯৮ সালে, বাংলাদেশে হওয়া মিনি বিশ্বকাপ খ্যাত টুর্নামেন্টের শিরোপা। এর দুই বছর পর ইংল্যান্ডের বিপক্ষে পাঁচ টেস্টের সিরিজের শেষটিতে জানা গেল, পুরো সিরিজজুড়েই ম্যাচ পাতিয়েছেন ক্রনিয়ে! বিনিময়ে পেয়েছেন চামড়ার দামি জ্যাকেট ও নগদ অর্থ।
ছিলেন সাউথ আফ্রিকার খেলাধুলার জগতে অন্যতম পোস্টার বয়। কিন্তু ম্যাচ পাতিয়ে একধাক্কায় হয়ে গেলেন খলনায়ক। হন সারাজীবনের জন্য ক্রিকেট থেকে নিষিদ্ধও। পরে উচ্চআদালতে আপিল করেও পাননি কোন ইতিবাচক ফলাফল। কাদের ইন্ধনে ম্যাচ পাতিয়েছিলেন, সেই বিষয়ে মুখ খোলার আগেই ২০০২ সালে এক রহস্যময় বিমান দুর্ঘটনায় নিহত হোন প্রোটিয়াদের সর্বকালের অন্যতম সেরা ও কলঙ্কিত এ অধিনায়ক।
মাইক গ্যাটিং (ইংল্যান্ড)
১৯৮৮ সালে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজের একটি টেস্টের আগে জানা গেল হোটেল পরিচারিকার সঙ্গে জোরপূর্বক যৌন সম্পর্ক করেছেন ইংলিশ অধিনায়ক মাইক গ্যাটিং। তাতে পরে গেল হইচই। নিষিদ্ধ হলেন গ্যাটিং।
যদিও গ্যাটিং বিশ্বাস করেন অন্যকিছুই। ১৯৮৭ সালে এক ঘটনার কারণে নিজের ক্যারিয়ারের কবর নিজেই খুঁড়েছিলেন। ফয়সালাবাদ টেস্টে পাকিস্তানের বিপক্ষে পাকিস্তানি আম্পায়ার শাকুর রানার সঙ্গে প্রকাশ্যে গালিগালাজ করেছিলেন গ্যাটিং। ২০১১ সালে এক সাক্ষাৎকারে জানান, সেই ঘটনার জের ধরেই এক বছর পর অধিনায়কত্ব হারান তিনি।
প্যাট্রিস এভরা (ফ্রান্স)
ছিলেন কূটনীতিবিদের সন্তান। কিন্তু ফুটবলের মাঠে ‘কূট’ নীতিতে দেশ ফ্রান্সকে লজ্জায় ফেলেছিলেন প্যাট্রিস এভরা। ২০১০ সালের ফুটবল বিশ্বকাপের গ্রুপপর্ব থেকেই বাদ হয়ে যায় ২০০৬ সালের রানার্সআপরা। কী কারণ সেটা খুঁজতে গিয়ে বেরিয়ে পড়ল লজ্জাকর কারণও।
ফরাসি সংবাদ মাধ্যমগুলোর অনুসন্ধানে বেরিয়ে পড়ে তৎকালীন কোচ রেমন্ড ডমেনেখের সঙ্গে অনুশীলন মাঠে অধিনায়ক এভরার প্রকাশ্য দ্বন্দ্বের খবর। আরেক গোলমেলে সতীর্থ নিকোলাস আনেলকার সঙ্গে মিলে ডমেনেখকে বিদায় করার জন্য উঠেপড়ে লেগেছিলেন ফরাসি অধিনায়ক। এর জেরে পাঁচ ম্যাচ নিষেধাজ্ঞার সঙ্গে অধিনায়কত্ব কেড়ে নেয়া হয় এভরার।
রয় কিন (আয়ারল্যান্ড)
২০০২ বিশ্বকাপের আগে আয়ারল্যান্ড ফুটবল দলের অধিনায়কের বাহুবন্ধনী ওঠে তার হাতে। কিন্তু একটি প্রস্তুতি ম্যাচে ম্যানেজার মাইক ম্যাক্কার্থির সমালোচনায় মুখর হয়ে ওঠেন রয় কিন।
সংবাদ মাধ্যমে ম্যানেজার ও দলের বাজে ব্যবস্থাপনার বিপক্ষে অশ্রাব্য গালিগালাজ করেন। ফলাফল, তীব্র সমালোচনার মুখে বিশ্বকাপের আগেই নেতৃত্ব থেকে ছাঁটাই হন ম্যানইউ গ্রেট।
উইল কার্লিং (ইংল্যান্ড)
১৯৯৫ সালের রাগবি বিশ্বকাপ কাছাকাছি। এর কয়েক মাস আগে দলকে জেতান থ্রি ফাইভ ন্যাশন্স গ্র্যান্ড স্লাম। উইল কার্লিংয়ে ভরসা ইংলিশ রাগবি দলের। কিন্তু সেসময় হঠাৎ টিভি ক্যামেরায় ধরা পড়ল, দলের ম্যানেজার জন হোমসকে নিয়ে বাজে ঠাট্টা করছেন অধিনায়ক।
‘৫৭ বছরের বুড়ো ভাম’ বলে ম্যানেজারকে নিয়ে তামাশা করে দেশবাসির বিরাগভাজন হন উইল। কেড়ে নেয়া হয় তার অধিনায়কত্ব। পরে অবশ্য ৫৭ বছর বয়সী জন হোমসের কল্যাণেই অধিনায়কত্ব ফিরে পান উইল। ততদিনে যা জোটার তকমা জুটে যায়!
স্মিথ এখন তাদের কাতারেই। ওয়ার্নার-বেনক্রফটকে সঙ্গী করে রীতিমত পরিকল্পনা করে বল টেম্পারিং করেছেন কেপটাউন টেস্টে। জেরে স্মিথ-ওয়ার্নারকে এক বছরের জন্য নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া। ব্যানক্রফট ৯ মাসের সাসপেন্ড। নিষেধাজ্ঞা মেলার আগেই অজি দলের অধিনায়কত্ব ছাড়েন স্মিথ। আদতে ছাড়তে বাধ্য করা হয়।
সঙ্গে বছর পর ক্রিকেটে ফিরলেও আগামী দুবছর অজি দলের নেতৃত্বে বিবেচনা করা যাবে না তাকে। আইপিএল দল রাজস্থান রয়্যালসের নেতার পদও ছাড়তে হয়েছে। খেলাই হচ্ছে না ফ্র্যাঞ্চাইজি টুর্নামেন্টটিতে। অস্ট্রেলিয়া দলের স্পন্সর তো ছেড়ে যাচ্ছেই, স্মিথের ব্যক্তিগত স্পন্সররাও মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে।