দেশে-বিদেশে এই সময়ে নানা কারণে আলোচিত বিষয় স্মার্ট ভিলেজ। মূলত ‘স্মার্ট ভিলেজ’ ধারণাটি গ্রামের গ্রামীণ জীবনমানের টেকসই উন্নয়ন, নৈতিক মূল্যবোধ ও জীবনযাত্রার সার্বিক মান উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।
আরো সহজভাবে বললে, স্মার্ট ভিলেজ হলো – কোনো গ্রামের কৌশলগত অংশীদারদের সহায়তায় এমন একটি মডেল গ্রাম প্রতিষ্ঠা করা, যার মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণ ও অর্থনীতির মধ্যে একটি মেলবন্ধন প্রতিষ্ঠিত হয়।
বাংলাদেশে স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ জনগণের দারিদ্র্য বিমোচন ও বৈষম্য হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ণ, খাদ্য নিরাপত্তা অর্জনে নিশ্চয়তা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সুবিধা প্রাপ্যতা, শিক্ষা, স্বাস্থ্যসেবা ও পরিবার কল্যাণ, গ্রামীণ যোগাযোগ, জলবায়ু পরির্তনে ঝুঁকি মোকাবেলা ও পরিবেশ সুরক্ষা, শিশু কল্যাণ ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন পূরণ করবে। সেই সাথে আগামী পাঁচ বছরে আওয়ামী লীগ সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী ‘সমৃদ্ধির অগ্রযাত্রায় বাংলাদেশ’ অর্জনে স্মার্ট ভিলেজ পরিকল্পনা একটি অগ্রণী ভূমিকা পালনে সক্ষম হবে।
স্মার্ট ভিলেজের মূল লক্ষ্য
‘আমার গ্রাম আমার শহর’। মানে বাংলাদেশের প্রতিটি গ্রামে আধুনিক নগর সুবিধা সম্প্রসারণ করা।
যেসব উদ্দেশ্য থেকে স্মার্ট ভিলেজ
উন্নত রাস্তাঘাট, যোগাযোগ, সুপেয় পানি, আধুনিক স্বাস্থ্যসেবা ও সুচিকিৎসা, মানসম্পন্ন শিক্ষা, উন্নত পয়ঃনিষ্কাশন ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ বৃদ্ধি, কম্পিউটার ও দ্রুত গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা, বৈদ্যুতিক সরঞ্জামসহ মানসম্পন্ন ভোগ্যপণ্যের বাজার সম্প্রসারণের মাধ্যমে প্রতিটি গ্রামকে আধুনিক শহরের সকল সুবিধাদি নিশ্চিত করা
গ্রামে বিদ্যুৎ ও জ্বালানি সরবরাহ আরও বাড়ানো ও নির্ভরযোগ্য করার লক্ষ্যে গ্রুপ ভিত্তিতে বায়োগ্যাস প্লান্ট ও সৌরশক্তি প্যানেল স্থাপনে সহায়তা দেয়া।
গ্রাম পর্যায়ে কৃষিযন্ত্র সেবা কেন্দ্র, ওয়ার্কশপ স্থাপন করে যন্ত্রপাতি মেরামতসহ গ্রামীণ যান্ত্রিকায়ণ সেবা সম্প্রসারণের মাধ্যমে গ্রামীণ যুবক ও কৃষি উদ্যোক্তাদের প্রশিক্ষণ দিয়ে অধিক উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থান তৈরি করা।
অকৃষি খাতের সেবা নিশ্চিত করণের জন্য হাল্কা যন্ত্রপাতি তৈরি ও বাজারজাত করতে বেসরকারি খাতের প্রান্তিক ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের প্রয়োজনীয় ঋণ সহায়তা দেয়া।
স্মার্ট ভিলেজের কার্যক্রম
নিয়মিত সঞ্চয় সংগ্রহের মাধ্যমে পুঁজি গঠন (মাইক্রো সেভিংস), ট্রেড ভিত্তিক ক্ষুদ্র ও ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা ঋণ সহায়তা, ট্রেড ভিত্তিক স্বল্প ও দীর্ঘ মেয়াদী প্রশিক্ষণ, সুফলভোগীদের উৎপাদিত পণ্য বাজারজাত করা (ভ্যালু চেইন), অফগ্রিড এবং বিদ্যুৎ সুবিধা বঞ্চিত এলাকায় সোলার কার্যক্রম হাতে নেওয়া, বায়োগ্যাস কার্যক্রম পরিচালনা, পয়ঃনিষ্কাশন ও সুপেয় পানি সরবরাহ নিশ্চিত করা, শিশু ও বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা এবং সমন্বিত অটোমেশন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ করা।
স্মার্ট ভিলেজের যেসব অর্জন
দেশের দারিদ্র্য বৈষম্য হ্রাসসহ দারিদ্র্যসীমা ও চরম দারিদ্র্যসীমার হার যথাক্রমে ১২.৩ শতাংশ ও ৫.০ শতাংশে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে। তৈরি হবে আত্ম-কর্মসংস্থানের সুযোগ। পাশাপাশি নিজস্ব পুঁজির মাধ্যমে স্বল্প ও মধ্যম আকারের প্রকল্প গ্রহণ করতে সক্ষম হবে বহু মানুষ।
নারী ও পুরুষের সমতা নিশ্চিত এবং দেশের খাদ্য ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পাবে। গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য ও পুষ্টি সেবা এবং গ্রামে উৎপাদিত পণ্যের ন্যায্য মূল্য প্রাপ্তি নিশ্চিত হবে।
একই সঙ্গে জলবায়ু ঝুঁকি মোকাবেলা ও পরিবেশ রক্ষা সম্ভব হবে।
উন্নয়নের রোল মডেল
স্মার্ট ভিলেজ বাস্তবায়নের মাধ্যমে গ্রামীণ মানুষের জীবনমান উন্নয়ন, দারিদ্র্য হ্রাস, শিক্ষা ও চিকিৎসার সুযোগ বিস্তার, শিশু ও মাতৃমৃত্যুর হার হ্রাস, নারীর ক্ষমতায়ণসহ আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের জন্য উন্নয়নের রোল মডেল হিসেবে কাজ করবে। সরকারের নির্বাচনী ইশতেহার অনেকটাই বাস্তবায়ন সম্ভব হবে।
কেননা এর মাধ্যমে পল্লী জনপদের দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে ঋণ সহায়তা দিয়ে তাদের অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে প্রতিটি পরিবারে অন্তত একজনের নিয়মিত রোজগার নিশ্চিত হবে। বেকারত্বের হার ২০২৩ সালে ১২ শতাংশে নামিয়ে আনতে অতিরিক্ত ১ কোটি ৫০ লাখ মানুষের কর্মসংস্থানসহ দরিদ্র জনসংখ্যা ২.২ কোটির নীচে নামিয়ে আনা সম্ভব হবে বলে আমি মনে করি।
(এ বিভাগে প্রকাশিত মতামত লেখকের নিজস্ব। চ্যানেল আই অনলাইন এবং চ্যানেল আই-এর সম্পাদকীয় নীতির সঙ্গে প্রকাশিত মতামত সামঞ্জস্যপূর্ণ নাও হতে পারে।)