করোনাভাইরাসের কারণে দেশের স্বাস্থ্যখাতের পাশাপাশি অন্যান্য খাতের করুণচিত্র সম্মুখে চলে এসেছে নানা সময়ে। বৃহত্তর জনগোষ্টির কল্যাণ চিন্তা করে সরকারের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যখাতের পাশাপাশি দেশের ব্যবসা-বাণিজ্যে বিশেষ সুবিধা দেয়া হয়েছে। এছাড়া ২০২০ সালের পুরো সময় ঋণ পরিশোধেও ছিল বিশেষ ছাড়।
এতকিছুর পরেও খেলাপি ঋণের পরিমাণ ভয়াবহ আকারে বেড়েছে বছরের প্রথম তিন মাসে। বাংলাদেশ ব্যাংকের সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংকের মার্চের তথ্য অনুযায়ী, বছরের প্রথম তিন মাসে সরকারি-বেসরকারি প্রায় সব ব্যাংকের খেলাপি ঋণ বেড়েছে। এর মধ্যে করোনায় ক্ষতিতে পড়া ব্যবসায়ীরা যেমন আছেন, আবার পুনঃতফসিল করা ঋণও নতুন করে খেলাপি হয়ে পড়েছে। প্রথম তিন মাসেই ব্যাংকের খেলাপি ঋণের পরিমাণ প্রায় ৬ হাজার কোটি টাকা বেড়েছে। তাতে খেলাপি ঋণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯৫ হাজার ৮৫ কোটি টাকা- যা মোট ঋণের ৮ দশমিক শূন্য ৭ শতাংশ।
সামনের দিনে ব্যাংকের খেলাপি ঋণের বোঝা আরও বৃদ্ধির আশঙ্কা করছেন ব্যাংকাররা। গণমাধ্যমে উঠে আসছে নানা ব্যাংকের নানা ধরনের চিত্র। একবছর যেহেতু ঋণ পরিশোধ না করেও খেলাপি তালিকায় নাম ওঠার শঙ্কা ছিল না, সেজন্য অনেক ভাল ব্যবসায়ীও ঋণ পরিশোধ করা ভুলে গেছেন। ফলে গাণিতিক হারে বাড়ছে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ও তালিকা। বিষয়গুলো খুবই উদ্বেগজনক!
বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, গত ডিসেম্বর শেষে ব্যাংক খাতে ঋণ ছিল ১১ লাখ ৫৮ হাজার ৭৭৫ কোটি টাকা। এর মধ্যে খেলাপি ঋণের পরিমাণ ৮৮ হাজার ৭৩৪ কোটি টাকা। সেই হিসাবে ঋণের ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ খেলাপি ছিল। এখন যা আরও বেড়েছে।
আরেকটি বিষয় লক্ষ্য করার মতো, সরকারের প্রণোদনা সুবিধা নিয়েও অনেক ব্যবসায়ী ও প্রতিষ্ঠান নিরবে তাদের প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দিচ্ছে, নয়তো নানা অজুহাতে নানা প্রেক্ষাপট তৈরি করছে। এসব বিষয়ে সরকারের ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানগুলোর বিশেষ নজরদারি প্রয়োজন বলে আমরা মনে করি। এছাড়া দেশের পুঁজিবাজারে হঠাৎ হঠাৎ অস্বাভাবিক উত্থানের ঘটনাও সামাজিক মাধ্যমসহ গণমাধ্যমে আলোচিত হচ্ছে। এখানেও যেন কোনো ধরণের অনাকাঙ্খিত ঘটনা না ঘটে, সেদিকেও নজর দেয়া একান্ত জরুরি।
করোনা সারাবিশ্বের মতো আমাদের জনজীবন ও অর্থনীতিতেও আঘাত হেনেছে মারাত্মক আকারে। এই অবস্থা থেকে উত্তরণে প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা, ব্যবস্থাপনা ও তদারকি; তাহলে হয়তো সবকিছু ধীরে ধীরে আগের ধারায় পৌঁছাতে পারবে।