ফুটবলকে সঙ্গী করে একাত্তরের রণাঙ্গনে অন্যরকম এই লড়াইয়ে নেমেছিলেন একদল স্বাধীনতাকামী ফুটবলার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে বিশ্ব জনমত গঠনে অবিস্মরনীয় অবদান রাখা স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের সদস্যরা হয়েছেন ইতিহাসের অংশ, মিলেছে মুক্তিযোদ্ধার স্বীকৃতিও। তবে জোটেনি যোগ্য সম্মান। বিস্মৃতির অতলে হারিয়ে যেতে বসা সেই দলের একেকজন আজ ক্লান্ত জীবনযুদ্ধে অবিরাম লড়াইয়ে।
একাত্তরের রণাঙ্গনে প্রিয়সঙ্গী ফুটবলকে নিয়ে ব্যতিক্রমী এক যুদ্ধে নেমেছিলেন পূর্ববঙ্গের একদল বাঙালি ফুটবলার। বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশ্ব জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন ছাড়াও এই মুক্তিসেনারা ভারতের বিভিন্ন প্রান্তে ফুটবল খেলে অর্জিত প্রায় পাঁচ লাখ টাকা দিয়েছিলেন প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের তহবিলে। ৩০ সদস্যের সেই দলের পাঁচজন পৃথিবী ছেড়েছেন। যারা বেঁচে আছেন তাদেরই একজন ফুটবলার আইনুল, স্বাধীনতার ৪৫তম বার্ষিকী পালন করেছেন মরণব্যাধি ক্যান্সারকে সঙ্গী করে।
ফুসফুসে বাসা বেঁধেছে মরণঘাতী ক্যান্সার। একসময়ের ঢাকা মোহামেডানের এই নামী ডিফেন্ডার ক্যান্সারের পাশাপাশি লড়ছেন দারিদ্রের সঙ্গেও। কেমোথেরাপির জন্য প্রতিমাসে ষাট হাজার টাকা যোগাড় করতে হিমসিম খাচ্ছেন তিনি।
ফুটবলার আইনুল বলেন, দুই হাতে বন্দুক নিয়ে যুদ্ধ করছে আর আমরা ফুটবল নিয়ে যুদ্ধ করেছি। এখন একটা বিরাট অসুবিধার মধ্যে পড়েছি, এখন আল্লায় জানেন কে কতটুকু সাহায্য করবে।
তিনি আরো বলেন, এখন শরীরের অবস্থা অনেক খারাপ ডাক্তার বলেছে অনেক টাকার প্রয়োজন। কিন্ত আমার এ গরীবের জন্য এতো টাকা সংগ্রহ করা সম্ভব না।
মুক্তিযোদ্ধার কাগুজে স্বীকৃতি জুটেছে এক যুগ আগে। মাসিক ভাতার অংক বাড়েনি, স্মারক না থাকায় বিস্মৃতির অতলে তাদের কীর্তিগাথা।
একাত্তরে স্বাধীন বাংলা দলের প্রথম ম্যাচ খেলার দিন ২৪ জুলাইকে জাতীয় ক্রীড়া দিবস ঘোষণার দাবি স্বাধীন বাংলা ফুটবল দলের।
জাকারিয়া পিন্টু বলেন, আমার এ জন্য কোন ক্ষোভ নাই, কিন্তু একটা অভিমান আছে। সে অভিমানটা হলো, রাষ্ট্র এখনো আমাদেরকে রাষ্ট্রীয়ভাবে স্বীকৃতি দেয় নাই।
তিনি আরো বলেন, আমি বলেছিলাম যে, আমাদের মৃত্যুর পরে বিলুপ্ত হয়ে যাবে স্বাধীন বাংলা টিম, কিন্ত আমি প্রজম্মের কাছে বেঁচে থাকতে চাই যেন ২৪ জুন জাতীয় ক্রীড়া দিবস করা হয়। এ ক্রীড়া দিবস হলে তরুণ প্রজন্ম জানবে আমাদের সর্ম্পকে স্বাধীন বাংলা ফুটবল সর্ম্পকে।
এই দলের কেউ কেউ পেয়েছেন সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি। তবে প্রতিশ্রুতি দিয়েও স্বাধীন বাংলা দলকে দেয়া হয়নি স্বাধীনতা পদক। আশরাফ আলি বলেন, স্বাধীন বাংলা টিমের আমরা কোন স্বীকৃতি পাই নাই।
ফুটবল মাঠের মুক্তিসেনাদের আশা, স্বাধীনতা সংগ্রামে নেতৃত্ব দেয়া দল আওয়ামী লীগ সরকারের আমলেই জুটবে প্রতিশ্রুত স্বীকৃতি।