ভোর থেকে পলাশীর মোড়ে বাবার হাত ধরে দাঁড়ানো ছোট্ট নুসাইবা। হাতে ফুলের তোড়া, গায়ের পোশাকে স্বরবর্ণ-ব্যঞ্জনবর্ণের আধিক্য, পাশের সারিতে ক্ষুদে রূপকথার মুখে বর্ণের ছটা। লক্ষ্য একটাই আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসে চেতনার শহীদ মিনারের বেদীতে ফুলেল শ্রদ্ধা নিবেদন।
শুক্রবার সকাল থেকে কয়েক ঘণ্টা শহীদ মিনার এলাকা ঘুরে দেখা যায় সাত মাসের শিশু থেকে শুরু করে ষাটোর্ধ্ব বৃদ্ধ শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এসেছেন।
শহীদ মিনারের বেদীতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাবার হাত ধরে নেমে আসে সাত বছরের নাঈমাহ তাসমিয়া, বাবা তাসলিম আহমেদ জানালেন, বইয়ের পাতায় ভাষা আন্দোলন, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা দিবস সব বিষয়ে পড়ছে, কিন্তু আমি চাই সত্যিকার অর্থেই মেয়েকে নিয়ে এই দিবসগুলো মাঠে থাকতে। তাতে ওর মধ্যে একটা বোধ শক্তি গড়ে উঠবে। দেশক ভালোবাসতে শিখবে। তাই আজকে নাঈমাহকে সঙ্গে করে আনা। বাসা থেকে এখন পর্যন্ত আসতে আসতে ভাষা আন্দোলনের বেশ কিছু প্রশ্নেরও জবাব দিতে হয়েছে নাঈমাহকে।
দীর্ঘক্ষণ লাইনে দাঁড়িয়ে থেকেও কোন প্রকার বিরক্ত হয়নি ধানমন্ডি থেকে বাবা-মার সঙ্গে আসা আহনাফ মুনতাসির। বরং গতকাল রাত থেকেই সে অধীর আগ্রহে ছিল কখন সকাল হবে, ফুল দিতে শহীদ মিনারে আসবে।
আহনাফের মা রেহনুমা আলম বললেন, অমর একুশের তাৎপর্য আগামী প্রজন্মের কাছে তুলে ধরতেই সন্তানকে শহীদ মিনারে নিয়ে আসা। ছোটবেলায় নিজেও বাবার হাত ধরে সকালে শহীদ মিনারে গিয়েছি।
মাতৃভাষার জন্য আমাদের যে ত্যাগ, সেটা বোঝাতে শিশু সন্তান সায়রাকে নিয়ে শহীদ মিনারে এসেছেন মা সায়মা ইসলাম। তিনি জানালেন, সন্তানকে বাংলাভাষা সচেতন হিসেবে গড়ে তুলতে চাই। জাতীয় জীবনে বাংলা ভাষার সমৃদ্ধি উন্নতি দরকার। ভবিষ্যত প্রজন্ম যেন বাংলাভাষা ব্যবহারে সচেতন হয় সে ব্যাপারে সংশ্লিষ্টদের পদক্ষেপ গ্রহণে সংশ্লিষ্টদের দৃষ্টি আকর্ষণ করেন তিনি।
শহীদ মিনারের বেদীতে বেশ কিছু শিশুদের ফুল হাতে শ্রদ্ধা জানাতে দেখা যায়। এসব শিশুদের হাতে ছিল ক্ষুদ্রাকৃতির জাতীয় পতাকা, ফুল আর একুশে ফেব্রুয়ারি লেখা মাথায় বাধা লাল-সবুজের ফিতা।
শ্রদ্ধা জানাতে আসা মানুষদের পোশাকেও রয়েছে একুশের ছোঁয়া। মেয়েরা সাদা কালো নকশা করা শাড়ি পরে এসেছেন। যেখানে রয়েছে বাংলা বর্ণমালা। ছেলেদের পাঞ্জাবিতেও রয়েছে একুশের ছাপ। অনেকে ধারণ করেছেন কালো ব্যাজ।
শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে গ্রন্থমেলা প্রাঙ্গণে নেমেছে মানুষের ঢল। শুক্রবার সকাল থেকে অভিভাবকের হাত ধরে মেলা প্রাঙ্গনে আসতে শুরু করে ছোটরা। বাবার কোলে চড়েও এসেছে অনেকে। ক্ষুদে এই পাঠকদের আগ্রহের মধ্যে রয়েছে বিজ্ঞান কল্পকাহিনী, মহাকাশ বিষয়ক সায়েন্স ফিকশন গল্প, ভূতের বই, ছড়া ইত্যাদি।
ছবি: জাকির সবুজ, সাকিব উল ইসলাম