চতুর্থবারের মতো ‘জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার’ পেলেন ঢালিউডের শীর্ষ নায়ক শাকিব খান। হাসিবুর রেজা কল্লোল পরিচালিত ‘সত্তা’ সিনেমার জন্য তাকে যৌথভাবে ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা’ হিসেবে স্বীকৃতি দিল সরকার। ৮ ডিসেম্বর সন্ধ্যায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হাত থেকে পুরস্কার গ্রহণ করেন জনপ্রিয় এ নায়ক। মঙ্গলবার (১০ ডিসেম্বর) যাচ্ছেন পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদে একটি স্টেজ শো-তে। তার আগে শাকিব খান কথা বলেছেন চ্যানেল আই অনলাইনের সঙ্গে…
জাতীয়ভাবে চার বারের মতো ‘শ্রেষ্ঠ অভিনেতা’র স্বীকৃতি পেলেন। কেমন লাগছে?
পুরস্কার ঘোষণার পর থেকে কিছু বিতর্ক ছিল। যাই হোক না কেন মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর হাত থেকে পুরস্কার নেওয়াটা বড় ব্যাপার। প্রয়াত মান্না ভাই ‘ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড’ পেয়েছিলেন। কিন্তু উনি হাতে নিয়ে যেতে পারেননি। কারণ, তখন সময়মতো এগুলো দেওয়ার আন্তরিক চেষ্টা ছিল না। বর্তমান প্রধানমন্ত্রী বছরের একটা দিন চলচ্চিত্রের মানুষদের সময় দেন। নিজে এসে পুরস্কার হাতে তুলে দেন, কুশল বিনিময় করেন এটাই ভালো লাগার বিষয়।
যৌথভাবে আপনি পুরস্কৃত হলেন। বিষয়টি কীভাবে দেখছেন?
যৌথভাবে ঘোষণা দেওয়া নিয়েও প্রথমে খারাপ লেগেছিল। তবে আরিফিন শুভ আমার সঙ্গে পেল। এটা তার প্রথম প্রাপ্তি। এখানে খারাপের কিছু নাই। আর আমার হারানোর কিছু নেই। ন্যাশনাল অ্যাওয়ার্ড ঘোষণার পর বিতর্কের জন্য ভেবেছিলাম পুরস্কার নেব না। কিন্তু আমি না নিলে প্রধানমন্ত্রীকে অসম্মান করা হতো।
প্রধানমন্ত্রী আপনাকে পুরস্কার দেওয়ার সময় হেসে কী যেন বলছিলেন? কী কথা হচ্ছিল আপনাদের মধ্যে?
উনি কেমন আছেন, তার শারীরিক অবস্থা কেমন এসব জিজ্ঞেস করছিলাম। আমাকেও জিজ্ঞেস করেছিলেন, আমি ভালো আছি কিনা, কাজ ঠিকঠাকভাবে করছি কিনা! সবমিলিয়ে উনি খুব খুশি ছিলেন।
পুরস্কার বা যেকোনো অর্জন প্রাপ্তিতে নিজের মধ্যে কোন বিষয়টি অনুভব করেন?
মানুষের জন্যই কাজ করি। তাদের জন্যই এই অ্যাওয়ার্ড পাই। এটার প্রাপ্তি তাদের। আমি আজীবন কৃতজ্ঞ যারা ভালোবাসা দিয়ে আমার যেকোনো পরিস্থিতে পাশে থাকে, উৎসাহ দেয়। যখনই কোনো অর্জন আমার হাতে আসে, তখনই সৃষ্টিকর্তা, বাবা-মায়ের পর তাদের স্মরণ করি। তাদের ভালোবাসা আমাকে নতুন করে কাজ করতে উজ্জীবিত করে।
ক্যারিয়ারে এতো যশ, খ্যাতি, সম্মান আপনার। জীবনে কখনো কোনো অপ্রাপ্তি অনুভব করেন?
জীবনে অনেক সম্মান প্রাপ্তি বাকি আছে। আমি যে স্বপ্নের পথটা দেখি সেদিকে চলা এখনো শুরু করিনি, বহু পথ বাকি। স্বপ্নে দেখা ওই রাস্তার দ্বারপ্রান্তে দাঁড়িয়ে আছি কেবল। এখনও বহুপথ আমাকে পাড়ি দিতে হবে। আমি স্বপ্ন দেখি আমার দেশের চলচ্চিত্র আন্তর্জাতিকভাবে একটা বড় জায়গায় পৌঁছাক। বাংলাদেশের অভিনেতারা বিশ্ববাসীর কাছে স্বীকৃতি পাক। আমার নিজের আরও কিছু স্বপ্ন রয়েছে। কিন্তু সেগুলো যে করবো তারজন্য রিলাক্স দরকার। এতো প্রেশারে থেকে পথ আগানো মুশকিল।
‘বীর’ সিনেমার শুটিং কতদূর হয়েছে?
খুব যত্নশীল হয়ে ‘বীর’-এর কাজ করছি। মৌলিক গল্পের সিনেমা এটি। একইসাথে গল্প নির্ভর সিনেমা। ইতোমধ্যে ৫০ শতাংশ কাজ হয়েছে। টানা শুটিং করছি। ‘বীর’ ঈদের সিনেমা না। তাই ঈদের আগেই মুক্তি পাবে এটা কনফার্ম। আগামী বছর শুরুর দিকে ‘বীর’ আসবে। খুব শিগগির ‘বীর’-এর ফার্স্ট লুক প্রকাশ করবো।
তাহলে আপনার ঈদের নতুন ছবি কোনটি?
এখনও অনেক সময় হাতে। ‘বীর’ শেষ করতে করতে জানাবো। সবকিছু চূড়ান্ত হওয়ার শেষের দিকে। যে আগ্রহ নিয়ে সবাই অপেক্ষা করছে আমি তার মূল্য দেব কাজ দিয়ে।
‘বীর’ সিনেমা বঙ্গবন্ধুকে উৎসর্গ করছেন?
‘বীর’ দেশাত্মবোধক সিনেমা। এটা দেশ, মানুষ, রাজনীতির কথা বলবে। বঙ্গবন্ধুও সবসময় গণ মানুষের পক্ষে দেশ, মানুষের কথা বলতেন। বাংলাদেশ মানেই বঙ্গবন্ধু। এমনও নয় যে উনি শুধু আওয়ামী লীগের জাতীর পিতা। তিনি সবকিছুর উর্দ্ধে, সমগ্র দেশের স্থপতি। এদেশের একজন সাংস্কৃতিক কর্মী হিসেবে বঙ্গবন্ধুর জন্ম শতবার্ষিকীতে আমার ভালোবাসা, শ্রদ্ধা কৃতজ্ঞতার প্রকাশ করতে চাই কাজ দিয়ে। তাই তাকে উৎসর্গ করতে চাই।
‘ম্যাগনেট’ নামে নতুন কোনো সিনেমা করতে যাচ্ছেন?
না, এটা ভুল খবর। আমি এ বিষয়ে জানি না। এমন নামে কোনো সিনেমা করছি না। যে কাজটি আমি করবো সেটা আমি নিজেই দর্শকদের জানাবো। কেউ আমাকে নিয়ে সিনেমা বানাবে এটা ভাবতেই পারে। কিন্তু করবো কিনা সেটা আমার ব্যাপার।
যৌথ প্রযোজনার সিনেমা নির্মাণ হচ্ছে না। অথচ সব শ্রেণির কাছে যৌথপ্রযোজনার ছবির মাধ্যমেই আপনার গ্রহণযোগ্যতা তৈরী হয়েছে। দর্শক আপনাকে আবার যৌথ প্রযোজনার সিনেমা দেখতে চায়…
একটা সময় সিনেমা হলে মধ্যবিত্ত, নিম্নবিত্তের পাশাপাশি উচ্চবিত্ত দর্শক আসতো। অশ্লীলতা গ্রাস করলে তারা মুখ ফিরিয়ে নেয়। যৌথ প্রযোজনার সিনেমাগুলো রিলিজের সময় ওইসব উচ্চবিত্ত, রুচিশীল দর্শকগুলো আবার হলে আসতে শুরু করে। নিয়ম-নীতি দিয়ে আটকে যৌথ প্রযোজনায় কাজ বন্ধ হওয়ায় আবার তারা হলবিমুখ হয়েছে। যারা আন্দোলন করে যৌথ প্রযোজনা আটকালো তাদের মধ্যে কিছু মানুষ আমাকে এখন বলছে, যৌথ প্রযোজনাই ভালো ছিল। সিনেমা হলগুলো সচল ছিল। না বুঝেই আন্দোলন নেমেছিল। আমি তখনই বলেছিলাম, ব্যক্তি আক্রোশ থেকে ঈর্ষান্বিত হয়ে করা হচ্ছে। যাদের হাতে কাজ নেই তারা এখন আমাকে উপলব্ধি জানিয়ে অনুতপ্ত হচ্ছে। এখন ইন্ডাস্ট্রিতে যে সমিতি-সমিতি খেলা চলছে। এগুলোর তৎপরতা না কমলে সিনেমার কোনো উন্নতি হবে না। আর এতো নিয়মনীতি দিয়ে আটকালে সৃজনশীল কাজ হয় না।