আসর শুরু হওয়ার ৫৬ ঘণ্টা আগে কোচ হুলেন লোপেতেগি বরখাস্ত হয়েছেন। বিশ্বকাপে স্পেনকে সামলানোর দায়িত্ব বর্তেছে স্পোর্টিং ডিরেক্টর ফার্নান্দো হিয়েরার উপর। লোপেতেগির অপরাজিত দলকে পরাজয় থেকে দূরে রাখতে পারবেন হিয়েরা?
দায়িত্ব পেয়েই হিয়েরা ঘোষণা দিয়েছেন লোপেতেগির ফর্মেশনে উনিশ-বিশের বেশি ফারাক ঘটবে না। আসলে বিশ্বকাপের মতো আসরে দ্রুত এক ফর্মেশন থেকে আরেক ফর্মেশনে যাওয়া আত্মহত্যার শামিল! হিয়েরার মতো সাবেক ফুটবলারের সে বিষয়ে ভালোই জানা আছে। তাই আপাতত নিজের দর্শন কাজে লাগাতে চান না তিনি।
রক্ষণ
বিশ্বকাপ বাছাইয়ে মাত্র তিন গোল হজম করাই বুঝিয়ে দেয় স্পেনের রক্ষণ কতটা দৃঢ়। ভিসেন্তে ডেল বস্কের আমলে শেষ দুই টুর্নামেন্ট বিশ্বকাপ ২০১৪ ও ইউরো ২০১৬তে সাত ম্যাচে ১১ গোল হজম করা লা রোজারা নিজেদের দুর্বলতাকে অনেকটাই কাটিয়ে ওঠে লোপেতেগির আমলে। হিয়েরার কাজ রক্ষণকে গোছানো মতোই খেলতে দেয়া।
শেষ দুই বিশ্বকাপে রক্ষণ থেকে দৌড়ে গিয়ে কাউন্টার অ্যাটাকে গোল হয়েছে প্রচুর। স্পেনও একেই মানছে শক্তি। এক্ষেত্রে হিয়েরার তুরুপের তাস হবেন জর্ডি আলবা। লেফট-ব্যাক থেকে বামপ্রান্ত দিয়ে আসা বলে বার্সেলোনায় মেসির বেশিরভাগ গোলেরই উৎস হন আলবা। সেই আলবার পায়ের দিকে তাকিয়ে থাকবে দেশও। ইস্কো, ভাসকেজদের গোলের যোগান দেয়ার পাশাপাশি রক্ষণ সামলানো, দুই কাজেই সমান পারদর্শী বার্সা লেফট-ব্যাক।
পোস্টের দূর থেকে দেয়া লম্বা ক্রসগুলো স্পেনকে ভোগাতে পারে। তবে বাছাইপর্ব থেকে সেই দুর্বলতা কাটিয়ে ওঠারও প্রমাণ দিয়েছে দলটি। স্পেনের রক্ষণ ভাঙতে প্রয়োজন একজন শক্তিশালী ফরোয়ার্ডের। সার্জিও রামোস, জেরার্ড পিকে আর সার্জিও বুস্কেটসদের মতো লম্বা খেলোয়াড়দের বাতাসে হারাতে হলে প্রতিপক্ষকে হতে হবে লম্বাও।
আক্রমণ
বাছাইপর্ব থেকেই ৪-২-৩-১ বা ৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেলে অভ্যস্ত স্পেন। হিয়েরা এই ফর্মেশনেই দলকে খেলাবেন নাকি তাতে থাকবে পরিবর্তনের ছোঁয়া সেটা বোঝা যাবে শুক্রবার পর্তুগালের ম্যাচেই।
৪-২-৩-১ ফর্মেশনে খেললে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার পজিশন থেকে সেন্ট্রাল ডিফেন্ডার হয়ে উঠতে হবে কোকে ও সার্জিও বুস্কেটসকে। রক্ষণ থেকে আক্রমণ বানানোর দায়িত্ব বরাবরের মতো জর্ডি আলভা ও দানি কারভাহালের(যদি সুস্থ থাকেন) কাঁধেই থাকবে।
সেন্ট্রাল অ্যাটাকিং পজিশনে থাকবেন ডিয়েগো কস্তা। তাকে খেলানোর সবচেয়ে বড় সুবিধা বারবার প্রান্ত পরিবর্তন করে প্রতিপক্ষকে বোকা বানাতে ওস্তাদ এ অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ফরোয়ার্ড। পেছন থেকে তাকে মধ্যমাঠে খেলা বানিয়ে দিতে আছেন আন্দ্রেস ইনিয়েস্তা, ডেভিড সিলভা, মার্কো আসেনসিও, ইস্কোদের মতো বিশ্বসেরা মিডফিল্ডাররা। ইস্কোকে খেলতে হবে একটু নিচে নেমে। আসেনসিও বা ডেভিড সিলভা খেলবেন মাঝমাঠের দুই প্রান্তে।
৪-৩-৩ ফর্মেশনে খেললে কস্তাকে থাকতে হবে দলের বাইরে। এখানে আক্রমণের মূল দায়িত্ব থাকবে ইস্কোর কাঁধে। অর্থাৎ, ফলস নাইন হয়ে খেলতে হবে তাকে। অ্যাটাকিং মিডফিল্ড পজিশনে খেলবেন ইনিয়েস্তা বা সিলভা। শক্তিশালী অ্যাটাকিং লাইনআপ সম্পন্ন প্রতিপক্ষের বিপক্ষেই এভাবে খেলে স্পেন। তাতে বল পায়ে খেলোয়াড়দের আক্রমণে উঠতে সুবিধা হয়। মিডফিল্ড থেকে খেলা ধরে প্রতিপক্ষের আক্রমণের কোমর ভেঙ্গে দেয়া যায়। পর্তুগালের বিপক্ষে এই লাইনআপেই খেলার সম্ভাবনা বেশি লা রোজাদের।
স্পেন দলের গভীরতা
স্পেন দল কতটা সমৃদ্ধ সেটা বোঝা যাবে ২৩ জনের বাইরের খেলোয়াড়দের দিকে তাকালেই। লোপেতেগির দলে সুযোগ পাননি ভিয়ারিয়ালের ফর্মে থাকা গোলরক্ষক সার্জিও আসেঞ্জো। মার্ক বার্ত্রা, হাভি মার্টিনেজ, সার্জিও রবের্তো, হুয়ান মাতা, পেদ্রো, সেস্ক ফ্যাব্রেগাস, আলভারো মোরাতার মতো খেলোয়াড়দের দেশে রেখে এসেছিলেন লোপেতেগি। চাইলে এ নামগুলো দিয়েই অবলীলায় সাজানো সম্ভব একটি দেশের বিশ্বকাপ দল।