পাকিস্তানে অনুষ্ঠিতব্য ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন একই দিনে বর্জনের ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশসহ চারটি দেশ। ১৯৮৫ সালে গড়ে ওঠা দক্ষিণ এশিয়ার এই জোটে এখন স্থায়ী ভাঙনের সুর। সার্ক না টিকলে যে ক্ষতি হবে, তার প্রভাব নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করার পাশাপাশি এই অবস্থার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করেছেন বিশ্লেষকেরা। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে যোগাযোগ-সৌহার্দ্য কমে যাবে বলে উল্লেখ করে, পাকিস্তান থাকলে সার্কের কোনো ভবিষ্যত নেই বলেও মন্তব্য করেছেন।
কাশ্মিরের উরিতে সেনাঘাঁটিতে জঙ্গি হামলার ঘটনায় ভারত-পাকিস্তান উত্তেজনার পর সার্ক সম্মেলন বয়কট করেছে ভারত। আর মহান মুক্তিযুদ্ধে মানবতাবিরোধী অপরাধে পাকিস্তানে নাক গলানোয় পাকিস্তানের রাজধানী ইসলামাবাদে অনুষ্ঠেয় আসন্ন ১৯তম সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে না যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে বাংলাদেশ।
আফগানিস্তানে হামলা চালিয়ে সন্ত্রাসীদের পাকিস্তানে আশ্রয় নেয়ার ঘটনা এ দু’দেশের সম্পর্ক বর্তমানে তিক্ততায় রূপ নিয়েছে। এতে আফগানিস্তানও আসন্ন সার্ক শীর্ষ সম্মেলন বর্জনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে। সার্কে না যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে ভুটানও।
বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকায় ১৯৮৫ সালে প্রথম সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হয়েছিল। সার্ক সম্মেলন পিছিয়ে যাওয়া কিংবা স্থগিত হওয়া নতুন কিছু নয়। তবে একই দিনে চারটি দেশের সার্ক শীর্ষ সম্মেলনে না যাওয়া সিদ্ধান্ত এবারই প্রথম।
এর রেশ ধরে সংগঠন হিসেবে সার্কের ভবিষ্যত এবং তা না টিকলে সম্ভব্য ক্ষতি নিয়ে শুরু হয়েছে নানা আলোচনা। এই পরিস্থিতিতে সার্কের ভবিষ্যত ও দক্ষিণ এশিয়ার রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট নিয়ে চ্যানেল আই অনলাইন কথা বলে বিশ্লেষকদের সঙ্গে।
দক্ষিণ এশিয়ার আঞ্চলিক,অর্থনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন এবং অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশসমূহের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক ও সহযোগিতা করার লক্ষ্য নিয়েই গঠিত হয়েছিল সার্ক। আর সেই সার্ক যদি না থাকে তবে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্পর্ক নষ্ট হবে বলে মনে করেন রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাবেক পররাষ্ট্র সচিব ইনাম আহমদ চৌধুরী।
ইনাম আহমদ চ্যানেল আই অনলাইনকে বলেন, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সব সময় প্রতিবেশী দেশগুলোর আঞ্চলিক সহায়তায় বিশ্বাস করতেন। বাংলাদেশকে বলা যেতে পারে সার্কের নিমার্ণের সৌধ। সার্কের সব সময় সামঞ্জস্যপূর্ণ হতে হবে। সার্ক কারোই একক কর্তৃত্ব না।
ইনাম আহমদ চৌধুরী আরো বলেন, সার্ক না টিকলে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে আঞ্চলিক সহযোগিতা, কানেকটিভিটি ও যোগাযোগের মাধ্যম অনেকাংশে কমে যাবে, যা পরবর্তীতে ক্ষতির কারণ হয়ে দাঁড়াবে।
সাবেক রাষ্ট্রদূত ও বাংলাদেশ হেরিটেজ ফাউন্ডেশন ন্যাশনাল সিকিউরিটি এন্ড কাউন্টার টেরোরিজমের চেয়ারম্যান অলিউর রহমান বলেন, সার্ক না টিকলে কোনো ক্ষতিই হবে না। সার্কের যে লক্ষ্য তা অনেকাংশে পাকিস্তানের জন্য ভেঙ্গে গেছে। তাই পাকিস্তান থাকলে সত্যিকার অর্থে সার্কের কোনো ভবিষ্যত নেই।
পাকিস্তানকে সার্কের ক্ষতির প্রধান কারণ বিবেচিত করে তিনি বলেন, পাকিস্তান সার্কের কিছুই মানে না, সার্কে পাকিস্তান থাকা মানে অর্থহীন। যতোদিন সার্কে পাকিস্তান রয়েছে ততোদিন সার্কের কোনো উন্নতি হবে না।
সার্ক না টিকলে তা হবে উদ্বেগজনক এমনটাই মনে করেন সাংবাদিক আনিস আলমগীর। তিনি বলেন, এ সম্মেলনের মাধ্যমে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে দেখা-সাক্ষাত, যোগাযোগ হতো, যদি সার্ক না হয় তাহলে প্রতিবেশী দেশগুলোর সঙ্গে এগুলো হবে না। এটাই এক প্রকারের ক্ষতি। এটা উদ্বেগজনক।
সার্কের নিয়ম অনুযায়ী দক্ষিণ এশিয়ার আট দেশের এ জোটের সব সিদ্ধান্ত সর্বসম্মতিক্রমে নিতে হয়, অর্থাৎ শীর্ষ সম্মেলনে কোন একটি দেশের প্রধান অনুপস্থিত থাকলে শীর্ষ সম্মেলন হতে পারে না। তবে ভবিষ্যতে সবগুলো দেশ একমত হলেই আবার সার্ক শীর্ষ সম্মেলন হবে বলেই মনে করছেন বিশ্লেষকরা।