পরিচালকদের সুনাম ক্ষুণ্ণ করার অভিযোগে অনন্য মামুনকে ‘স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ’ করেছে চলচ্চিত্র পরিচালক সমিতি। ১৬ জানুয়ারি বিকেলে এফডিসির পরিচালক সমিতির সাধারণ সভায় এ সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে।
এর ফলে পরিচালক সমিতি থেকে কোনো ধরনের সুযোগ সুবিধা পাবেন না অনন্য মামুন। এদিন এমন সিদ্ধান্ত আসার সঙ্গে সঙ্গে ‘নবাব এলএলবি’ খ্যাত এই নির্মাতা নতুন পাঁচটি সিনেমা নির্মাণের ঘোষণা দিয়েছেন।
জানিয়েছেন, এ পাঁচটি সিনেমা তিনি চলতি বছরে একের পর এক কাজ শুরু করবেন।
চ্যানেল আই অনলাইনকে পরিচালক সমিতির সাংগঠিক সচিব অপূর্ব রানা বলেন, অনন্য মামুন আজীবন নিষিদ্ধ নয়, তবে তিনি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ। এর আগেও তার বিরুদ্ধে অভিযোগ ছিল। তখন তিনি লিখিতভাবে জানিয়েছিলেন, পরবর্তীতে সমস্যা হলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলে কোনো আপত্তি থাকবে না। বর্তমান কমিটির মেয়াদ যতদিন থাকবে উনি স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধই থাকবেন।
পরবর্তী কমিটির মেয়াদে অনন্য মামুনের নিষিদ্ধ থাকা বহাল থাকবে কিনা সেটা পরবর্তী কমিটি সিদ্ধান্ত নেবে। তবে আপাতত অনন্য মামুন স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ। অপূর্ব রানা বলেন, আরও এক সপ্তাহ আগেই এ সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। আজ মিটিংয়ে অফিসিয়ালি জানানো হয়েছে।
স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হলে সিনেমা নির্মাণ করতে পারবেন কিনা জানতে চালে পরিচালক সমিতির সদস্য সচিব বলেন, ‘সবকিছু চেইন অব কমান্ড’-এর মাধ্যমে চলে। সিনেমা সেন্সর করাতে গেলে এফডিসির এনওসি চাওয়া হয়। এফডিসি এনওসি চায় প্রযোজক সমিতির কাছে। প্রযোজক সমিতি আবার পরিচালক সমিতির কাছে এনওসি চায়। এক্ষেত্রে নিয়ম মেনে সিস্টেমে অনুযায়ি উনি সিনেমা নির্মাণ করতে গেলে হয়তো সমস্যায় পড়তে পারেন।
পরিচালক সমিতি থেকে স্থায়ীভাবে নিষিদ্ধ হওয়ার বিষয়টি ‘থোড়াই কেয়ার’ করে ‘নবাব এলএল.বি’ সিনেমার নির্মাতা অনন্য মামুন শনিবার সন্ধ্যায় বলেন, মামলা প্রক্রিয়াধীন। প্রক্রিয়াধীন মামলা থাকলে আগেই পরিচালক সমিতি কীভাবে এমন একটা সিদ্ধান্ত নেয়? তারা কি তাহলে আইনের উর্দ্ধে? এটা নিয়ে আমার কোনো অবজেকশন নাই, কোনো আক্ষেপ নাই। আর সমিতির সদস্য না হলে যে আমি সিনেমা বানাতে পারবো না এমন তো ঘটনা না। শুধু মাত্র সমিতি থেকে সুবিধাগুলো পাবো না। তবে এসব সুযোগ সুবিধা যে অনেক বড় কিছু তাও না। আমি অনলাইন প্লাটফর্মের জন্য সিনেমা বানাবো, এখানে তো কোনো সেন্সরশিপ নাই। আর সেন্সরশিপ হলেও পরিচালক সমিতির কাগজ লাগবে কিনা তাও জানিনা।
অনেককিছু বলার আছে। সবকিছু ২৫ জানুয়ারির পর বললেন বলে জানালেন অনন্য মামুন। তিনি এও উল্লেখ করলেন, প্যাড, ক্রেজি, ঈদ মোবারক, ভাইজান ২ ও পাইলট এই পাঁচটি সিনেমা একের পর এক বানাবো। ঘোষণা যখন দিয়েছি অবশ্যই বানাবো। এমন কখনো হয়নি যে আমি বানাবো বলে ঘোষণাতেই আটকে গেছি। বড় বড় চমক থাকবে এসব সিনেমায়। আমি আমার মতো করে কাজ করে যাবো।
বিজয় দিবসে মুক্তি পাওয়া ‘নবাব এলএলবি’ সিনেমার জন্য সম্প্রতি কারাগারে যেতে হয় অনন্য মামুনকে। সিনেমায় দেশের পুলিশকে জড়িয়ে অশালীন সংলাপের অভিযোগে তাকে ২৪ ডিসেম্বর গ্রেপ্তার করা হয়। সঙ্গে ছিলেন এ সিনেমার অভিনেতা শাহিন মৃধা। এরপর ডিবির পুলিশ পরিদর্শক কাজী মো. নাসিরুল মামুন রমনা থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে তাদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন। ২৫ ডিসেম্বর মামলার তদন্ত কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের (ডিবি) পরিদর্শক আবুল কালাম আজাদ তাদের ঢাকা মহানগর হাকিম আদালতে হাজির করেন। রমনা থানায় পর্নোগ্রাফি আইনে করা মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন তদন্ত কর্মকর্তা।
আবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ওইদিন ঢাকা মহানগর হাকিম মইনুল ইসলাম তাদের কারাগারে পাঠানোর আদেশ দেন। এরপর ১১ জানুয়ারি ঢাকা মহানগর হাকিম শাহিনুর রহমানের আদালতে তাদের আইনজীবী জামিনের আবেদন করেন। শুনানি শেষে এক হাজার টাকা মুচলেকায় বিচারক জামিন আবেদন মঞ্জুর করেন।