চ্যানেল আই অনলাইন
হৃদয়ে বাংলাদেশ প্রবাসেও বাংলাদেশ
Channelionline.nagad-15.03.24

স্ত্রী আপনার সন্তানদের বা পরিবারের আয়া নয়

‘বাচ্চারা কাঁদছে দেখছো না?’ ‘আমার মাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাওনি কেন?’ ‘শুধু বাড়িটার যত্ন নাও।’ ‘যেতে হবে না কারণ তোমার বাড়ির বা ওই বিষয়টার দিকে খেয়াল রাখতে হবে।’ ‘তোমার মনোযোগ কোথায়! বাড়ির ছোট ছোট বিষয়ও তোমাকে মনে করিয়ে দিতে হয়।’ ‘বাচ্চাদের নিয়ে বাসায় যাও আর তাদের খেয়াল রাখো।’

অনেকেই এই ধরনের বাক্য প্রতিনিয়ত ছুড়ে দেন স্ত্রীদের প্রতি। তবে যেসব বাড়িতে এই ধরনের বাক্যালাপ হয় সেখানে স্ত্রীরা বরাবর আত্মসম্মানহীনতায় ভোগেন। সবার দ্বারা বেশি ব্যবহৃত হচ্ছেন অনুভব করেন এবং হতাশায়ও নিমজ্জিত হন। এই ধরনের আচরণের কারণেই পরে স্বপ্ন ভঙ্গ বা বিয়ে বিচ্ছেদের মতো ঘটনাও দেখা যায়।

বিশেষজ্ঞদের মতে এ ধরনের আচরণ পুরোপুরি ভুল। এর ফলে নারীর মধ্যে সেই ভাবনার সৃষ্টি হয় যে একজন পুরুষকে নারী বিয়েই করে শুধুমাত্র টাকা ও আশ্রয়ের জন্য বিনিময়ে তারও কিছু কাজ করতে হয়। যেমন বাড়ির দেখাশোনা করা এবং অন্যান্য কিছু করা। এই সবের চক্রে পড়ে যেটা হারিয়ে যায় সেটা হলো ভালোবাসা, যত্ন, সমতার উপলব্ধি। সেসবই মূলত বিয়ের ধারণাকে ব্যাখ্যা করে।

বিশেষজ্ঞদের মতে এই সমস্যা থেকে রেহাই পেতে পুরুষকে উপলব্ধি করতে হবে যেসব বিষয়:

১. তিনি কোনো চাকরিজীবী নন
তিনি আপনার বাড়ির দেখাশোনা করার জন্য থাকছেন না। তিনি কোনো চাকরিজীবী নন। তিনি সেখানে আছেন পরিবার গড়ার জন্য। আপনি অবশ্যই তাকে ভালোবাসা, স্নেহ, সময় দিবেন, পাশাপাশি আপনার যত্নও দিতে হবে। এভাবেই তিনি স্বাভাবিকভাবেই আপনার পরিবারেরও যত্ন করা শুরু করবেন এবং তাদের প্রয়োজন মেটানোর চেষ্টা করবেন। আপনার পরিবারেরও উচিত হবে তাদের সঙ্গে ভালো সম্পর্ক রাখায় তাকে যথেষ্ট সম্মান দেওয়া। তার মূল দায়িত্ব ভালোবাসা। সেটা ছাড়া তার আর কোনো দায়িত্ব নেই। তিনি আপনার সেবা করার জন্য নয় আপনাকে ভালোবাসার জন্য পরিবারে আছেন।

২. মানসিক নির্যাতনের শিকার তিনি হতে পারেন না
তিনি আপনার আদেশ পালন করবেন না। তাকে মানসিক নির্যাতন আপনি করতে পারেন না। সেজন্য তিনি আপনার সঙ্গে থাকছেন না। স্ত্রীকে বারবার ভুল সিদ্ধান্ত নেয়ার মানুষ হিসেবে বিবেচনা করা এবং সে তার কাজ সম্পর্কে সচেতন নয় এভাবে ব্যাখ্যা করাটাও ভুল। তিনি একজন স্বতন্ত্র ব্যক্তি যার ভালো ও মন্দের মধ্যে পার্থক্য করার বোধ বুদ্ধি আছে। যদি তিনি কোনো দায়িত্ব না নেন তাহলে বুঝতে হবে তিনি সেটাতে স্বচ্ছন্দ নন। অথবা হয়তো তার অন্য কোনো পরিকল্পনা রয়েছে। সেসময় তার দিকে হাত না বাড়িয়ে দিয়ে বা তার স্বাতন্ত্রকে শ্রদ্ধা না করে, তাকে আদেশ পালনকারী ব্যক্তি হিসেবে ভাবা পুরোপুরি ভুল। তিনি কিন্তু আপনার অধীনস্ত নয় আপনার সমান।

৩. পিতৃত্বও একটি বড় দায়িত্ব
পিতৃত্ব মানেও কিন্তু আপনাকে সন্তানের সঙ্গে থাকতে হবে। তাদের সমানভাবে যত্ন নিতে হবে। মা তো তিনি একা হননি। তাকে ভাড়া করা হয়নি। এই পথটা দুজনেরই ভাগ করে নিতে হবে। সেখানে আপনারও কিছু দায়িত্ব আছে। তাকে মাতৃত্বে কেন্দ্রীভূত করে ফেললে তিনি বাড়ি ও সন্তানের কাছে কী সেই ভাবনায় তাকে একা ও অনিশ্চিত করে দেওয়া হবে। নিজের কর্তৃত্ব হারালে তিনিই গভীর আত্মগ্লানিতে পড়ে যাবেন।

৪. অন্যদের এবং নিজেকে জিজ্ঞেস করুন তার জন্য কী করেছেন
তার কোনটা করা দরকার সেই বিষয়েই কেন বরাবর আলোচনা করেন। আপনার কথাও বলুন। তার জন্য যেটা করা দরকার সেই বিষয়ে আপনার মনোযোগ কেমন? আপনার স্ত্রীর প্রতি কেমন আচরণ হওয়া উচিত সেই বিষয়ে অন্যদের সঙ্গে কথা বলেছেন? আপনি কি ঘরের চারদিকে কখনো তাকিয়ে দেখেছেন যে তিনি তার দৈনন্দিন যত্নটা পাচ্ছেন কিনা, তিনি মূল্য, ভালোবাসা বা আদরটা পাচ্ছেন কিনা। এই দ্বিপাক্ষিক সংযোগ ছাড়া বিয়ের মানে কী?

আপনার স্ত্রী শিক্ষিত, কোনো বড় পরিবার থেকেই এসেছেন যেখানে তিনি ভালোবাসা পেতেন এবং পাচ্ছেন। তিনি আপনার বিবাহিতা এবং সমতার সঙ্গী। এসব উপেক্ষা করার থেকে খারাপ কিছু নেই। তাকে একটু ভালোবাসা আর সম্মান দিলেই তিনি আপনার জন্য সবই করবেন। এভাবেই পরিবারগুলো একে অন্যের পাশে দাঁড়ায়। বিয়ে তো একটি দ্বিমুখী পথ। সেই পথে অহংবোধ আর আদেশের উপর বাঁচার দরকার কী?