স্ত্রীকে নির্যাতনের দায়ে ফায়ার ম্যানের চাকরি থেকে বরখাস্ত হওয়াসহ কয়েক দফায় জেল খাটেন স্বামী। তবে ভবিষ্যতে আর স্ত্রীকে নির্যাতন করবেন না বলে স্বামী অঙ্গীকার করলে সর্বোচ্চ আদালত আগে স্ত্রীকে একটু জমি লিখে দিতে বলেছেন। স্বামী যদি আগামি ১ মাসের মধ্যে আদালতের এই আদেশ বাস্তবায়ন করেন তবে তার বরখাস্ত হওয়া চাকরি ফিরিয়ে দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ মাহমুদ হোসেনের নেতৃত্বাধীন আপিল বেঞ্চ।
মামলার বিবরণ থেকে জানা যায়, যৌতুকের দাবীতে নির্যাতনের অভিযোগে ফায়ার ম্যান স্বামীর বিরুদ্ধে মামলা করেন তার স্ত্রী। পরবর্তীতে রাজশাহীর নারী-শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের রায়ে স্বামীর সাজা হয় এবং তিনি তার চাকরি থেকে বরখাস্ত হন। তবে ট্রাইব্যুনালের দেয়া রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিল মঞ্জুর করে হাইকোর্ট স্বামীকে খালাস দেন। পরে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল বিভাগে আবেদন করেন। অন্যদিকে স্বামী মামলা খারিজ চেয়ে আপিল বিভাগে একটি ‘কম্প্রোমাইজ এপ্লিকেশন’ করেন। তবে এ নিয়ে শুনানির আগে স্বামী-স্ত্রীর মধ্যে ঝগড়া ও মারামারি হয় বলে জানান আইনজীবী। একপর্যায়ে স্ত্রী গতকাল আপিল বিভাগে উপস্থিত হয়ে তাকে নির্যাতনের কথা বলেন। ওইদিন এবিষয়ে শুনানি মুলতবি হলে আজ আবার স্বামী-স্ত্রী দুজন আপিল বিভাগে নির্ধারিত শুনানিতে উপস্থিত হন। এসময় আদালত স্বামীকে বলেন, আপোষ মিমাংসার কথা বলছেন কিন্তু এখান থেকে গিয়ে আবার যে মারপিট করবেন না তার কি গ্যারান্টি আছে? জবাবে স্বামী বলেন, আমি আর নির্যাতন করবো না। তবে স্যার, এক হাতে তো আর তালি বাজে না।’
একপর্যায়ে আদালত স্ত্রীর কথা শুনতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমার একটা সন্তান আছে, আমি চেয়েছিলাম আমার হাসবেন্ড কিছু না করুক কিন্তু আমার সাথে ভালো আচরণ করুক। কিন্তু সে আমার সাথে খারাপ আচরণ করতো। এখন সে যেহেতু বলেছে এবারের মতো মাফ করতে, আর ঐরকম আচরণ করবে না। তাই সন্তনটার চিন্তাটা করে এই (আপোষের) সিদ্ধান্তে পৌছেছি।’
এসময় আদালত ওই স্ত্রীকে প্রশ্ন করেন যে, ‘এই মামলা যদি খারিজ বা নিস্পত্তি হয়ে যায় আর তারপর যদি তার স্বামী দুর্ব্যবহার করে তখন কি করবেন? এর জবাবে ওই স্ত্রী বলেন সেটা হলে তো নসিব, এক্ষেত্রে বিশ্বাস করা ছাড়া আমার আর কিছু করার নাই। আমি আমার ছেলের বাবাকে ধরে থাকতে চাই বাঁচা অব্দি।’
এরপর আদালত ওই স্বামীকে বলেন আপনার স্ত্রী যেহেতু শিক্ষিতা এবং আইনে পড়া, তাই উনি যদি চাকরি করতে চায় বা ওকালতি করতে চায় তা করতে দিবেন তো? জ্বি, দেবো বলে আদালতকে বলেন স্বামী। এসময় আদালত বলেন, ‘ওনাকে (স্ত্রীকে) দুর্বল মনে করবেন না। আমরা চাই সংসারটা টিকুক। দুজনে দুজনের সাথে ভালো ব্যবহার করবেন। একজন আজ আদালতে বলছেন এক হাতে তালি বাজে না। আমরা চাই আগামীতে যেন কোন হাতেই আর তালি না বাজে।’
সর্বোচ্চ আদালত স্বামীকে বলেন, আপনি একটু জায়গা আপনার স্ত্রীর নামে লিখে দিয়ে আসেন। ১ মাসের মধ্যে এটা দিয়ে আসলে আমরা আপনারা চাকরি ফিরিয়ে দিতে বলে দিব। এরপর আদালত এ বিষয়ে পরবর্তী আদেশের জন্য ২৫ অক্টোবর দিন ধার্য করেন।
আদালতে আজ স্বামীর পক্ষে শুনানি ছিলেন ব্যারিস্টার রুহুল কুদ্দুস কাজল ও কে বি রুমী। স্ত্রীর পক্ষে ছিলেন অ্যাডভোকেট অন রেকর্ড শিরিন আফরোজ। আর রাষ্ট্রপক্ষে ছিলেন অ্যাটর্নি জেনারেল এ এম আমিন উদ্দিন ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।